নবজাগরণ ডেস্ক-মো: আবু তাহের পাটোয়ারী-
“বাঘের লেজে পা দিলে তার ফলাফল ভয়াবহ” – ইরানের প্রতিরোধ শক্তিকে অবমূল্যায়ন করে ইসরায়েল যে আগ্রাসী কৌশল গ্রহণ করেছে, তা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বরং বিশ্বশান্তির জন্যও এক গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংঘাত এখন আর কেবল দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়- বরং পশ্চিমা বিশ্বের একতরফা পক্ষপাতিত্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিচারিণী রাষ্ট্রগুলোর মৌন সমর্থন এই যুদ্ধকে সরাসরি পারমাণবিক সংঘাতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
একতরফা আমেরিকান নীতি: শান্তির ছদ্মবেশে যুদ্ধের পৃষ্ঠপোষকতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতো এবারও ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার’ নামক মোড়কে তার আগ্রাসী অবস্থানকেই বৈধতা দিয়েছে। ওয়াশিংটন যতটা উচ্চস্বরে ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে, ফিলিস্তিন বা ইরানের প্রতি তার ন্যূনতম কূটনৈতিক সংযমও দেখায়নি। বরং, যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইসরায়েলে হাজার হাজার স্মার্ট বোমা, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও গুপ্তচর স্যাটেলাইট সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে।
নীরব পৃষ্ঠপোষক ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি: নৈতিকতা কি পশ্চিমে মৃত?
ইউরোপীয় ত্রয়ী-ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি- ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও প্রকাশ্যে তেমন কোনো সমালোচনা করেনি। বরং, তারা ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে আরও একতরফাভাবে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। এ যেন আগুনে পানি নয়, বরং পেট্রোল ঢালার মতো কূটনীতি।
এই তিন রাষ্ট্র জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিবেদন ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের তদন্তের পরও ইসরায়েলকে দায়মুক্তির সংস্কৃতিতে আবদ্ধ করে রেখেছে। তাদের নীরবতা এবং দ্বিচারিতা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের পরিবেশকে আরও ঘনীভূত করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিচারিণী শক্তি: নীরব সম্মতি না পরোক্ষ অংশীদারিত্ব?
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মতো দেশগুলো একটি তরফে ইরানের ওপর যুদ্ধের দায় চাপালেও, অন্যপক্ষে তারা পর্দার আড়ালে ইসরায়েলকে জ্বালানি ও গোয়েন্দা সহায়তা দিয়ে চলেছে। তথাকথিত আব্রাহাম অ্যাকর্ডের পর তাদের সাথে ইসরায়েলের সামরিক, প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বহুগুণে বেড়েছে। প্রশ্ন উঠছে- এরা কি কেবল নীরব দর্শক? নাকি ইরানের সম্ভাব্য দুর্বলতাই তাদের লক্ষ্য?
পরমাণু যুদ্ধ কি কল্পনা নয়, বাস্তবতা হয়ে উঠছে?
ইসরায়েলের হাতে ৮০-৯০টি পরমাণু অস্ত্রের সম্ভাব্য অস্তিত্ব এবং ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমের বর্তমান অগ্রগতি এই সংঘাতকে এক ভয়ঙ্কর মোড়ে এনে দাঁড় করিয়েছে। ইরান যদি এই সংঘাতকে অস্তিত্ব সংকট হিসেবে দেখে, তাহলে পারমাণবিক পাল্টা প্রস্তুতির পথেও যেতে পারে বলে শঙ্কা করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
একাধিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আশঙ্কা করছে, এই সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে একটি “Low-yield tactical nuclear strike” দিয়ে যুদ্ধ শুরু হতে পারে-যার প্রতিক্রিয়া হবে বহু দেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী।
বিকল্প কী? প্রতিরোধ না শান্তির নাটক?
বিশ্ব এখন দুটি পথের সামনে: একদিকে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে প্রতিরোধের মাধ্যমে রুখে দেওয়ার কৌশল, অন্যদিকে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে ইসরায়েলকে সংযত করার পথ। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের একতরফা নীতি এবং আরব বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তা এ দুটির কোনো পথেই সত্যিকার আগ্রহ দেখাচ্ছে না।জাতীয় সংঘ আরবলীগ ওআইসি স্বার্থবাদীদের একটি ক্লাব ছাড়া মানবতার কল্যাণে পুরোপুরি অন্ধকার।
দখলদার ইসরায়েলের বেপরোয়া আচরনে মানবজাতির অগ্রযাত্রায় ভয়ংকর রকমের পরিণতি অপেক্ষা করছে
ইরান ও ইসরায়েল কেবল দুই দেশের যুদ্ধ নয়- এটি একটি দ্বিচারিতার, বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের মৃত্যু এবং পরমাণু বিপর্যয়ের পূর্বাভাস। যখন দখলদারিত্বকে বৈধতা দেওয়া হয় এবং প্রতিরোধকে সন্ত্রাস বলা হয়, তখন যুদ্ধ অনিবার্য হয়। বিশ্ব কি আবার হিরোশিমা ও নাগাসাকির ইতিহাসকে পুনরাবৃত্তি হতে দেবে?