হিন্দু নববধূকে উলঙ্গ করে পালাক্রমে ধর্ষণ! কুমিল্লার মুরাদনগরে এই বর্বরতা?

স্বাধীন দেশে আজ আর কোনো নারী নিরাপদ নয়-তা সে সংখ্যাগরিষ্ঠ হোক বা সংখ্যালঘু, মুসলিম হোক বা হিন্দু।
কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে ঘটে যাওয়া নির্মমতা যেন ১৯৭১-এর রক্তাক্ত স্মৃতিকে আবার উস্কে দেয়। এক হিন্দু নববধূকে তার স্বামীর বাড়িতে নতুন সংসার শুরু করার মাত্র ৫ দিনের মাথায় ঘরের দরজা ভেঙে উলঙ্গ করে রাস্তায় টেনে বের করে একদল ‘মব সন্ত্রাসী’ পালাক্রমে ধর্ষণ করে-এটা কি কোনো সভ্য রাষ্ট্রের চিত্র হতে পারে?
ঘটনাবলি সংক্ষেপে:
স্থান: কুমিল্লা, মুরাদনগর, রামচন্দ্রপুর গ্রাম

ভিকটিম: হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নববধূ, বিয়ের মাত্র ৫ দিন পর

ঘটনা: রাতের অন্ধকারে দলবদ্ধভাবে ঘরে হামলা, শ্লীলতাহানি, বিবস্ত্র করে রাস্তায় টেনে বের করে পালাক্রমে ধর্ষণ

অভিযুক্তরা: স্থানীয় রাজনৈতিক ‘মব’ এবং সন্ত্রাসীচক্র-যারা একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় পরিচয়কে টার্গেট করে এই হামলা চালায়

পুলিশ ও প্রশাসন: অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন প্রাথমিকভাবে চাপে পড়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে

৫৪ বছরের স্বাধীনতা, কিন্তু নারীর সম্মান আজও নিরাপদ নয়!

আমরা কি এই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম? এই দেশের জন্য লাখো মা-বোন কি ইজ্জত হারিয়েছিলেন?
একাত্তরে যে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাঙালি জাতি মুক্তি ছিনিয়ে এনেছিল, আজ সেই একই বর্বরতা দেশের ভেতরেই ঘরে ঘরে চলছে-নতুন চেহারায়, নতুন পরিচয়ে, নতুন ‘মব’-এর হাতে।

আমরা যখন সংখ্যালঘু হিন্দু নববধূকে উলঙ্গ করে ধর্ষণের মতো খবর দেখি, তখন ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনীর বর্বরতার কাহিনী যেন ফিরে আসে:

পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা দেড় লাখের বেশি বাঙালি নারী ধর্ষণের শিকার

সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া

নারীদের ‘যুদ্ধলাভের ট্রফি’ হিসেবে ব্যবহার করা

আজ সেই বর্বরতাই যেন আমাদের সমাজের অংশ হয়ে গেছে।

এটা নিছক ধর্ষণ না-এটা ‘এথনিক ও রিলিজিয়াস টার্গেটেড টেররিজম’!

এই ঘটনার মাধ্যমে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করা, গৃহত্যাগে বাধ্য করা, এবং তাদের সম্পদ দখলের পথ তৈরি করা-এটাই ছিল আসল উদ্দেশ্য।
এটা নিছক কোনো যৌন অপরাধ নয়-এটা ethnic cleansing-এর অংশ। রাষ্ট্রীয়ভাবে চুপ করে থেকে এই সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া হলে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহতা আরো ভয়ংকর হবে।

রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যর্থ কেন?

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বিলম্ব করে

সিসিটিভি ফুটেজ বা প্রতিবেশীদের ফোনকল তদন্তে নেই

ধর্মীয় সংবেদনশীলতা দেখিয়ে অনেকে চুপ

গণমাধ্যমের অংশ এটি নিয়ে নিরব-পাছে কোনো ‘জাতিগত উত্তেজনা’ না বাড়ে!

কিন্তু প্রশ্ন হলো-ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলাও কি এখন ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানো?

এই বর্বরতা দমন করতে হলে যা প্রয়োজন:
১. মব ধর্ষকদের চিহ্নিত করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা

২. আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা

৩. ‘মব ধর্ষণ’ আইন দ্রুত প্রণয়ন করা-যেখানে একাধিক ধর্ষক এবং পরিকল্পিত ধর্ষণকে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে

৪. স্থানীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাবানদের সম্পৃক্ততা থাকলে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা

৫. সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে শূন্য সহিষ্ণুতা ঘোষণা করা

স্বাধীনতা মানে কি শুধুই পতাকা ও গান?

একটি স্বাধীন দেশের পরিচয় হয়-তার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিয়ে।
একটি সভ্য রাষ্ট্রের পরিচয় হয়-তার নারীদের মর্যাদা দিয়ে।

এই ঘটনার প্রতিবাদ না হলে, একদিন এই ‘মব’ নামের দৈত্য আপনাকেও ঘরের দরজা ভেঙে টেনে নিয়ে যাবে।

আমরা প্রতিজ্ঞা করি-রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা এই স্বাধীনতা আমরা ধর্ষকদের হাতে তুলে দেব না।

এই ঘটনার বিচার চাই-তা যেন না হয় আরেকটি রাইমা, রুনি, নীলা বা তনুর মতো সময়ের গহ্বরে চাপা পড়ে যাওয়া বিস্মৃত নাম।

লেখক:মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
মাধ্যম: নবজাগরণ অনলাইন।