যুদ্ধবিরতির ছায়ায় ইসরায়েলের ক্ষতচিহ্ন ও আরব-পশ্চিমা ভণ্ডামির মুখোশ উন্মোচন-হাতে থালা

নবজাগরণ-বিশ্লেষণ বিভাগ:
১২ দিনের যুদ্ধ থেমে গেছে, কিন্তু বারুদের গন্ধ এখনো আকাশে ভাসছে। তেহরানের আকাশে ড্রোনের গর্জন আর ইসরায়েলের ভেতরকার চাপা কান্না-এই দ্বৈরথের ক্ষতচিহ্ন আজ ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। যুদ্ধ শেষ হলেও, প্রকৃত সত্য লুকিয়ে রাখা যায় না। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রকাশিত প্রতিবেদন ও কিছু ফাঁস হওয়া তথ্য প্রমাণ করছে-ইসরায়েল আসলে কী হারিয়েছে, আর কে কার মুখোশ পরে খেলছিল ‘শান্তির নাটক’।

যুদ্ধের সূচনা: আগুনে ঘি ঢেলে ইসরায়েল আম-ছালা সবশেষ উদ্বাস্তু
এই সংঘাতের সূত্রপাত ঘটেছিল ইসরায়েল নিজেই। তাদের ‘প্রি-এম্পটিভ স্ট্রাইক’ নীতির আওতায় ইরানের সামরিক ও কূটনৈতিক স্থাপনায় গোপনে একাধিক হামলা চালায় মোসাদ ও আইডিএফ। তেহরানের প্রতিক্রিয়ায় আঘাত হানে আগুনের মতো-৫৯১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে দেয় ইসরায়েলের দিকে, যার মধ্যে অন্তত ৫০টি ইসরায়েলের লৌহ গম্বুজ প্রতিরক্ষা ভেদ করে ঢুকে পড়ে।

ইসরায়েলের ভেতরকার তছনছ-পা-থেকে মাথা -রাষ্ট্র বলতে গাজারমত জীর্ণ শীর্ণ ভগ্নদশা!
যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েল সেন্সরশিপের ঘেরাটোপে ঢেকে রাখে নিজের ক্ষয়ক্ষতি। কিন্তু দীর্ঘদিন চেপে রাখা সত্য চাপা থাকেনি।

২৯ জন নিহত
৩৪৯১ জন আহত
১১ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত
৩৮ হাজার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ
১৯,৫০০ বার সাইরেন বাজানো
তেল আবিবের আকাশ প্রতিরক্ষা যতই সফল দাবি করুক, বাস্তবতা হচ্ছে-এই ধ্বংসস্তূপের নিচে লুকানো আছে ইসরায়েলি আত্মবিশ্বাসের ভাঙা প্রতিচ্ছবি।হাতে ধরিয়ে দিয়েছে থালা-বাসন!(ভিডিও)

ড্রোন যুদ্ধ ও গোয়েন্দা দুর্বলতা
ইরান ১,০৫০টির বেশি ড্রোন পাঠায়, যার মধ্যে ৫৭০টি ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। ইসরায়েল দাবি করে, কেবল একটি ড্রোনই তাদের প্রতিরক্ষা পেরিয়ে যায়। অথচ হামলার ভিডিও, ফাঁস হওয়া ছবিগুলো অন্য কথা বলে।

ইরান দাবি করেছে-তারা হার্মেস সিরিজের তিনটি ড্রোন এবং একটি F-35 যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে। ইসরায়েল এখনো মুখ খোলেনি-মুখ বন্ধ থাকলেই কি সত্য মিথ্যা হয়ে যায়?

ইরানে ধ্বংসযজ্ঞ ও শহীদদের রক্ত
ইসরায়েলি পাল্টা হামলায়:
৬২৭ জন নিহত, ৪৮৭০ জন আহত
২৫ জন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা শহীদ
১১ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীর মৃত্যু নিশ্চিত (ইসরায়েল দাবি করে ১৫ জন)

ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানে পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংসের প্রচেষ্টা
এই হামলায় মোসাদ সরাসরি ভূমিকা নেয় এবং তাদের অভিযানের ভিডিও প্রকাশ করে। রেড ক্রিসেন্ট, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এমনকি কারাগারে হামলা চালিয়ে তারা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে-এই যুদ্ধ ছিল সামরিক নয়, ছিল ইরানকে পঙ্গু করার রাজনৈতিক অপারেশন।

আরব রাজতন্ত্রের নির্লজ্জ ভূমিকা-রহস্য নিয়ে ভাবছে মুসলিম বিশ্ব
যখন গাজা জ্বলছিল, দামেস্কে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ছিল, আর তেহরানে রক্ত ঝরছিল, তখন আরব রাজারা করতালি দিয়ে পশ্চিমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সৌদি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত-কেউই ইরানবিরোধী বিবৃতি দিতে দ্বিধা করেনি। অথচ মুসলিম ভ্রাতৃত্বের নামে এরা হজ্বের সময় মেকআপ পরা কুমিরের মতো কান্না করে।

যে কাবা থেকে একদিন সালাহউদ্দিন আইয়ুবী উত্থান করেছিলেন, সেই কাবার অভিভাবকরা আজ ফিলিস্তিন, লেবানন বা ইরানের রক্ত দেখে নিরব দর্শক-বরং আনন্দিত পশ্চিমা অস্ত্র বিক্রেতা-
পশ্চিমা গণমাধ্যমের ভণ্ডামি।

CNN, BBC, FOX News-যারা ইউক্রেন যুদ্ধের সময় প্রতি সেকেন্ডে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতি গণনা করতো, তারা ইসরায়েলের বিপর্যয়ের সামনে দাঁড়িয়ে চুপ করে থাকে। ইরানবিরোধী অপপ্রচারে কোটি ডলার খরচ করে পশ্চিমা মিডিয়া বরাবরের মতো প্রকৃত সত্য আড়াল করেছে।

যুদ্ধ থেমেছে, কিন্তু মুখোশ খুলে গেছে শতভাগ
এই যুদ্ধ আমাদের দেখিয়েছে:
ইসরায়েল অজেয় নয়?
ইরান একা নয়?
আরব রাজারা মুসলিমদের নয়!
পশ্চিমা মিডিয়া নিরপেক্ষ নয়?
ইরান রক্ত দিয়েছে, কিন্তু মাথা নোয়ায়নি। যুদ্ধ থেমেছে, কিন্তু প্রতিরোধ থামেনি। এবং আজ-বিশ্ববাসী দেখছে-কে সত্যিকারের প্রতিরোধ যোদ্ধা, কে মুখোশধারী বন্ধুর বেশে শত্রু।

প্রশ্ন রইল মুসলিম বিশ্বের কাছে:
আর কত দিন নিজেদের শত্রুদের সাথেই বসে থাকবে তোমরা? আর কতবার তোমাদের নীরবতা, তোমাদের “সমঝোতা”-শহীদদের রক্তকে অপমান করবে?
যুদ্ধবিরতি শান্তি নয়, এটা শুধু সময় চাওয়া আরেক যুদ্ধের আগে।
‘যুক্তরাষ্ট্রের কারণে অল্পের জন্য পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি ইসরায়েল’জানালেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি এক বিবৃতিতে।