“আপু, আমার রুমের সবাই চলে গেছে, আমি যাই নাই”-

নবজাগরণ রিপোর্ট :
জুলাইয়ের সেই অবিস্মরণীয় দিনগুলোতে যে আগুন জ্বলে উঠেছিলো…
জুলাই মাস, বাংলাদেশে এখন আর কেবল বর্ষার সময় নয়। এটি হয়ে উঠেছে একটি চেতনার মাস, একটি বিদ্রোহের মাস, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে-প্রাণের বিনিময়ে জন্ম নেয়া নবজাগরণের এক মহাকাব্যিক অধ্যায়।

সে সময় দেশের তরুণ-তরুণীরা যখন দিশেহারা, যখন চারদিকে ভারতীয় আধিপত্যের রক্তচক্ষু, যখন তথাকথিত জাতীয়তাবাদের আড়ালে জুড়ে বসা শোষণের নতুন মুখ, তখন “আপু, আমার রুমের সবাই চলে গেছে, আমি যাই নাই”-এই একটি বাক্য যেন পুরো একটি প্রজন্মের সম্মিলিত চেতনার চিৎকার হয়ে দাঁড়ায়।

এই বাক্যটা শুধু কোনো এক ছাত্রীর কণ্ঠ নয়; এটি ছিল এক আদর্শিক অবস্থান। যখন ক্যাম্পাস খালি হচ্ছিল, হলে হলে গুম আর গ্রেপ্তারের আতঙ্ক, তখনও কিছু মানুষ ছিলেন, যারা বলেছিলেন-আমরা যাবো না, আমরা দাড়াবো, আমরা লড়বো।

একদফা নয়, একমাত্র মুক্তির পথ!
এইসব তরুণ-তরুণীরা বুঝেছিলেন, কেবল নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিবর্তন হয় না। যে রাষ্ট্রের ভেতরে বিচারহীনতা, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ বিদেশিদের হাতে, সংবিধান জনগণের নয় বরং কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে লেখা—সেই রাষ্ট্রকে শুদ্ধ করতে হলে চাই একদফা আন্দোলন: ভারতীয় হস্তক্ষেপ ও শোষণের অবসান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং নতুন সংবিধান রচনা।

এই দাবি নিয়ে যারা রাজপথে দাঁড়িয়েছিল, তাদের সবাই তখনকার প্রথাগত মিডিয়ায় ছিল “বিতর্কিত”, “উগ্র”, “অপরিণত”। কিন্তু আজ ইতিহাস তাদের প্রমাণ করেছে-তারা ছিল সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা চিন্তক, সাহসী দেশপ্রেমিক।

জুলাই বিপ্লবের নারী নেতৃত্বের অনন্য ইতিহাস!
“আপু, আমি যাই নাই”—এই কণ্ঠ ছিল একটি নারীর। এই কথাটির মধ্যে লুকিয়ে আছে নারীর সাহস, নারীর চিন্তা, এবং রাজপথে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের নিঃশব্দ ইতিহাস। ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবে যে বিপুল সংখ্যক নারী হোস্টেল ফাঁকা করতে অস্বীকৃতি জানায়, যারা হলে হলে ব্যারিকেড তোলে, তারা আমাদের ইতিহাসে অনবদ্য একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে।

শহীদদের রক্তে লেখা ইতিহাস?
এ আন্দোলনের মূল্য ছিল রক্ত। সহপাঠী হারিয়েছি, ভাই হারিয়েছি, বোনদের গুম হতে দেখেছি। কিন্তু তবুও কেউ পিছু হটেনি। এদের মধ্যে কেউ কেউ নাম প্রকাশ করতে পারেনি, কেউ কেউ রাতের আঁধারে ‘মিসিং’ হয়ে গেছে। কিন্তু ইতিহাস তাদের নাম মনে রাখবে—কারণ তারা এক দানব রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল একফোঁটা ভয়ের ছায়া না রেখে।

যে বাংলাদেশ তারা চেয়েছিল…
তারা চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ-
যেখানে ভারতের আগ্রাসন থাকবে না,
যেখানে ছাত্রদের কণ্ঠরোধ নয় বরং তাদের অংশগ্রহণ থাকবে রাষ্ট্র গঠনে,
যেখানে রাষ্ট্র হবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও দেশীয় সংস্কৃতির ভারসাম্যপূর্ণ এক নতুন চুক্তি,
যেখানে দেশের সম্পদ থাকবে দেশের মানুষের হাতে।

বন্ধুরা, আজও যদি ভুলে যাই, কাল ইতিহাস ক্ষমা করবে না…
জুলাই বিপ্লব শুধুমাত্র রাজনৈতিক একটি ঘটনা নয়। এটি একটি মানবিক, নৈতিক ও আদর্শিক আন্দোলনের নাম। এই বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে—একটি রুমের সব মানুষ চলে গেলেও, একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে।

আজ সেই সাহসী কণ্ঠগুলোর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা, যারা জুলাই মাসে কেবল স্বপ্ন দেখেনি—সেই স্বপ্নকে বাস্তব করতে রক্ত দিয়েছিল, ঘর ছেড়েছিল, এবং জীবনকে বাজি রেখেছিল।

জয় হোক সেইসব “আমি যাই নাই” বলা সাহসী নারীদের, জয় হোক একদফা বিপ্লবের।

#জুলাই_বিপ্লব #একদফা_জনতার #আমি_যাই_নাই #নবজাগরণ