আগে বিচার ও সংস্কার, পরে নির্বাচন: জুলাই বিপ্লবীদের ইতিহাসের সামনে অবিচল অবস্থান

নবজাগরণ ডেস্ক:১০ জুলাই ২০২৫
“খুনিদের বিচার ও কাঠামোগত সংস্কার না হলে কোনো নির্বাচন নয়”-এটাই ছিল নড়াইলের আকাশ কাঁপানো ঘোষণা। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের হুঁশিয়ারি আজ শুধু একটি দলের বক্তব্য নয়,বরং এটি জুলাই বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি পরিষ্কার চ্যালেঞ্জ।

জুলাই ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান কেবল রাস্তায় নামার বা ক্ষমতার জন্য আন্দোলন নয়—it was a social contract in fire and blood. সেই আন্দোলনে রাষ্ট্রবিরোধী দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল সাধারণ মানুষ, ছাত্র, তরুণ, চাকরিপ্রত্যাশী, দিনমজুর। কিন্তু এই আন্দোলনের শহীদদের হত্যাকারীদের বিচার হয়নি, বরং তারা এখনো রাজনীতির নিয়ন্ত্রক, রাষ্ট্রের মূল বটগাছের শেকড়।

আজ নাহিদ ইসলাম বললেন-
“আগে খুনিদের বিচার করতে হবে,তারপরই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। এর ব্যতিক্রম হলে গণ-আন্দোলন আরও বেগবান হবে।”
এই বক্তব্যের পেছনে আছে একটি গভীর ইতিহাস ও ন্যায্য রক্তঝরা তর্ক।

কেন আগে বিচার ও সংস্কার, পরে নির্বাচন?
১. ক্ষমতা হস্তান্তর নয়, কাঠামো বদল জরুরি:
নির্বাচনের মাধ্যমে এক দলের পতন ও অন্য দলের উত্থান হলে ক্ষমতার পালাবদল হয়-কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, দমননীতি, দলীয়করণ, পুলিশি বর্বরতা থেকে কোনো মুক্তি আসে না। ইতিহাস বলে,১৯৯১ হোক বা ২০০৮-নির্বাচনের নামে যত সরকার এসেছে,কেউ বিচার দেয়নি, বরং খুনিদের পুনর্বাসন করেছে।

২. জুলাই বিপ্লবের রক্তের দায়:
গত বছরের জুলাইয়ে যারা নিহত হয়েছেন, যারা গুম-গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে, কারো সন্তান, ভাই,স্বামী রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে মারা গেছেন-তাদের কি কেউ আজ জবাব দেবে না? এই প্রশ্ন বুকে নিয়ে কিভাবে নির্বাচন হয়?

৩. নির্বাচনের মাধ্যমে অপরিবর্তিত নরক:
একটি কাঠামোগতভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত, দমনপন্থী, বিচারহীন রাষ্ট্রে যেকোনো নির্বাচন মানে, সেই ব্যবস্থারই নতুন মুখ এনে দেওয়া। চিকিৎসা নয়, মেকআপ।

জুলাই সনদ: জাতির নতুন ঘোষণাপত্র
এনসিপি আহ্বায়ক আজ বললেন-
“আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাই। এজন্য ৩ আগস্ট ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে।”
এই সনদ শুধুই রাজনৈতিক ইশতেহার নয়, এটি একটি বিকল্প রাষ্ট্রগঠনের ডাক। এই সনদে থাকবে:

সার্বজনীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা,
নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা,
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর জবাবদিহিতা,
শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও বাসস্থানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি,
দলীয়করণমুক্ত প্রশাসন,
জবাবদিহিমূলক দুর্নীতিবিরোধী কাঠামো।

নির্বাচন নয়, বিপ্লবই উত্তর
নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, তাসনীম জারা-তাদের কণ্ঠে আজ রাষ্ট্রবিরোধী নয়,বরং রাষ্ট্ররূপান্তরের ডাক। জনগণের এই আত্মত্যাগ যেন ক্ষমতালোভীদের নতুন খেলার মাঠ না হয়।

এই আন্দোলনকে দমন করা যাবে না,পেছনে নেওয়া যাবে না-কারণ এটি জনগণের রক্তে লেখা।
“আগে সংস্কার,পরে নির্বাচন”-এটা শুধু দাবি নয়,
এটা একটা শর্ত। ইতিহাসের সামনে,শহীদদের সামনে,আগামী প্রজন্মের সামনে।

তথ্য ও চেতনাবাহিত প্রতিবেদন-নবজাগরণ মিডিয়া-২০২৫
পোস্টের নিচে হ্যাশট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে: #জুলাইবিপ্লব #সংস্কার_নাহলে_নির্বাচন_নয় #খুনিদেরবিচার #জুলাইসনদ #নাহিদইসলাম #নবজাগরণ #জনতারআন্দোলন