ইরান জুড়েবিজয় উৎসব “বজ্রনিনাদে নয়, নির্ভীক নীরবতায় জন্ম নেয় প্রতিরোধের ইতিহাস।”

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী :
১২ দিনের রক্তমাখা প্রান্তর পেরিয়ে ইরানের আকাশে এবার বিজয়ের শঙ্খনাদ।
এ যেন শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, এটি এক আদর্শিক ঘূর্ণিপাক-যেখানে শক্তি আর নৈতিকতার মুখোমুখি সংঘর্ষে টিকে রইল বিশ্বাসের মাটিতে দাঁড়ানো এক জাতি।

তেহরানের রাস্তায় আগুন জ্বলে ওঠে যেমন উল্লাসে, তেমনি প্রতিটি ধোঁয়ার কুন্ডলি যেন বলে দেয়-“আমরা নত হইনি, আমরা বেঁচে আছি বুক উঁচিয়ে।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন যুদ্ধ থামানোর ঘোষণা দেন, তখন ইরান জানায়-আমরা থামিনি, আমরা ইতিহাস লিখছি।

মোল্লা না হয়েছি, মাযহাবের সব শাখা-প্রশাখা আমার জানা নেই।
তবু আমি বুঝি-যে নিরস্ত্র শিশুদের রক্ষায় কেউ কথা বলে না, তার জন্য অস্ত্র তুলে নেওয়াটাই হক কথা।

আপনি সেই কথা বলেছেন। আপনি সেই অস্ত্র তুলেছেন।
আপনি শত্রুর মুখে দাঁড়িয়ে এক নতুন যুগের ঘোষণাদাতা।
আপনিই আমার ইমাম—not by মাযহাব, but by মর্ম।

হয়তো আপনি হারিয়ে যাবেন রাতের অন্ধকারে।
তবু আপনার পদচিহ্ন থাকবে জ্বলন্ত ধুলোর ওপরে,
আর সেই পথে চলবে মুক্তির কাফেলা।

আল্লাহ আপনাকে হেফাজতে রাখুন।
এই বিজয় হোক সব নিপীড়িতের প্রতিশোধের প্রতিচ্ছবি।

বিশ্ব শক্তির মুখোমুখি একমাত্র বাঘ: ইরান ও খোমেনির বিপ্লবী দিগন্ত-
ইজরায়েল-আমেরিকা-বৃটেন-জার্মানি নয়, বিশ্ব মুসলিম আজ আশ্রয় খুঁজছে সেই একজনের নেতৃত্বে, যিনি ভয় পান একমাত্র আল্লাহকে।

১৯৭৯ সালে ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন যে মানুষটি, তিনি ছিলেন শুধু একজন ধর্মীয় নেতা নন-একজন বিপ্লবের স্থপতি, এক অনড় মুজাহিদ, এক আধ্যাত্মিক শের। তিনি আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি। পশ্চিমা বিশ্ব যখন ভাবছিল ‘ইসলাম ইতিহাস’, তখন তিনি প্রমাণ করলেন-ইসলাম একটি জীবন্ত, চলমান, বিপ্লব-সক্ষম জীবনদর্শন। আর ইরান-বিশ্বের এই একমাত্র রাষ্ট্র, যা আমেরিকা, ইজরায়েল, বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং গোটা ইউরোপের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করতে পারে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আমরা কারো গোলাম নই!”

অতীত: এক বিদ্রোহের সূচনা

যে যুগে মুসলিম বিশ্ব ছিন্নভিন্ন, নেতৃত্বহীন এবং পরনির্ভরতায় বিধ্বস্ত, ঠিক তখনই ইরানে জন্ম নিল এক বৈপ্লবিক রাষ্ট্র, যার ভিত্তি ছিল কুরআন, শিরা ও সাহস। খোমেনি বলেছিলেন, “আমরা ইসলামকে শুধু মসজিদের মধ্যে আবদ্ধ রাখবো না, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মূলে ইসলামী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবো।” এই ঘোষণাই আমেরিকার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।

ইরানের ইসলামি বিপ্লব ছিল শুধু একটি রাষ্ট্রের বদল নয়, বরং একটি চেতনার পুনর্জন্ম। মুসলিম জাতির আত্মমর্যাদা, সাহস ও প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছিল এই বিপ্লব।

বর্তমান: যখন বিশ্ব আবার অস্থির

আজ যখন ইসরায়েল মাটি কামড়ে পড়ে আছে, যখন গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত, যখন পশ্চিমারা মানবাধিকারের বুলি আওড়াচ্ছে কিন্তু মুসলিম রক্ত ঝরছে অনবরত-তখন ইরান একমাত্র রাষ্ট্র, যা মুখে নয়, বাস্তবে অস্ত্র ধরে প্রতিরোধ করছে। আমেরিকান ঘাঁটিতে মিসাইল, ইজরায়েলের গবেষণা কেন্দ্র ধ্বংস, ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দানে ড্রোন যুদ্ধের নতুন সংজ্ঞা-সবই প্রমাণ যে ইরান ভয় পায় না কারো দমকানি।

আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির উত্তরসূরি আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী আজও সেই বিপ্লবের দীপ্তি বহন করছেন। তার নেতৃত্বে ইরান হয়ে উঠেছে এক ‘Resistance Axis’-এর কেন্দ্রবিন্দু-যা সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনকে একসূত্রে গেঁথে দিয়েছে।

ভবিষ্যত: মুসলিম বিশ্বের পুনর্জাগরণ

বিশ্ব এখন দ্বিধায় বিভক্ত। একদিকে ভোগবাদী, ঔপনিবেশিক সভ্যতা; আরেকদিকে ধর্মপ্রাণ, আত্মমর্যাদাপূর্ণ মুসলিম বিশ্ব-যারা খোমেনির চেতনায় বলীয়ান হয়ে বলছে: “আমরা নত হবো না, আমরা রুখে দাঁড়াবো।”
এই নতুন প্রজন্ম আর আফগানিস্তান, সিরিয়া বা ফিলিস্তিনকে কাঁদতে দেখবে না-তারা জবাব দেবে, সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে, নৈতিক বিজয়ের মাধ্যমে।

একটি জীবন একটি আদর্শ একটি দেশ একটি বিশ্বাস একটি বিজয়

আয়াতুল্লাহ খোমেনির জীবন আমাদের শেখায়-একটি মানুষ, একটি আদর্শ, একটি চেতনা কীভাবে পুরো বিশ্বের শত্রুতার মাঝেও বুক উঁচিয়ে দাঁড়াতে পারে। আজ যারা বলছেন “ইসলাম হুমকি”-তারা ভয় পায় খোমেনির মতো মানুষদের, যারা জানে আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথা নোয়াবার নেই।

ইরান শুধু একটি রাষ্ট্র নয়-এটি একটি প্রতিরোধের নাম, একটি বিশ্বাসের নাম, একটি নতুন বিশ্বের সূচনা বিন্দু।

ইনশাআল্লাহ, বিজয় আসবেই। কারণ, যাদের সাথে আল্লাহ থাকেন, পরাজয় তাদের জন্য নয়।

সবাই শেয়ার করুন
www.thenabajagaran.com