মতিঝিলে ডিবি পরিচয়ে দিনের বেলায় ৩০ লাখ টাকার ডাকাতি: ডাকাত সর্দার মিজানসহ গ্রেপ্তার ২

নবজাগরণ প্রতিবেদন -ঢাকা- ৩০ জুন ২০২৫
রাজধানীর মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় দিবালোকে “ডিবি পুলিশ” পরিচয়ে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ডাকাত চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মতিঝিল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো-ডাকাত সর্দার মোঃ মিজান রহমান (৫১) ও তার সহযোগী মোঃ শামিম রহমান (২৯)। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই ছদ্মবেশে রাজধানীজুড়ে ডাকাতি করে আসছিল বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

ঘটনার বিবরণ:
তারিখ: ২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার

স্থান: মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঘরোয়া হোটেল সংলগ্ন
সময়: দুপুর ১২:৪৫ মিনিট

সততা কর্পোরেশন নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মচারী-খলিল (২৬) ও রিফাত (২৪)-স্কুটিতে করে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে মতিঝিল সিটি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে, ৬-৭ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে থামিয়ে দেয় এবং অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদের একটি ‘ডিবি’ লেখা হাইয়েস মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১৯-৯৮১৭)-এ জোর করে তুলে নেয়।

এরপর ভিকটিমদের চোখ বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। খলিলের নাকের হাড় ভেঙে যায় এবং উভয়ের শরীরে গুরুতর জখম হয়। অস্ত্রের মুখে তারা ভয় দেখিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় একটি ডাস্টবিনের পাশে হাত বাঁধা অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায়।

তদন্ত ও গ্রেফতার:

মতিঝিল থানায় ভুক্তভোগীরা মামলা দায়ের করলে পুলিশ গত ২৮ জুন সক্রিয়ভাবে অভিযান শুরু করে।

১. মোঃ শামিম রহমান (২৯)-কে মতিঝিল শাপলা চত্বরে গ্রেপ্তার করা হয় সকাল ১০:০৫ মিনিটে।
২. তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ডাকাত সর্দার মোঃ মিজান রহমান (৫১)-কে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানাধীন সাংগর এলাকা থেকে সকাল ৮:৪০ মিনিটে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত মিজানের বোনের আলমারি থেকে উদ্ধার করা হয় লুণ্ঠিত অর্থের মধ্যে ৮০,০০০ টাকা।

পটভূমি ও অতীত রেকর্ড:

গ্রেফতার মিজান একজন পেশাদার ডাকাত সর্দার, যার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তারা উভয়েই রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় ভাসমান জীবনযাপন করে এবং কখনো ডিবি, কখনো র‍্যাব, আবার কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করে।

জননিরাপত্তা ও প্রশাসনিক উদ্বেগ:

এই ঘটনা আবারো প্রমাণ করে যে, রাজধানীতে আইনের পোশাক বা পরিচয় এখন অপরাধের ঢাল হয়ে উঠছে। এটি শুধু একটি ডাকাতি নয়, বরং জনগণের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত।

আমরা প্রশাসনের ত্বরিত অভিযানকে সাধুবাদ জানাই, তবে একইসাথে এই চক্রের মদদদাতা ও মাফিয়া কানেকশন খুঁজে বের করা জরুরি। এক্ষেত্রে অপরাধীদের সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক ধ্বংস না করা পর্যন্ত জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।

১. অবশিষ্ট টাকা উদ্ধার ও ভিকটিমদের পূর্ণ ক্ষতিপূরণ।
২. ডাকাত সর্দার মিজানসহ চক্রের বিরুদ্ধে চার্জশীট দ্রুত গঠন।
৩. ‘ডিবি’ পরিচয় দিয়ে অপরাধ করাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার সমতুল্য হিসেবে বিচার করা।
৪. নকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে চলমান অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ নজরদারি ও আইন সংস্কার।