“সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫”: জনগণের পক্ষে ইতিহাসের সঠিক সিদ্ধান্ত! :

নবজাগরণ ডেস্ক প্রতিবেদন :
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে এক অদৃশ্য অথচ ভয়ঙ্কর শত্রুর হাতে জিম্মি ছিল-আমলাতন্ত্র। এই আমলাতন্ত্র এমনই এক দানবীয় রূপ নিয়েছিল যে, জনগণের অর্থে গড়া রাষ্ট্রযন্ত্রটি ক্রমশ জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেত। আর এই শৃঙ্খল ভাঙতে হলে প্রয়োজন ছিল একটি সাহসী পদক্ষেপ। ঠিক সেই কাজটিই করেছে বর্তমান গণঅভ্যুত্থানের সরকার।

“সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫” কেবল একটি আইন নয়, এটি একটি জনগণের বিজয়ঘোষণা, যা রাষ্ট্রের চাকা ঘোরানো সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে যাচ্ছে। দুর্নীতি, শৃঙ্খলাভঙ্গ, অনুপস্থিতি, কাজের গাফিলতি, ঘুষ গ্রহণ কিংবা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যহীনতা-এই অপরাধগুলো এতদিন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে লালিত-পালিত হয়েছে “অজুহাত আর অদৃশ্য প্রটেকশনের” মাধ্যমে। কিন্তু এখন আর না।

কে বিরোধিতা করছে এই আইন?

অবাক করা ব্যাপার হলো, এই জনকল্যাণমূলক আইনের বিরোধিতা করছে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা এই আইনকে ‘জুলুম’ বলছে, নিজেদের ‘অধিকারের হস্তক্ষেপ’ বলে প্রচার করছে।

প্রশ্ন হলো: এই আইনে কী লেখা আছে? এই আইন তো বলে-

> “আপনি যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন, কাজে অনুপস্থিত থাকেন, ঘুষ চান, জনগণের কাজ আটকে রাখেন-তাহলে আপনি শাস্তি পাবেন।”

এত সোজা ও সৎ একটি নিয়মেও যদি আপনার সমস্যা হয়, তাহলে তো নিশ্চিতভাবেই আপনার ভেতর অপরাধ লুকানো আছে।

হাছিনা যুগের বিষবাষ্প ও সুবিধাবাদীদের ছায়া

দেড় যুগের বেশি সময় ধরে হাছিনা সরকার একটি বিকৃত প্রশাসনিক সংস্কৃতি গড়ে তোলে। বেতন বাড়ানো, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, পদোন্নতি দেওয়া-সবই হয়েছে বাধাহীন দুর্নীতিকে আড়াল করে। সেবা না দিয়ে ফাইল আটকে রেখে ঘুষ নেওয়া, রাজপথে গণহত্যা হলেও মুখ না খোলা, ভোট ডাকাতিতে সহায়তা করা-এসব কর্মকাণ্ডে এই আমলারা ছিল মূল কুশীলব।

আজ যখন নতুন সরকার তাদের দায়িত্বের জবাবদিহি চায়, তখন তারাই “অধিকারের কথা” বলে বিলাপ শুরু করেছে!

এই সরকার যদি দুর্নীতি বন্ধ করে, স্বচ্ছতা আনে, তাহলে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়? নিশ্চয়ই তারাই-যারা এতদিন সুবিধা ভোগ করেছে, অনৈতিকভাবে সম্পদ বানিয়েছে, অথচ কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।

রাষ্ট্র বনাম দুর্নীতিবাজ কর্মচারী: মুখোমুখি সংঘর্ষ

এই আইন মানে হচ্ছে, “জনগণের কাজে গাফিলতি মানেই শাস্তি।” আর তাতেই অস্থির হয়ে উঠেছে হাছিনার পালিত সুবিধাভোগী আমলারা। তারা চাইছে আবার আগের মত কেউ আসুক, যাকে তারা ‘ম্যানেজ’ করতে পারবে। তারা চাইছে “ভবিষ্যতে হাছিনা আবার ফিরুক”-এমন ষড়যন্ত্রতন্ত্র ছড়িয়ে সরকারের ভিত নড়বড় করতে।

কিন্তু তারা জানে না-এই সরকার আর আগের মতো নয়। এই সরকার “ইলেকশন দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি, জনগণের রক্তের বিনিময়ে এসেছে”। তারা জানে-জনগণ জেগেছে।

জবাবদিহিতা ছাড়া রাষ্ট্র নয়, ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা নয়

সরকারি চাকরি হলো জনগণের টাকায় নিয়োজিত একটি পবিত্র দায়িত্ব। কেউ যদি তা অপব্যবহার করে, তবে তাকে কেবল শাস্তি নয়, চাকরিচ্যুত করে জনগণের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা উচিত।

এখন সময় এসেছে-যাদের কাছে দেশ ছিল আমানত, অথচ যারা সেই আমানত চুরি করেছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা।

সরকার বাধ্যতামূলক অবসরের মাধ্যমে দুর্নীতিপরায়ণ, দায়িত্বহীন ও স্বেচ্ছাচারী কর্মচারীদের বাদ দিয়ে নতুন বেকার তরুণদের সুযোগ দেওয়া উচিত। দেশজুড়ে লাখো মেধাবী, সৎ ও দেশপ্রেমিক তরুণ আজও বেকার। রাষ্ট্র তাদের সুযোগ দিলে, তারাই গড়বে সুশাসনের ভিত।

ইউনুস সরকারকে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে হবে

এই মুহূর্তে ইউনুস সরকার যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছে, তা কেবল একটি সরকারের দায়িত্ব নয়-এটি একটি নতুন রাষ্ট্র গঠনের সূচনা। তাই প্রশাসনের নাম করে যারা রাষ্ট্রের ভিত দুর্বল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেই হবে।

জনগণ আজ সম্পূর্ণভাবে সরকারের পাশে আছে।

সরকারি চাকরি মানে ঘুষ নয়, মানে সেবা-এই বিশ্বাস জনগণের।

জনগণ আর কাউকে ঠকতে দেবে না-চাকরি যদি পছন্দ না হয়, ছাড়ুন।

রাষ্ট্রের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী যদি জনগণের কাজে গাফিলতি করে, তা হলে তাকে আর রাষ্ট্রের ঘাড়ে বোঝা করে রাখা যাবে না। আজ পরিবর্তনের সময়। পচা কাঠামো ভেঙে নতুন কাঠামো গড়ার সময়।

এবার জনগণ বলছে-
“আমরা আর চাকরের জুলুম সহ্য করব না। রাষ্ট্রের চাকরি মানে আমাদের সেবা। তা না হলে বেরিয়ে যান। আমরা আমাদের তরুণদের সুযোগ দেব।”

এই উপসম্পাদকীয় জনগণের রক্ত, ঘাম, প্রতীক্ষা ও বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করছে।
নবজাগরণ ডেস্ক: