ইরান একা নয়, ইরানই মুসলিম উম্মাহর প্রতিরোধের শেষ সীমানা!”

-নবজাগরণ
১৬ জুন ২০২৫ -আন্তর্জাতিক বিভাগ-
মো: আবু তাহের পাটোয়ারী :

রক্তাক্ত হৃদয়ের আর্তনাদ: আজ ইরান নয়, আহত হচ্ছে গোটা মুসলিম বিশ্ব

ইরানের হাতে নাকি সুন্নি মুসলমানদের রক্ত লেগে আছে – বহু পুরোনো এই প্রচারণা আজ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অথচ আজ সেই ইরানই যখন মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে খোলা ময়দানে দাঁড়িয়ে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়ছে, তখন শত কোটি সুন্নি মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

প্রতিটি ড্রোন, প্রতিটি মিসাইল, প্রতিটি বিমান হামলা-সব যেন আঘাত হানে শুধু ইরানের মাটিতে নয়, বরং আমাদের বুকের ওপর।

“ইরান হেরে গেলে আমরা সবাই হেরে যাবো”

আমরা যদি আজ চুপ থাকি, যদি কেউ প্রশ্ন না করে –

কেন ইরানের ওপর এমন নিপীড়ন চলছে?

কেন একা একটি মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর বিশ্বের ৭টি পরাশক্তি একত্র হয়ে হামলা করছে?

কেন মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে না?

তাহলে ইতিহাস আবারও সাক্ষ্য দেবে-গাজা যেমন চুপ থেকেছে, বাগদাদ যেমন ভেঙে পড়েছে, সিরিয়া যেমন জ্বলছে, তেমনই ইরান একা থেকে ভস্ম হবে আর আমরা সবাই হয়ে যাব ‘আধুনিক দাস’ – চুক্তির বেড়াজালে বাঁধা, পদানত এক গোলাম জাতি।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি: বিভাজনের রাজনীতি আজো জ্যান্ত

“শিয়া-সুন্নি” – এই পুরনো বিভাজন আজ আবার উঠে এসেছে, ইরানের বিরুদ্ধে এক মানসিক ব্যারিকেড তৈরি করতে। যেন ইরান মুসলিম না, যেন ইসরায়েল ও পশ্চিমারা মুসলিমদের বন্ধু।

কিন্তু যারা আজ ইরানের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিচ্ছে – তারাই ফিলিস্তিনকে অস্তিত্বহীন করেছে। তারাই সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, লেবানন, সুদানকে ধ্বংস করেছে।

আর যারা নিরব – তারা চুপচাপ নিজের রাজতন্ত্র রক্ষা করছে, মার্কিন ছায়ার নিচে দাসত্ব চুক্তি লিখে যাচ্ছে।

কল্পনার চেয়েও ভয়ংকর বাস্তবতা

ইরানের রাজধানী তেহরানে ড্রোন ও মিসাইল হামলা, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা, IRGC অফিসে আঘাত, সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের টার্গেট করে হত্যা – এসব আজ কল্পনা নয়, বাস্তব।

এমনকি ৭০০ কিলোমিটার দূর থেকে ড্রোন ঢুকে রাজধানীর ভেতর হত্যা চালাচ্ছে -এটাই নতুন উপনিবেশের রূপ, যেখানে দখল না করেই একটি জাতিকে কুপোকাত করা যায়।

ইরান – শেষ গর্জন, শেষ প্রতিরোধ

আজ যে দেশটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের পারমাণবিক ঘাঁটিতে আঘাত করেছে, যে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেনের যৌথ প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করে গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে, সেই ইরানই শেষ প্রতিরোধের নাম।

যদি এই ইরানও হারিয়ে যায়, তাহলে বিশ্ব মুসলিম আর কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।

আজ যারা চুপ থাকবে, কাল তারা অক্ষম কান্নায় ভেঙে পড়বে

জেনে রাখুন-ইরানের পতনের অর্থ শুধু একটি রাষ্ট্রের পতন নয়। তা হবে মুসলিম আত্মমর্যাদার চূড়ান্ত বিলুপ্তি।

যে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন চুপ, সেই শাসকদের মুখে কালও প্রতিরোধের ভাষা থাকবে না।
যে মুসলিম জাতিগুলো আজ নিরব, তাদের সন্তানরাও ভবিষ্যতে গোলাম হিসেবেই পরিচিত হবে।

মুসলমান এক জাতি, এই লড়াই মতবাদের নয় – অস্তিত্বের

ইরান যদি হারায়, গাজা যেমন ধ্বংস হয়েছে, তেমনি ধ্বংস হবে তুরস্ক, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়ার মত দেশগুলোও-কেবল ধীরে ধীরে, নীরবে, বিভ্রান্তির কুয়াশায়।

আজ শিয়া-সুন্নি বিতর্ক নয়, আজ আমাদের লড়াই “মুসলিম বিরোধী সাম্রাজ্যবাদের” বিরুদ্ধে।
আজ দরকার ঐক্য-আন্তর্জাতিকভাবে ইরানের পাশে দাঁড়ানো, গর্জে ওঠা, সোশ্যাল মিডিয়ায় জেগে ওঠা, অর্থনৈতিকভাবে প্রতিরোধের কণ্ঠে কণ্ঠ মেলানো।

🕊 শেষ প্রার্থনা নয়, প্রতিজ্ঞা হোক

হে মুসলিম বিশ্ব—
জেগে ওঠো!
তোমার শেষ ব্যারিকেড আজ আগুনে ঝলসে যাচ্ছে।
তোমার শেষ প্রতিরোধ আজ রক্তাক্ত।

আজ যদি ইরান পড়ে-
তবে আর কেউ থাকবে না আমাদের হয়ে দাঁড়াবার মতো।