ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে লন্ডভন্ড ইসরায়েল: আগুনে পুড়ছে এক ‘অভেদ্য’ রাষ্ট্রের মিথ!

নবজাগরণ ডেস্ক:মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:

“যারা ইতিহাসকে তাচ্ছিল্য করে, ইতিহাস তাদের ধ্বংস করে।”
ইসরায়েলের বর্তমান অবস্থান যেন এই কথারই এক জীবন্ত প্রমাণ। এক সময় যারা পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ‘আয়রন ডোম’-এর জোরে নিজেদের অপ্রতিরোধ্য বলে ভাবতো, আজ তারাই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টিতে দিশেহারা। হাইফা, তেলআভিভ, অ্যাশকেলন, দিমোনা-একটির পর একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও শিল্পাঞ্চলে আঘাত হেনেছে ইরানের সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই আঘাত শুধু অবকাঠামো নয়, বিধ্বস্ত করেছে ইসরায়েলের আত্মবিশ্বাস, ভেঙে পড়েছে ‘অপরাজেয়তার’ আস্তরণ।

যুদ্ধের বাস্তবতা: কাগুজে বাঘ নয়, পরাশক্তির মত আঘাত হেনেছে ইরান

গত কয়েকদিন ধরে ইরান যেভাবে সুনির্দিষ্ট, সমন্বিত ও বহুমাত্রিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, তা বিগত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। ‘খায়বার শিকার’, ‘সেইজিল-৩’, ‘জুলফিকার বাসির’-এই সব দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলো কেবল আকাশ ভেদ করে এসে পড়েনি, এগুলোর প্রতিটি ছিল একেকটি বার্তা-“ইরান আর প্রতিরোধের পাশে নেই, এবার সে নেতৃত্বে!”

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান যে মাল্টি-ওয়ারহেডেড মিসাইল ব্যবহার করেছে, সেগুলো প্যাট্রিয়ট সিস্টেমকেও ফাঁকি দিতে সক্ষম। এক মিসাইল থেকে পৃথক হয়ে একাধিক ওয়ারহেড বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে। এই প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত কেবল রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ছিল বলে ধারণা করা হত।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হাইফা: তেল শোধনাগার, মাইক্রোসফট বিল্ডিং গুঁড়িয়ে গেছে

ইরানের একাধিক মিসাইল আঘাত হেনেছে হাইফা শহরের কৌশলগত শিল্পাঞ্চলে। সেখানে অবস্থিত ইসরায়েলের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগার পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। বেসরকারি সূত্র জানায়, হাইফার শিল্প এলাকার একটি মাইক্রোসফট অফিস ভবনেও আঘাত হেনেছে ক্ষেপণাস্ত্র, যার ফলে শতাধিক প্রযুক্তিকর্মী হতাহত হয়েছেন। আগুন ও ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায়।

সম্ভাব্য পরিণতি: শরণার্থীর দেশে পরিণত হচ্ছে ইসরায়েল?

হামলার তীব্রতায় ইসরায়েলি নাগরিকরা হাইফা, তেলআভিভ থেকে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। বিভিন্ন বন্দরে ভিড় করছে অভিবাসীপ্রত্যাশী ইহুদিদের নৌকাবহর। অথচ এই দৃশ্য কয়েক মাস আগেও ছিল গাজার বাস্তুচ্যুত মুসলিমদের।

এ যেন ইতিহাসের জবাব-জমিন ছিনিয়ে নিলে, আকাশও ফিরিয়ে দেয় না।

পশ্চিমা বিশ্ব নির্বাক: পেন্টাগনের নিঃশব্দতা কি পরাজয়ের স্বীকারোক্তি?

বিশ্ববাসী যখন ভাবছিল-আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন ইসরায়েলের পাশে এসে দাঁড়াবে, তখন তারা চুপ। মার্কিন পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস পর্যন্ত লিখছে:
“This is no longer a proxy war. Iran just broke the myth.”

পশ্চিমারা এখন জানে-ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নামলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জ্বলবে, তেলের দাম হবে ব্যারেলপ্রতি ২০০ ডলার, ইউরোপের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।

প্যালেস্টাইন ইজ নট অ্যালোন: ইরান দেখালো প্রতিরোধ মানেই অস্ত্র!

এই যুদ্ধ কেবল একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নয়। এই যুদ্ধ প্রতিরোধের নতুন সংজ্ঞা।
গাজা, লেবানন, ইয়েমেন, ইরাক-যেসব জায়গা একসময় কেবল বিক্ষোভের জায়গা ছিল, আজ তারা মিসাইল ছুঁড়ছে, যুদ্ধের সূচনা করছে। আর ইরান তাদের নেতৃত্বে!

শেষ কথা: এই যুদ্ধ শুরুর, শেষ নয়!

ইসরায়েল আজ আহত, ক্লান্ত, ক্ষতবিক্ষত।
কিন্তু এই যুদ্ধে শেষ নেই-শেষ আছে কেবল তাদের বর্বর দম্ভের, দখলদারির।

ইতিহাস ফিরে এসেছে, প্রতিশোধের মঞ্চে।
এবার আর শুধু কাঁদবে না গাজা, কাঁদবে তেলআভিভও।
শেয়ার করুন সবাই
www.thenabajagaran.com