নবজাগরণ ডেস্ক:২৭ জুন ২০২৫
ইরান এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করার অভিযোগে ৭৩ জনকে গ্রেফতার করেছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক। এদের কয়েকজন চাবাহার বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিল। আর এখানেই উঠে আসে এক ভয়ানক সত্য-চাবাহার বন্দর ভারতের হাতে তুলে দিয়ে ইরান নিজের কফিনে নিজেই পেরেক ঠুকেছে।
ভারতের প্রভাব ব্যবস্থাপনায় চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে ইসরায়েল ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সামরিক কাঠামো এবং কৌশলগত পয়েন্টসমূহের উপর নজরদারি চালানোর সুযোগ পায়। আর এই গোয়েন্দা কার্যক্রমের ফলাফলই হয় সম্প্রতি ইসরায়েলের একের পর এক নিখুঁত হামলা-যেখানে লক্ষ্যবস্তু হয় ইরানের ড্রোন কারখানা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সামরিক ঘাঁটি।
বাংলাদেশ কি চাবাহারের পথে হাঁটছে?
আমরা যতই দুঃখ প্রকাশ করি, ততই উদ্বেগ বেড়ে যায়-কারণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি একই ছকের পুনরাবৃত্তি।
শেখ হাসিনা আমলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ এতটাই ব্যাপক ছিল যে, আজ তার পরিণতি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য এক মারাত্মক আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।
উদাহরণগুলো চিন্তার কারণ:
মংলা বন্দর: কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরেও ভারতীয় প্রভাব প্রকট।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প: যেখানে ভারতীয় শ্রমিকদের সরবরাহ করা হয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে।
গার্মেন্টস শিল্পে ভারতীয় পরামর্শক ও প্রযুক্তি: যা শিল্পীয় গোয়েন্দাগিরির আশঙ্কা বাড়ায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগ: একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সার্ভার যেখানে ভারতীয় সফটওয়্যার ও প্রকৌশলীর উপস্থিতি নিরাপত্তার বিপর্যয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে।
MIST ও সামরিক প্রশিক্ষণ: যেখানে ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষকরা নিয়োজিত।
এসব খাতে ভারতের গভীর অনুপ্রবেশ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বা কারিগরি নয়, বরং গোয়েন্দা তৎপরতা ও তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়-যেমনটি ঘটেছে চাবাহারে।
ভারত-ইসরায়েল: মুসলিম-বিরোধী জোটের বাস্তব রূপ
ভারত ও ইসরায়েল-দুই দেশই আজ বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিধন, ইসলামী প্রতীক ধ্বংস ও ইসলামভীতি প্রচারে অন্যতম প্রধান অপারেটর।
কাশ্মীর, গুজরাট, আসাম, উত্তরপ্রদেশে মুসলিম নিধন
গাজা, পশ্চিম তীরে গণহত্যা, হাসপাতাল ধ্বংস
এই দুটি রাষ্ট্র একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে, যার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ভূরাজনৈতিক আধিপত্য নয়, বরং ইসলামী বিশ্বকে প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা দমননীতি দিয়ে স্তব্ধ করে দেওয়া।
আর এই দুই অপশক্তির মিলনস্থল যখন হয় বাংলাদেশের ভেতরকার রাষ্ট্রীয় স্থাপনায়, তখন প্রশ্ন ওঠে-আমরা কি বুঝেও না বোঝার ভান করছি?
আন্তর্বর্তী সরকার কি ঘুমিয়ে আছে?
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো শেখ হাসিনা আমলের বেহুঁশ নীতিগুলোকেই ধরে রেখেছে। এতসব ঘটনার পরেও রূপপুর, মংলা, তথ্যপ্রযুক্তি খাত-সবখানেই ভারতীয় প্রভাব বলবৎ। কোনো প্রকল্প পর্যালোচনা, কোনো অংশ বাতিল, কোনো তদন্তের ঘোষণা নেই। জাতীয় স্বার্থ এখানে যেন ব্রাত্য বিষয়।
এখনই সময়! আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে-চাবাহারের মতো ভুল বাংলাদেশও করবে, নাকি সতর্ক হয়ে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে?
আমাদের করণীয় কী?
১. বাংলাদেশের সকল সংবেদনশীল খাতে ভারতীয় অংশগ্রহণ বাতিল ও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
২. রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা নীতিমালা পুনর্বিন্যাস করে বিদেশি কর্মী নিরীক্ষা জোরদার করা জরুরি।
৩. অর্থনৈতিক সহযোগিতার নামে রাজনৈতিক ও সামরিক পরাধীনতা বন্ধ করতে হবে।
৪. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে এই ইস্যুতে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।
সময় থাকতে সাবধান হোন
ইরান যে ভুল করেছে, বাংলাদেশ যেন সেই একই পথে না হাঁটে। কারণ পরাধীনতা কেবল বন্দুকের মুখে আসে না, কখনো তা আসে চুক্তি, সফটওয়্যার, প্রশিক্ষক কিংবা সমঝোতা স্মারকের আড়ালে।
আজ যদি আমরা চুপ থাকি, কাল হয়তো আমাদের রাষ্ট্রের অঙ্গপ্রত্যঙ্গেই বসে থাকবে সেই গুপ্তচর-যাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে ভারত-ইসরায়েল জোট।
www.thenabajagaran.com