বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন নবজাগরণ ডেস্ক:
শেষ রক্ষা হলো না-ইসরায়েলের আকাশচুম্বী অহংকার, তেল আবিবের গগনচুম্বী ভবন, “Moshe Aviv Tower” বা “Azrieli Sarona Tower”-এর মতো প্রতীকের আজ শোচনীয় পরিণতি ঘটলো। যে ভবন ইসরায়েলের অর্থনৈতিক শক্তি, প্রযুক্তি আধিপত্য আর নিরাপত্তার প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিশ্বের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, সেটি এবার মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ইরানের প্রতিশোধমূলক মিসাইল হামলায়।
ঘটনার পটভূমি: প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে ইসরায়েল
ইরান যে আর কোনো আগ্রাসন মেনে নেবে না, তা অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতা, সিরিয়া-লেবাননে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং ইরানের বিপ্লবী কমান্ডারদের হত্যায় ইসরায়েলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে, “একটি নির্ধারিত সময়েই আমরা জবাব দেব”-এই ছিল তেহরানের বার্তা।
অবশেষে সেই সময় এসে পৌঁছায় ১৮ জুন রাতে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে “ইয়া জাইনাব-৫” নামের অপারেশন শুরু হয়, যার অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের প্রতীকি স্থাপনাগুলো-বিশেষ করে যার সাথে “গর্ব, আধিপত্য ও নিরাপত্তা” যুক্ত।
Moshe Aviv Tower বা Azrieli Sarona Tower – কেন এই ভবন লক্ষ্যবস্তু?
বিশ্লেষকদের মতে, এই ভবনগুলোর রয়েছে প্রতীকী ও বাস্তবিক গুরুত্ব-
প্রতীকী দিক: ভবনটি ছিল ইসরায়েলি মিডিয়া ও প্রযুক্তি কর্পোরেটদের ঘাঁটি। অনেক আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি, আইন ফার্ম এবং স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাংক এখানে অফিস করত।
সামরিক-নিরাপত্তা দিক: ভবনের ওপরের তলাগুলোয় ছিল গোপন সেনা ও গোয়েন্দা যোগাযোগ অবকাঠামো-বিশেষ করে মোসাদের সঙ্গে যুক্ত অংশ। এই ভবনের একাধিক তলা ব্যবহার করতো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাইবার ইউনিট ও ড্রোন নিয়ন্ত্রণ সেন্টার।
হামলার ধরন ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ
হামলায় ব্যবহার করা হয় Fattah-2 এবং Kheibar Shekan শ্রেণির অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল। এগুলো উপগ্রহ নির্দেশনায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। জানা গেছে:
একাধিক ড্রোন দিয়ে প্রথমে ইলেকট্রনিক জ্যামিং করা হয়।
এরপর পালাক্রমে দুটি হাইপারসনিক মিসাইল ভবনের উপরভাগে সরাসরি আঘাত হানে।
আঘাতের মাত্রা এতই ভয়াবহ ছিল যে, ভবনের গ্লাস স্ট্রাকচার একসঙ্গে ধসে পড়ে, নিচের পাঁচতলা পর্যন্ত ধ্বংস হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভবনের একপাশ সম্পূর্ণভাবে আগুনে পুড়ে যায় এবং ৩০ মিনিটের মধ্যে ভবনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ইসরায়েলি দমকল বাহিনী।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই গোটা বিশ্বের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়:
তুরস্ক: “ইসরায়েলকে সতর্ক করা হয়েছিল। এখন তাদের আত্মসমর্পণের সময় এসেছে”-তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রাশিয়া: “এটি ইরানের সামরিক সক্ষমতার বাস্তব উদাহরণ। এই সংকট কেবল কূটনীতির মাধ্যমে সমাধান হতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র: “এই হামলা ইসরায়েলের ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”
হিজবুল্লাহ, ইয়েমেন, সিরিয়া: “ইসরায়েলের পতনের যুগ শুরু হয়েছে।”
সামরিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব
ইসরায়েল এই ভবন হারিয়ে কেবলমাত্র স্থাপত্য নয়, হারিয়েছে তার মনস্তাত্ত্বিক “অজেয়তার দেয়াল”। দীর্ঘদিন ধরে “আমরা অপ্রতিরোধ্য” বলে যে বিশ্বাস ইসরায়েলি নাগরিকদের মধ্যে ছিল, তা আজ চুরমার হয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ইসরায়েলি তরুণ কাঁদতে কাঁদতে বলছেন-“আমরা কোথাও নিরাপদ নই।”
নির্বিশেষে বলতে পারি: ইতিহাস বদলানোর শুরু কি আজ?
ইরানের এই কৌশলগত ও প্রতীকী হামলা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিল-আজকের যুদ্ধ শুধু ট্যাঙ্ক-বন্দুকের নয়, বরং কৌশল, মনস্তত্ত্ব, প্রযুক্তি ও প্রতিরোধের শক্তি দিয়ে পরিচালিত হয়। ইসরায়েলের সবচেয়ে উঁচু ভবন এখন ধ্বংসস্তূপ, আর সেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে এক গর্বিত রাষ্ট্রের অহংকার।
ইতিহাস লিখছে নতুন অধ্যায়-যেখানে অবিচার আর সহিংসতার স্থানে উঠে আসছে প্রতিরোধ, প্রযুক্তি আর ন্যায়ের জয়গাথা।
আরো পড়ুন:www.thenabajagaran.com
লেখক :মো: আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক-নবজাগরণ।