ভারত কি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন আগুন জ্বালাতে চায়? ইরানে ৭৩ ভারতীয় গুপ্তচরের গ্রেফতার, ইসরায়েলকে হামলায় উৎসাহ, এবং দক্ষিণ এশিয়ার নীরবতা

নবজাগরণ ডেস্ক :
যখন গোটা মুসলিম বিশ্বের চোখ এখন গাজার দিকে, যখন ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী অব্যাহতভাবে নারী-শিশু হত্যা করছে-ঠিক তখনই ভারত জড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে এক ভয়ঙ্কর চক্রান্তে।

সম্প্রতি ইরান সরকার ঘোষণা করেছে, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশজুড়ে এক অভিযানে ৭৩ জন ভারতীয় গুপ্তচরকে গ্রেফতার করেছে, যাদের বড় একটি অংশ ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইরানের অভ্যন্তরীণ তথ্য ফাঁস করছিল এবং তেহরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পরমাণু স্থাপনার তথ্য মোসাদকে দিচ্ছিল।

এই প্রেক্ষাপটে ইরান থেকে বারবার যে বার্তাটি আসছে তা হলো—ভারত শুধু গুপ্তচর পাঠিয়েই থেমে নেই, বরং ইসরায়েলকে ইরানে হামলা চালাতে উৎসাহ এবং লজিস্টিক সহায়তাও দিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন, বিশেষত চাবাহার বন্দরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অংশকে কেন্দ্র করে গুপ্তচরবৃত্তির জাল বিস্তার লাভ করে।

প্রিয়াংকা গান্ধীর বিস্ফোরক মন্তব্য

ভারতের অন্যতম বিরোধী নেত্রী প্রিয়াংকা গান্ধী এই ইস্যুতে মন্তব্য করে বলেন, “ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের অন্ধ মিত্রতা আমাদের আন্তর্জাতিক সুনাম এবং নিরাপত্তা দুইকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছে মোদি সরকার।” তিনি অভিযোগ করেন, ইরানের অভিযোগ একেবারে বাতিল করার মতো নয় বরং এটি গভীরভাবে অনুসন্ধানের দাবি রাখে।

চাবাহার বন্দরের অন্দরমহল

২০১৬ সালে ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি অনুযায়ী চাবাহার বন্দরের “শহীদ বেহেশতি টার্মিনাল” ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান India Ports Global Ltd. (IPGL)। এই বন্দরে ভারতের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় গুপ্তচরবৃত্তির আখড়া-ইরানের অভিযোগ অনুযায়ী এখান থেকেই বহু সেন্সিটিভ সামরিক তথ্য বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

বিশ্বে ভারতের ক্রমবর্ধমান ‘গোয়েন্দা সাম্রাজ্য’

সম্প্রতি কাতার, কানাডা, ব্রিটেন এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW-এর গোপন হত্যাকাণ্ড এবং গুপ্তচরবৃত্তির প্রমাণ উঠে এসেছে। এসব ঘটনার একটি বিস্তৃত চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-ভারতের কৌশলগত নীতি এখন ‘দ্বৈত মুখনীতি’র উপর দাঁড়ানো:

১. একদিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘বড়লোক গণতন্ত্র’ সেজে শালীনতা বজায় রাখা,

২. অন্যদিকে প্রতিবেশী ও মুসলিম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, গুপ্তচর নিয়োগ এবং মিথ্যা প্রচার চালানো।

বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত

ইরানের অভিযোগের সত্যতা যদি আন্তর্জাতিক তদন্তে প্রমাণিত হয়, তবে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি আরও উত্তপ্ত হবে। এতে শুধু ভারত-ইরান নয়, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান এমনকি সৌদি আরব ও কাতারও নতুন করে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।

ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের নতুন সামরিক ও গোয়েন্দা ঐক্য“ABRAHAM ACCORDS”-এর ছায়াতলে দিল্লির অংশগ্রহণ-মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে দেয়। ইসলামি বিশ্ব যদি এখনই সরব না হয়, তবে ভারত-ইসরায়েল জোট ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে।

নীরবতা নয়, প্রতিবাদ করুন:

ইরানে ৭৩ ভারতীয় গুপ্তচরের গ্রেফতার, ভারতীয় বিরোধী নেতাদের প্রতিবাদ এবং ইসরায়েলকে হামলায় উৎসাহ দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ কোনোভাবেই সাধারণভাবে নেওয়ার নয়। এখন প্রশ্ন-বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের অবস্থান কোথায়?

কূটনৈতিক চাটুকারিতা আর নীরবতা দিয়ে যে আগুন ঠেকানো যাবে না, তা ইতিহাস বহুবার দেখিয়েছে। ইরান-গাজার আগুনের সূত্রপাত দক্ষিণ এশিয়ার উঠোনে যদি ঢুকে পড়ে-তবে দেরিতে হলেও প্রতিবাদের সময় এখনই।

#India #Iran #Israel #PriyankaGandhi #RAW #Mossad #ChabaharPort #MiddleEastCrisis #নবজাগরণ