তামান্না-জুলাইয়ের সিংহিনী, বিকল্প রাজনীতির মুখোশ উন্মোচনের প্রতীক

নবজাগরণ রিপোর্ট :
তামান্না-এই নামটি এখন আর শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের নয়, পুরো বাংলাদেশের দ্রোহী প্রজন্মের এক প্রতীক। সেদিন গরম রোদে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল তুলে তামান্না যখন গর্জে উঠেছিল-

“কে এসেছে, কে এসেছে?
পুলিশ এসেছে, পুলিশ এসেছে।
কি করছে, কি করছে?
স্বৈরাচারের পা চাটছে, স্বৈরাচারের পা চাটছে।”
তখন কাঁপছিল মাঠ, কাঁপছিল রাষ্ট্রের মূলভিত্তি।
সে মুহূর্তে জনগণের রক্তে লেখা হয়েছিল এক নতুন রাজনৈতিক শুদ্ধতার ম্যানিফেস্টো।

আজ যখন বিকল্প রাজনীতির নাম করে কেউ কেউ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সংলাপ শিখে শিখে ব্যানার ঝুলিয়ে বিপ্লবের মালিকানা নিতে চায়, তখন তামান্নারা নীরবে তাদের ঘরে ফিরে যায়। তারা লাইভে আসে না, তারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার হয় না, তারা উপদেষ্টা কমিটিতে ঢুকে দল গঠনের খেলায় অংশ নেয় না।

তামান্নারা বিক্রি হয় না। তামান্নারা প্রস্তুত থাকে।
মাঠের বিপ্লব বনাম মিডিয়ার বিপ্লব
জুলাইয়ের আন্দোলন ছিল নিচ থেকে উঠে আসা এক জাগরণের বহিঃপ্রকাশ। ঠাকুরগাঁওয়ের তামান্না, রংপুরের সাজ্জাদ, বরিশালের রাসেল, নোয়াখালীর ইমন, ঢাকার রাফি, খিলগাঁওয়ের শিমুল-এরা কেউ রাজনীতির ‘প্রডাক্ট’ ছিল না।
এরা ছিল স্বপ্ন দেখা মানুষ, যার হাতে লাঠি ছিল না, ছিল চেতনার আগুন।
যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলেছিল:
“এই রাষ্ট্র ভাঙতে হবে, নতুন রাষ্ট্র গড়তে হবে।”

কিন্তু বিপ্লবের মাঝপথে হঠাৎ করেই হ্যাংলা কিছু মিডিয়া-পরিচিত মুখ এসে বললো, “আমরা এখন থেকে ট্রানজিশন সরকার চালাবো। আমরা উপদেষ্টা, আমরা রচয়িতা, আমরা স্বপ্নের আর্কিটেক্ট।”
আর আমরা দেখলাম-যে তামান্না সেদিন পুলিশের সামনে দাঁড়িয়েছিল, সে নেই প্রেস কনফারেন্সে, নেই নিউজফিডে, নেই ট্রাস্ট গঠনে।

চেতনার বাণিজ্য ও বিপ্লবের প্রহসন
তামান্না চেতনাকে বেচে দেয়নি।
সে July 1-এর গৌরব নিয়ে হুইসেল বাজায়নি। সে পোস্টার ছাপায়নি নিজের মুখ দিয়ে।
আর কিছু কিছু লালপায়া “সজ্জাদ”-যারা স্লোগান ছেড়ে এখন রিসোর্টে বসে উপদেষ্টার ট্যাগ লাগিয়ে বলছে, ‘আমরাই রূপান্তর করবো রাষ্ট্র’-তাদের দিকে চেয়ে আমরা হাসি না কাঁদি বুঝি না।

তামান্নারা রাষ্ট্র চায়-মানুষের জন্য।
তারা রাষ্ট্র সংস্কারের নামে বিদেশি ফান্ড চায় না, মিডিয়ার বয়ান চায় না,
তারা চায় সংবিধান ভেঙে নতুন মানুষের রাষ্ট্র।

তামান্নারাই বিপ্লবের বিজয় এনে দেয়
কেউ তামান্নাকে ফলো করে না, তাকে স্ট্যাটাস দেয় না, তাকে টকশোতে ডাকে না। কারণ, সে বিক্রি হয় না। সে একা রিকশায় চড়ে ফিরে যায় ক্লাসে, সংসারে।
তবে আমরা জানি-যেদিন সত্যিকারের নতুন রাষ্ট্র গড়ে উঠবে, তার ভিত্তিতে থাকবে তামান্নার সাহস, গর্জন, আর চোখের আগুন।

এই বিপ্লব ক্যামেরার জন্য নয়, এই বিপ্লব ইউটিউবের জন্য নয়, এই বিপ্লব দেশের জন্য।
আর তাই তামান্নারাও থাকবে আমাদের হৃদয়ে,
নিঃশব্দে, কিন্তু অমর হয়ে।

নির্বিশেষে চূড়ান্ত কথা:
যারা রাষ্ট্রের হেফাজতে থেকে রাষ্ট্র বদলাতে চায়, তাদের প্রতারণা বুঝতে শেখো।
তামান্নাদের মতো সত্যিকারের বিপ্লবীদের পাশে দাঁড়াও।
এবার নতুন রাষ্ট্র চাই-বিকল্প উপদেষ্টার মুখোশ নয়।

www.thenabajagaran.com