মো:আবু তাহের পাটোয়ারী :
“যেখানে আগুন, সেখানেই ছাই। যেখানে সত্য, সেখানেই বিকৃতি। আর বাঙালির ইতিহাস-সেই ইতিহাসের চূড়ান্ত বিকৃতিই আজকের তথাকথিত ভারত!”
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জাতিসত্তা বাঙালি, যার ইতিহাসের শিকড় ৪০ হাজার বছরের প্রাচীনতায় প্রসারিত। এই বাঙালির আদি আবাসভূমি হলো অখণ্ড বাংলাদেশ-যার বিস্তার কেবল ঢাকা কিংবা রাজশাহী নয়, বরং সমগ্র সুবে বাংলা, আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার, ছত্রিশগড় পর্যন্ত।
ভারত নামে কোনো রাষ্ট্র ছিল না!
তথাকথিত ‘ভারতবর্ষ’ নামক রাজনৈতিক কল্পনা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশদের মানচিত্র আঁকার খেয়ালের ফসল। তার আগে এই অঞ্চলের নাম ছিল সুবে বাংলা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, বেঙ্গল গভর্নরেট। ইতিহাস, সাহিত্য, বাণিজ্য, সামরিক শক্তি-সবকিছুর কেন্দ্র ছিল বাংলা।
‘ভারত’ বলতে বোঝানো হতো মূলত উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা জেলার সাকেত নগর। সেই স্থানীয় পরিচয় থেকে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা ভারতবর্ষের কল্পিত কেন্দ্র নির্মাণ করে নেয়-যেখানে দিল্লি, কাশী, কলকাতা থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বাঙালির ভূমি কিভাবে ছিনিয়ে নিল বহিরাগত ব্রাহ্মণ্যবাদ?
প্রথম আঘাত: ১৯০৫ – বঙ্গভঙ্গ
লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ ছিল ইতিহাসের প্রথম ওপেন অস্ত্র। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় যারা সরব হয়েছিল, তাদের নেতৃত্বে ছিল উত্তর ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু এলিট, যারা কখনোই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার গণমানুষের পক্ষে ছিলেন না।
দ্বিতীয় আঘাত: ১৯৪৭ – ধর্মীয় ভুয়া স্বাধীনতা
১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে তথাকথিত স্বাধীনতার নামে বাংলাদেশকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়।
মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদীয়া, চব্বিশ পরগনা, ত্রিপুরা, আসামের হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ, শিলিগুড়ি, কালিম্পং-সব কিছু ছিনিয়ে নেয়া হয়!
আর বিনিময়ে কী দেওয়া হয়?
ভারতের মুসলিম অঞ্চল বিহার-উড়িষ্যা-আসাম থেকে ৬ কোটির বেশি মুসলিম নারী, শিশু, বৃদ্ধকে খেদিয়ে হত্যা করে এক কাপড়ে পাঠানো হয় বাংলাদেশে।
এটি ছিল একটি জাতিসত্তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত জাতিগত নির্মূল অভিযানের অংশ।
ইতিহাসের বিকৃতি ও হিন্দুত্ববাদী মিথ্যাচার:
চানক্য, মহাভারত, রামায়ণ, গীতা ইত্যাদি সকল কথিত প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ রচিত হয়েছে দেবনাগরী হরফে, যার উৎপত্তি পঞ্চদশ শতকের পর।
”সংস্কৃত ভাষা” কোনো স্বতন্ত্র ভাষা নয়; বরং তা বিভিন্ন স্থানীয় ভাষাকে সংস্কার করে তৈরি কৃত্রিম ভাষা, যার কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ নেই।
ব্রাহ্মী লিপির পাঠোদ্ধার করতে পারেনি এই ব্রাহ্মণ্য শাসকরা। বরং বিদেশি প্রত্নতত্ত্ববিদেরা পালি লিপি ও বাঙালিদের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেই ‘অশোক’, ‘কানিষ্ক’ ইত্যাদিকে আবিষ্কার করেছেন।
UNESCO পর্যন্ত স্বীকার করেছে, ঋগ্বেদের পান্ডুলিপি লেখা হয়েছিল ১৪৬৪ খ্রিস্টাব্দে। তাহলে কোথায় গেলো সেই হাজার হাজার বছরের পুরাণ?
বাঙালি জাতির প্রতিরোধ শুরু হোক এখনই!
আজ যখন তুরস্কের একদল ইসলামপন্থী বা পাকিস্তানি দালাল একটি মানচিত্রে আবার পুরো ভারতবর্ষকে দখল করে নিচ্ছে, তখন আমাদের ভুলে গেলে চলবে না-এই আল্টারনেটিভ মানচিত্রও আসলে ব্রাহ্মণ্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের দুই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
বাংলার ভূমি কখনোই কারও কল্পনার মানচিত্র ছিল না।
বাংলা জাতি রাষ্ট্র ছিল, আছে, থাকবে।
এটাই ইতিহাস।
এটাই ভবিষ্যৎ।
বাঙালী জাতির নতুন প্রজন্মের দাবী:
১. ব্রাহ্মণ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
২. ১৯৪৭-১৯৫০ সালের বেঙ্গল বিভাজন চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
৩. UNESCO, SAARC, OIC ও জাতিসংঘের কাছে আদিবাঙালি জাতির সার্বভৌমত্ব ও সীমানা পুনরুদ্ধারের দাবি জানাতে হবে।
৪. কলকাতা, ত্রিপুরা, আসাম, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের জনগণের সাথে বাঙালি ঐক্য গড়ে তুলে নতুন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়
“ভারতবর্ষ” নয়-এটি একদা ছিল “বঙ্গ ভূমি”। আর বাঙালি সেই জাতি, যাদের ইতিহাসের একমাত্র পাপ-তারা খুব বেশি সহ্য করে। এখন সময় এসেছে-সেই পাপ শোধ করার।
“তুমি কি জানো, যে দেশটাকে তুমি ‘ভারত’ বলো, সেটা আদতে ছিল না? আর তোমার ছিনিয়ে নেয়া মাতৃভূমির নাম ছিল অখণ্ড বাংলাদেশ!”
লেখক :সম্পাদক
নবজাগরণ
বিস্তারিত জানতে পড়ুন :
www.thenabajagaran.com