নবজাগরণ ডেস্ক-মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
৯ দিন ধরে আগুন জ্বলছে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে। একদিকে জায়নিস্ট দানব রাষ্ট্র ইসরায়েল, অন্যদিকে ইসলামী প্রতিরোধের প্রতীক ইরান। দিনের পর দিন আকাশ থেকে আগুন ঝরিয়ে চলেছে ইসরায়েলি জঙ্গিবিমান। ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি, ড্রোন হামলা, স্যাটেলাইট গাইডেড স্ট্রাইক-সব মিলিয়ে ইরানের অন্তত ৭০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে একাধিক সামরিক স্থাপনা। শহরজুড়ে শোক, রক্ত ও প্রতিশোধের গর্জন।
তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ: ইরান হারিয়েছে সামরিক বাহিনীর বহু শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার-রেভল্যুশনারি গার্ড, বিমান প্রতিরক্ষা, র্যাডার ইউনিটসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি লক্ষ্য করে স্ট্রাইক চালানো হয়েছে। এক কথায়, ইরানের ‘কোমর ভাঙা’র প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসরায়েল। তাদের পররাষ্ট্রনীতি এখন আর আড়ালে-আবডালে না-সরাসরি যুদ্ধ, সরাসরি ধ্বংসযজ্ঞ।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, আজও ইরান মাথা নত করেনি। তারা জানে, এটি শুধু তাদের রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রশ্ন নয়-এটি একটি সভ্যতার, একটি বিশ্বাসের, একটি ঐতিহাসিক মর্যাদার প্রশ্ন।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: শুধু দুটি রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব নয়:
বিষয়টি একেবারেই সরল নয়। এটি কোনো দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত বিরোধ নয়। এটি একটি শতাব্দীপ্রাচীন বৈশ্বিক নকশার বাস্তবায়ন: মুসলিম প্রতিরোধকে শূন্যে নামিয়ে আনা, প্রতিটি স্বাধীনচেতা রাষ্ট্রকে ‘ধ্বংসযোগ্য লক্ষ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা, এবং ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ত্রয়ীর নেতৃত্বে এক নতুন মধ্যপ্রাচ্য বিনির্মাণ করা।
১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর ইরান পশ্চিমা হেজেমনির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস দখল করে, ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করে না, হামাস-হিজবুল্লাহকে সমর্থন করে, এবং গাজায় সামরিক সাহায্য পাঠায়। সেই থেকেই ইরান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কালো তালিকায়।
আজকের যুদ্ধ, আসলে সেই ‘অপরাধের’ শাস্তি।
ট্রাম্পের হুমকি: সরাসরি ইরানে হামলার ঘোষণা!
এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি হুমকি দিয়েছেন: প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ভেতরে ঢুকে হামলা চালাবে। তিনি দাবি করেছেন, ইরান মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য ‘বড় হুমকি’। তাঁর এই বক্তব্যকে অনেকেই ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগের সেই মিথ্যাচারের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন-যেখানে “মার্কিন স্বার্থ রক্ষার” নামে ধ্বংস হয়েছিল একটি রাষ্ট্র, একটি সভ্যতা, একটি ইতিহাস।
তুরস্কের ঐতিহাসিক আহ্বান:
এই ভয়ঙ্কর মুহূর্তে আশার আলো ছড়িয়েছে তুরস্ক। ওআইসি’র (OIC) ৫১তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সরাসরি বলেন-
“ইরানে হামলা আসলে গোটা মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার অংশ। এখনই না জাগলে, কাল কেবল ইরান নয়-আমরাও আর থাকব না।”
তাঁর ভাষণ ছিল এক বিপ্লবী ঘণ্টাধ্বনি। এটা কোনো কূটনৈতিক বিবৃতি নয়-এটা ছিল মুসলিম নেতৃত্বের হারানো আত্মার জাগরণ।
নিস্তব্ধ মুসলিম বিশ্ব: সৌদি আরব, মিসর, আমিরাত কোথায়?
আজ প্রশ্ন উঠে: এই আগুনের মধ্যে কোথায় মুসলিম রাষ্ট্রগুলো? কোথায় সেই ‘খাদেমুল হারামাইন’ পরিচয়ধারী সৌদি আরব? কোথায় পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার শক্তি? কোথায় মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক তীক্ষ্ণতা? কোথায় মিশরের সেনাবাহিনী?
সত্য হলো, তারা সবাই অর্থনীতি, অস্ত্র চুক্তি, এবং পশ্চিমাদের দয়ায় টিকে থাকার নেশায় গৃহপালিত রাজনীতির খাঁচায় বন্দী। জাতিসংঘে চুপ, মুসলিম বিশ্বে চুপ, কেবল পশ্চিমাদের প্রেস রিলিজ কপি-পেস্ট করে চলছে মুসলিম পররাষ্ট্রনীতি!
এই যুদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে
ইসরায়েল ৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিন দখল করেছে। গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। আল-আকসা মসজিদে হানা দিচ্ছে। এখন তারা ইরানকে চেপে ধরেছে। ইরান যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে:
১. ফিলিস্তিন একা হয়ে যাবে
২. হিজবুল্লাহ বিপন্ন হবে
৩. সিরিয়ার ভূমি আরো টুকরো হবে
৪. তুরস্ক হবে পরবর্তী লক্ষ্য
৫. বাংলাদেশ, পাকিস্তান-সবার ওপর চাপ বাড়বে
৬.এখানে নিরপেক্ষ থাকার কোনো জায়গা নেই।
করণীয়: জেগে উঠুন! রাস্তায় নামুন!
মুসলিম বিশ্বকে রাস্তায় নামতে হবে-শুধু ফেসবুক নয়
মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ওআইসি’র মাধ্যমে জরুরি সম্মেলন ডেকে ইউনাইটেড মুসলিম ফোর্স গঠন করতে হবে
ইসরায়েলের পণ্যে, আমেরিকান কোম্পানিতে বর্জন জারি করতে হবে
মসজিদ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক আলোচনা সভা চালু করতে হবে
মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে ইরানের পক্ষে তথ্যযুদ্ধ চালাতে হবে
শেষ কথা:আক্রান্তের আগেই আক্রমণ
ইরান আজ একাকী লড়ছে। কিন্তু এটি আসলে এক জনপদের লড়াই নয়-এটি একটি আদর্শের লড়াই। মুসলমানদের ইতিহাস বলে দেয়: যখন তারা একত্র ছিল, তারা যুগে যুগে সাম্রাজ্য গড়েছে। আর যখন তারা বিভক্ত ছিল, তারা হয়েছে গোলাম।
আজ আমরা কোনটা হতে চাই-উম্মাহ, না উম্মরাহ-চর?
জেগে উঠো মুসলিম বিশ্ব। এখনই নয় তো আর কখন?
সবাই শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। www.thenabajagaran.com