বিশেষ প্রতিবেদন-নবজাগরণ:
“বিপ্লব এমনিতেই ঘটে না-তা বানাতে হয়!”
এই কথাটি আজ আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। আজ বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া সাহসী পোস্টে তিনি প্রকাশ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ নয়, বরং ছিল একটি ‘মেটিকুলাসলি ডিজাইনড’ বা নিখুঁত পরিকল্পিত রাজনৈতিক অপারেশন।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই স্বীকারোক্তি?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাধারণত ‘পরিকল্পনা’ শব্দটি নিন্দিত হয়, বিশেষত যখন তা শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাতের প্রেক্ষাপটে আসে। কিন্তু মাহফুজ আলম নতুন এক মাপকাঠি স্থাপন করলেন-যেখানে পরিকল্পনাকে তিনি বললেন ‘জনগণের চৈতন্যকে জাগ্রত ও সংগঠিত করার বৈপ্লবিক প্রক্রিয়া’।
তিনি লিখেছেন,
“যখন জনগণ নেতৃত্ব ও বক্তব্য পেয়ে যাবে এবং বিপ্লবের অবজেক্টিভ কন্ডিশন প্রস্তুত, তখন আর প্ল্যানের দরকার পড়ে না। কিন্তু তার আগে জনগণকে বিপ্লবী করে তোলা মেটিকুলাস ডিজাইন ছাড়া কীভাবে সম্ভব?”
এই বক্তব্য শুধু যুক্তিসঙ্গত নয়, বরং প্রগতিশীল ছাত্র-জনতার প্রতি একধরনের সম্মান ও রাজনৈতিক স্বীকৃতিও।
দুই পর্বে ভাগ করা অভ্যুত্থান: ইতিহাসের ডকুমেন্টেশন
মাহফুজ আলম ২০২৪ সালের আন্দোলনকে স্পষ্টভাবে দুইটি পর্বে ভাগ করেছেন:
প্রথম পর্ব (৫ জুন -১৮ জুলাই):
অভ্যুত্থানের ‘পটভূমি ও নেতৃত্ব’ গঠনের সময়। তিনি এটাকে ‘মেটিকুলাসলি ডিজাইনড’ বলে আখ্যা দেন। এখানে রাজনৈতিক স্লোগান, বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা, সাংগঠনিক প্রস্তুতি, এবং জনগণের চৈতন্য জাগরণে নিরবিচারে শ্রম দিয়েছেন একঝাঁক তরুণ নেতৃত্ব।
দ্বিতীয় পর্ব (১৯ জুলাই – ৫ আগস্ট):
ছাত্র-জনতার সরাসরি অংশগ্রহণ, প্রাণদানের মাধ্যমে অভ্যুত্থান সফল হয়। এই অংশের কৃতিত্ব তিনি তুলে দিয়েছেন সাধারণ ছাত্র-জনতার হাতে-যারা রক্তে লিখেছে ২০২৪-এর গণতন্ত্রের দাবি।
বিদেশি শক্তির প্রশ্নে স্পষ্টতা ও তুলনা
মাহফুজ আলম স্পষ্ট বলেন,
“৩ তারিখের ১ দফা ঘোষণার আগে জাতিসংঘের বক্তব্য ছাড়া বিদেশি বা সামরিক শক্তির বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা ছিল না।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন ১৯৬৯, ১৯৭১ কিংবা আগরতলা ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপট-যেখানে বিদেশি সংযোগ থাকা সত্ত্বেও জাতির শ্রদ্ধা থেকে বাদ যায়নি নেতৃত্ব। তাহলে কেন আজকের প্রজন্মকে দোষারোপ করা হবে?
নেতৃত্ব ও দায়বদ্ধতার প্রশ্নে সরাসরি অবস্থান
সবচেয়ে সাহসী বক্তব্য ছিল এটা
“২ আগস্ট মধ্যরাতে অভ্যুত্থান সামরিক মোড়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, যা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব ঠেকাতে পেরেছিল।”
এই স্বীকারোক্তি থেকে পরিষ্কার: ২০২৪-এর আন্দোলন ছিল জনগণের, নেতৃত্ব ছিল রাজনৈতিক ও আদর্শিক, এবং তা ছিল সামরিক কর্তৃত্বের হাতে তুলে না দেওয়ার একটি সচেতন প্রয়াস।
বিপ্লব মানেই নেতৃত্ব, জনতা আর লক্ষ্যভেদী পরিকল্পনা
মাহফুজ আলম এক দুঃসাহসিক প্রশ্ন তুলেছেন-
“যদি শেখ মুজিব, ভাসানী, সিরাজ শিকদারদের ভুলসহ গর্ব করতে পারি, তাহলে নতুন প্রজন্ম মেটিকুলাস ডিজাইন করে হাসিনাকে সরালে গর্ব কেন করবে না?”
এটাই আজকের আসল প্রশ্ন।
এটাই আজকের সাহসিকতা।
এটাই ইতিহাসের দাবি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ইতিহাসের লড়াই এখন শুধুই নৈতিক নয়-এটা তথ্য ও প্রমাণের জায়গা থেকেও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। মাহফুজ আলমের এই সাহসী পোস্ট শুধু রাজনৈতিক ক্যানভাসে আলোড়ন তোলে না, এটি ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও প্রজন্মের জন্য পথনির্দেশ হয়ে উঠতে পারে। এখন প্রয়োজন এই ইতিহাসের সংগঠিত দলিলীকরণ।
“বিপ্লব যদি পরিকল্পিত না হয়, তা কখনোই জনগণের হয়ে সফল হতে পারে না।” নবজাগরণ
বিস্তারিত জানতে পড়ুন :
www.thenabajagaran.com
#মাহফুজআলম #জুলাইগণঅভ্যুত্থান #বিপ্লবেরপরিকল্পনা #নেতৃত্ব #ছাত্রজনতা #ব্রেকিংনিউজ #নতুনবাংলাদেশ #রাজনৈতিকস্বীকৃতি
মাহফুজ আলম, তথ্য উপদেষ্টা, অন্তর্বর্তী সরকার, গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪, সুপরিকল্পিত বিপ্লব, ছাত্র-জনতা, নেতৃত্ব, সামরিক হস্তক্ষেপ প্রতিহত, বাংলাদেশ রাজনীতি