মো: আবু তাহের পাটোয়ারী:
সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে যাদের মুখে ‘সংস্কার’ ‘স্বচ্ছতা’ ‘দায়িত্বশীলতা’র বুলি শোনা যাচ্ছিল, তারা এখন গণক্ষমার আকুতি জানাচ্ছে-কেন? কারণ এনবিআরের আন্দোলন যে আদৌ কোনো জনকল্যাণভিত্তিক ছিল না, তা একে একে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এই আন্দোলন ছিল এক গভীর ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ-যেখানে কিছু উচ্চপদস্থ রাজস্ব কর্মকর্তা নিজেদের দায়মুক্তি নিশ্চিত করতে ‘সংস্কার’ শব্দকে মুখোশ বানিয়েছিলেন। অথচ সরকার যখন সত্যিকারের সংস্কারে হাত দিলো-ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও কর ফাঁকি রোধে দুদককে মাঠে নামালো-তখনই এই ‘সংস্কারবাদীরা’ মুখ লুকিয়ে পালাচ্ছে। কেউ মোবাইল বন্ধ করছে, কেউ আত্মগোপনে যাচ্ছে, কেউ আবার বোনকে এনে বলছে, “চাকরি গেলে ভয় পেও না।”
আন্দোলন কি ছিল আদৌ ন্যায়সঙ্গত?
এনবিআরের এই তথাকথিত ‘সংস্কার আন্দোলন’ এমন এক সময় করা হয়েছিল, যখন নতুন সরকার রাজস্ব ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে মরিয়া। জুন মাসে কাস্টমস ও বন্দরে অচলাবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে। অথচ এই একই সময় কিছু কমিশনার ও কর কর্মকর্তা করদাতার কাছ থেকে ঘুষ না পেয়ে মিথ্যা মামলা দিয়েছে-এই অভিযোগও রয়েছে।
এদের হাতে ছিল ‘ক্ষমতা’, আর সেই ক্ষমতাকে হাতিয়ার বানিয়ে তারা সরকারকে কোণঠাসা করতে চেয়েছিল।
এটা কি কেবল পেশাগত অসন্তোষ?
না। এটা রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রিত বিদ্রোহ।
প্রশ্ন একটাই-কারা ছিল এই বিদ্রোহের পেছনে?
তথ্য বলছে, এনবিআরের অন্তত ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে, যাদের অনেকে অতীতে রাজনৈতিক সরকারের ছত্রছায়ায় অপকর্ম করলেও প্রশাসনের শাস্তি পাননি। এবার বিপ্লবী সরকারের টার্গেটিং-এ পড়ে তারা মুখে ‘ক্ষমা’, ভেতরে ভয়, আর বাইরে ষড়যন্ত্রে নেমেছে।
রাজস্ব ব্যবস্থাকে ধরাশায়ী করার ষড়যন্ত্র চলছে?
একটি সত্য এখন স্পষ্ট:
বদলি, বরখাস্ত, অবসর-এসব দেখে যারা আন্দোলনের পক্ষ থেকে সরে আসছেন, তারা নিজেরাই জানেন তারা কতটা দাগি। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক ইস্যুতে রূপান্তর করার চেষ্টা চলছে। অভিযোগ আছে, অতীতে কর আদায়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হেনস্তা করা হয়েছিল এবং সেই ঘুষের টাকা গিয়েছিল ‘উপরে’।
এই চক্রটি নতুন সরকারকে বার্তা দিতে চেয়েছিল:
“আমাদের ছাড় না দিলে রাজস্ব ব্যবস্থা অচল করে দেবো!”
এই সরকার কি ভয় পাবে?
না। কারণ এই সরকার এসেছে দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রের মডেল তৈরি করতে।
শুধু এনবিআর নয়, রাজস্ব, ব্যাংক, কাস্টমস, বিআরটিএ, ভূমি অফিস, পাসপোর্ট অফিস-যেখানে ঘুষ-দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে, সেখানেই শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান।
এনবিআরের এই সংকট তাই কেবল একটি দপ্তরের নয়-এটি রাষ্ট্রের শুদ্ধিকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ।
এখন করণীয় কী?
১. দুদকের অনুসন্ধান যেন সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও তথ্যনির্ভরতার ভিত্তিতে হয়
২. নিরপরাধ কর্মকর্তাদের যেন হয়রানি না হয়
৩. যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা, তাদের পুনর্বাসন ও উৎসাহ প্রদান
৪. সমস্ত কাস্টমস অফিস ও রাজস্ব শাখাগুলোতে স্বাধীন অডিট টিম গঠন
৫. ‘গণক্ষমা’ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে মীরজাফরদের
জনগণের দাবী চিরমুক্তি দুর্নীতি মুক্ত নির্ভেজাল বাংলাদেশ!
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান কেবল সরকার বদলের বিপ্লব নয়,
এটি ছিল রাষ্ট্র কাঠামোকে ঢেলে সাজানোর বিপ্লব।
সেই বিপ্লবের ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে এই ‘গণক্ষমা’ চাওয়া দুর্নীতিপরায়ণ ঘুষখোরদের দল।
তারা চায় ভুলে যাই, তারা চায় ক্ষমা পেয়ে ফের রাজস্ব লুণ্ঠনে ফিরতে।
কিন্তু না, এবার মীরজাফরেরা ক্ষমা পাবে না।
এবার জনগণই চায় জবাবদিহি।
এবার ইতিহাস রচিত হবে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধি অভিযানে।
যদি আপনি বিশ্বাস করেন, এই রাষ্ট্রকে নতুন করে গড়তে হলে ঘুষের ভিত্তির ওপর গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙতে হবে, তবে এই লেখা শেয়ার করুন।
লেখক:সম্পাদক, নবজাগরণ।