নবজাগরণ ডেস্ক:
“ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য নয়, রাষ্ট্রীয় অনাচারের মুখোশ টানার জন্যই আমি লড়েছি।”-শরীফ উদ্দিন (অঘোষিত ভাবনা)
একজন সাহসী দুর্নীতিবিরোধী যোদ্ধা, যিনি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির বেষ্টনী ভেদ করে জনগণের পক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, অবশেষে ফিরে এলেন। হাইকোর্ট বলেছেন, শরীফ উদ্দিনকে চাকরিতে ফিরিয়ে নিতে হবে। ফিরিয়ে দিতে হবে তার বকেয়া বেতন ও সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই রায় কেবল একজন ব্যক্তির পুনর্বাসন, নাকি রাষ্ট্রযন্ত্রের মিথ্যা, প্রতিশোধপরায়ণতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক চপেটাঘাত?
কে এই শরীফ উদ্দিন?
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রাম অফিসে থাকাকালে এমন সব দুর্নীতির খোঁচা দিয়েছিলেন, যেখানে হাত ছিল ক্ষমতাবান রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক চক্রের। কর্ণফুলী গ্যাস, ভূমি অধিগ্রহণ, এবং বড় প্রকল্প দুর্নীতির নথি তার হাতে ছিল।
তাঁর অনুসন্ধান থামাতে তাকে শুধু চাকরিচ্যুতই করা হয়নি, পরিবারসহ হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল!
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি, চট্টগ্রামের খুলশী থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন, যেখানে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আয়ুব খান চৌধুরী ও তার সঙ্গীদের নাম উল্লেখ করে হত্যার হুমকির অভিযোগ করেন। অথচ দুদক কী করেছিল? তাকে বরখাস্ত করেছিল ‘জনস্বার্থে’—যেটা ছিল মূলত ‘দুর্নীতির স্বার্থে’।
আদালতের রায়, কিন্তু সমাজের প্রশ্ন:
হাইকোর্ট বলেছে-
“শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতি বেআইনি। তাঁকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে এবং সব বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।”
কিন্তু আদালত কি বলেছে যে যারা তাঁকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছিল, তাদের বিচার হবে?
আদালত কি বলেছে যে যেসব দুর্নীতির তদন্তে শরীফ ছিলেন, তা পুনরায় চালু করতে হবে?
এই রায় ন্যায়বিচার না, এই রায় ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামের প্রতি সম্মান। কিন্তু মূল অপকর্মের বিচার তখনই হবে, যখন-
মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর মতো প্রাক্তন দুদক চেয়ারম্যানদের জবাবদিহি করা হবে,
আয়ুব খান চৌধুরীর মতো প্রভাবশালী আমলাদের বিরুদ্ধে তদন্ত আবার শুরু হবে,
এবং দুদক নামক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দুর্নীতির “সুপার এজেন্টদের” উন্মোচন করা হবে।
রাষ্ট্রযন্ত্র কাদের জন্য?
দুদক আইন অনুযায়ী, “জনস্বার্থে” চাকরিচ্যুতি একটি প্রশাসনিক ক্ষমতা। কিন্তু এই ক্ষমতা ব্যবহৃত হয়েছিল একজন দুর্নীতিবিরোধী অফিসারের বিরুদ্ধে, দুর্নীতিকে রক্ষা করার জন্য!
শরীফ উদ্দিন ছিলেন একজন Whistleblower-যিনি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির নেটওয়ার্ক ফাঁস করেছিলেন। অথচ বাংলাদেশে Whistleblower Protection Act থাকলেও, বাস্তবে তা দুর্নীতির পাহারাদারদের সুরক্ষা দেয়, সাহসীদের নয়।
বিপ্লব দরকার-নতুন প্রজন্মের দুদক চাই!
শরীফ উদ্দিনের লড়াই এই প্রমাণ দেয় যে, আইন ও প্রতিষ্ঠান কাগজে যতই সুন্দর হোক, নেতৃত্ব ও সাহস না থাকলে সেগুলো কেবল দমন-পীড়নের অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যদি সত্যিই দুর্নীতিমুক্ত দেখতে চাই, তাহলে চাই:
দুদকের পূর্ণ স্বাধীনতা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্তভাবে,
নতুন প্রজন্মের সাহসী অফিসার যারা শরীফ উদ্দিনের মতো তদন্ত করতে ভয় পাবেন না,
বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, যাতে দুর্নীতিবাজদের আস্তানায় আইন নয়, আগুন পৌঁছায়।
শরিফ উদ্দিন ফিরে এসে প্রমান করলেন আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়!
শরীফ উদ্দিন কেবল চাকরি ফিরে পাননি, তিনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিয়েছেন—
“যদি লড়ো, তবে জেতা যায়!”
এই জয় তাঁর একার নয়—সকল প্রতিবাদী মানুষের জয়, যারা রাষ্ট্রীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে।
তার এই ফিরে আসা যেন এক নতুন প্রজন্মের ডাক-
“ভয় নয়, লড়াই করো। ন্যায় একদিন ফিরবেই!”