বিশেষ প্রতিবেদন-নবজাগরণ রিপোর্ট ডেস্ক:
রাজধানীর বনানীর অভিজাত হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার-এ মঙ্গলবার রাতের দৃশ্য ছিল যেন কোনো মাফিয়া সিনেমার বাস্তব প্রতিচ্ছবি। ভিআইপি রুম না পাওয়ার “অপরাধে” বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের বনানী থানা আহ্বায়ক মনির হোসেনের নেতৃত্বে সংগঠিত হয় নারকীয় হামলা, যেখানে ভাঙচুর, নারী লাঞ্ছনা ও খোলামেলা লুটপাট হয় অকপটে।
ভিডিওতে ভাইরাল: নারীর ওপর হামলা, আতঙ্কে সিঁড়ি বেয়ে নামছেন অন্যরা!
ঘটনার ভিডিও ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। এতে দেখা যাচ্ছে, শাড়ি পরিহিতা এক নারী আতঙ্কে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে গেলে এক হামলাকারী তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আরেক নারীকে লাঞ্ছিত করা হয় প্রকাশ্যে। এর মধ্যেই হামলাকারীরা রেস্টুরেন্টের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে, সিসিটিভি মনিটর ও ল্যাপটপ নষ্ট করে, এবং টাকার ক্যাশ কাউন্টার ও স্টোররুম লুট করে নেয়।
মামলার তথ্য: নাম উল্লেখসহ ৩০ জন আসামি:
হোটেলের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিক বনানী থানায় দায়ের করা মামলায় মনির হোসেনসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা-
৭০ হাজার টাকা নগদ টাকা ক্যাশ থেকে লুট করে
প্রায় ৫ লাখ টাকার বিদেশি মদ স্টোর থেকে নিয়ে যায়
চেয়ার, টেবিল, টিভি, মনিটর, ল্যাপটপ, সিসিটিভি সহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ভাঙচুর করে
হুমকি দিয়ে রেস্টুরেন্ট ত্যাগ: পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ!
হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় স্পষ্ট হুমকি দেয়“পুলিশে অভিযোগ করলে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে।” প্রশ্ন উঠেছে: এত বড় ঘটনা ঘটার পরও তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ কেন দৃশ্যত নিষ্ক্রিয় ছিল? রাজধানীর সবচেয়ে অভিজাত এলাকার নিরাপত্তা যদি এমন হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রশ্ন
এই মনির হোসেন কার আশীর্বাদে এত দম্ভে ভরা?
যুবদলের নেতৃত্বে যদি নারীর ওপর হামলা হয়, তাহলে তাদের ‘গণতন্ত্রের’ চেহারা কেমন হবে?
এদের জন্য কি বিএনপি দায় এড়াতে পারে?
আজকের বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিচয়ের ক্ষমতা যদি আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থান তৈরি করে দেয়, তাহলে আমরা কোন রাষ্ট্রে বাস করছি? যেখানে VIP না হলে আপনাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা যেতে পারে, যেখানে নারী নিরাপত্তা রাজনৈতিক দস্যুতার বলি হয়?
বিচার চাই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির:
এই ঘটনায় শুধু মামলায় নাম থাকা নয়, চাই দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া এসব রাজনৈতিক মাস্তানি, নারী নির্যাতন ও প্রকাশ্য লুটপাট কখনও বন্ধ হবে না। সমাজের সর্বস্তরে এর নিন্দা জানাতে হবে, এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের নেতা-কর্মীদের লাগাম ধরতে হবে।