বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাল ইরান: একটি নৈতিক বিজয়ের অনন্য সাক্ষ্য

বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাল ইরান: একটি নৈতিক বিজয়ের অনন্য সাক্ষ্য

নবজাগরণ ডেস্ক : বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন :
যখন বিশ্ব কূটনীতির পাপচক্রে ন্যায়বিচার ও মানবতার কণ্ঠ নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে, তখন একটি সাহসী জাতির নৈতিক উচ্চারণ সারা বিশ্বের বিবেককে জাগ্রত করে। ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিরোধ আন্দোলনে বাংলাদেশের জনগণ ও রাষ্ট্র যে একাত্মতা দেখিয়েছে, তা শুধু কূটনৈতিক সমর্থন নয়-এ এক নৈতিক ও বিপ্লবী অবস্থান, যা উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনার ধারাবাহিকতা।

এ কারণেই ২৬ জুন ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাস একটি আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার, জনগণ এবং দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। এই কৃতজ্ঞতা যেন কেবল একটি কূটনৈতিক বার্তা নয়, বরং এটি দুই দেশের জনগণের হৃদয়ের গভীর আত্মিক বন্ধনের একটি প্রতীক।

বাংলাদেশের অবস্থান: নির্ভীক ও ন্যায়ের পক্ষে

ইসরায়েল যখন আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে গাজায় শিশুদের রক্তে ভূমি ভিজিয়ে দিচ্ছে, তখন পশ্চিমা বিশ্বের একাংশ নিরব থেকে পাশবিকতা প্রশ্রয় দিচ্ছে। এমন সময়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সহানুভূতিপূর্ণ বক্তব্য, মানববন্ধন, শিক্ষাবিদ-ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ এবং জনগণের সর্বাত্মক সম্পৃক্ততা এই বার্তাই দিয়েছে-বাংলাদেশ কখনোই নির্যাতিতের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা করে না।

ইরান এই সংহতিকে ব্যাখ্যা করেছে “মানবিক সচেতনতা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও জাতীয় মর্যাদার প্রতি বাংলাদেশের গভীর প্রতিশ্রুতি” হিসেবে। সত্যিই, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করা একটি জাতি জানে, কীভাবে দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। সেই ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা আজ ফিলিস্তিন-ইরান সংহতির মধ্যে নতুনভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

ইরানের বার্তা: প্রতিরোধ এক নৈতিক দায়িত্ব

ইরান দূতাবাস তাদের বিবৃতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে-প্রতিরোধ শুধু রাষ্ট্রীয় অধিকার নয়, এটি একটি নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। এটি একটি এমন ভাষ্য, যা পশ্চিমা প্রচারণার মুখে দাঁড়িয়ে সত্যের ঝান্ডা তুলে ধরার মত সাহসী। আধিপত্যবাদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যে বার্তাটি ইরান দিচ্ছে, বাংলাদেশ সেখানে প্রতিধ্বনি তুলছে।

এ সংহতি কেবল দুই দেশের মধ্যে নয়, বরং এটি বিশ্বের মুক্তিকামী সব জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ঐক্যের পথ তৈরি করছে। আজ যদি আমরা চুপ করে থাকি, তবে কাল আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎও হুমকিতে পড়বে। প্রতিরোধকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করলে ভুল করবো-এটি এক বিশ্বব্যাপী মানবতা ও অধিকার রক্ষার আন্দোলনের অংশ।

বাংলাদেশ-ইরান সংহতি: নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক দীপ্ত বার্তা

আজকের জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্যে যখন সৌদি আরব ও আরব আমিরাত পশ্চিমা বলয়ের চাপে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় লড়ছে, তখন ইরান ও বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোর এ ধরনের অবস্থান এক নতুন জোটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ জোট অর্থনৈতিক নয়, সামরিকও নয়-এটি নৈতিক নেতৃত্ব ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জোট। যেখানে মানুষ, মর্যাদা ও মুক্তির প্রশ্নে একতাবদ্ধ হতে পারে বৈশ্বিক জনতা।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, যাদের হৃদয়ে ফিলিস্তিন, ইরান ও প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, তারা বুঝে গেছে-পুঁজিবাদের তৈরি ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’-এর বিরুদ্ধে একটি বিকল্প বিশ্ব ব্যবস্থা দরকার। যেখানে জাতিসমূহের পরস্পর সহযোগিতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান থাকবে।

বিশ্ব দেখেছে নতুন ইরান:
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির নেতৃত্বে আগামীর নতুন ইরান মুসলিম বিশ্বের গৌরবের ইতিহাসের জম্ম দিয়েছেন

ইরানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ একটি আনুষ্ঠানিকতাকে ছাড়িয়ে গেছে। এটি এক অনন্ত আত্মিক বন্ধনের সূচনা, যা ভবিষ্যতের বিপ্লবী বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে উঠতে পারে। আজ যে বাংলাদেশ সংহতির হাত বাড়িয়েছে, কাল সে ন্যায়ের পতাকাবাহী এক নেতৃত্বে রূপ নিতে প্রস্তুত।

#বাংলাদেশ_ইরান_সংহতি #ফিলিস্তিন_প্রতিরোধ #নবজাগরণ #বিপ্লবের_অঙ্গীকার #মানবতার_জয়