মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে গোটা দেশ যেন এক ভয়াল ছায়াপথে হেঁটে চলেছে। যেদিকে চোখ যায়, শুধুই নোংরামি, চাঁদাবাজি, খুন, গুম, নির্যাতন আর বিচারহীনতার রক্তাক্ত ছাপ। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে এখন ভয় নয়, মৃত্যুই বাস্তবতা। লুটেরা শ্রেণি যখন রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর চড়ে বসে, তখন মানুষের জানমালের নিরাপত্তা রীতিমতো উপহাসে পরিণত হয়।
তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিকটি হলো-এই সময়ের খুনি আর স্রেফ খুনি নেই, তারা এখন “ভিডিওগ্রাফার”। মানুষ খুন করছে, আবার নিজেরই মোবাইলে সেটি রেকর্ড করছে, সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করছে, যেন এটি একটি নৈরাজ্যের ট্রেইলার-যেখানে মৃত্যু আর নৃশংসতা নিছক বিনোদন।
এই প্রবণতা শুধু জঘন্য নয়, এটি এক আতঙ্কজনক সামাজিক মানসিক বিপর্যয়ের নির্দেশ করে।
মিটফোর্ডের খুন: বিবেকের মৃত্যু?
ঢাকার মিটফোর্ডে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে একজন নির্দোষ মানুষ খুন হয়েছেন, কারণ তিনি চাঁদা দেননি। এটা শুধু খুন নয়-এটা রাষ্ট্র, সমাজ, আইন, এবং বিবেককে প্রকাশ্যে গুলি করে দেওয়া।
আরেকটি ভয়াবহ দিক হলো, আশপাশের মানুষ দল বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিল। কেউ বাধা দেয়নি। কেউ চিৎকার করেনি। কেউ পুলিশের কাছে ছুটে যায়নি। সবাই ভিডিও করেছে। যেন এটি কোনো স্টেজড থ্রিলার। অথচ এ যুগে ভিডিও-প্রমাণ থাকার পরও বিচার হয় না! তাহলে ভিডিওর অর্থ কী?
এই ‘ভিডিও সংস্কৃতি’ আজ আমাদের মানবিক বোধকে ভোঁতা করে দিয়েছে। আমরা মৃত্যু দেখি, তামাশা করি, শেয়ার করি-কিন্তু প্রতিবাদ করি না।
আমরা সংস্কার চাই-কিন্তু আগে বিবেকের সংস্কার দরকার!
আমরা রাষ্ট্রের আইনি সংস্কার, রাজনৈতিক সংস্কার, প্রশাসনিক সংস্কারের কথা বলি। কিন্তু সমাজের সবচেয়ে জরুরি যেটি, তা হলো-বিবেকের সংস্কার।
যে জাতি প্রকাশ্য খুনের সাক্ষী হয়ে চুপ থাকে, তার পক্ষে উন্নয়ন সম্ভব নয়-সেখানে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, আইন, কিছুই টিকবে না।
এইভাবে আর কত?
একটি মানুষ শুধু চাঁদা না দেওয়ার কারণে খুন হবে?
একটি মানুষ শুধু মত প্রকাশ করায় গুম হয়ে যাবে?
একটি শিশু বিচার চেয়ে বীর্যবান মাফিয়াদের হাতে ধর্ষিত হবে?
এগুলো কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়-এগুলো রাষ্ট্রব্যবস্থার চূড়ান্ত নৈতিক পতনের প্রতীক। আজ আমরা এমন একটি সমাজে বাস করছি যেখানে খুনিকে ভিডিও করার জন্য ধন্যবাদ দেওয়া হয়, কিন্তু খুন থামাতে কেউ এগিয়ে আসে না!
সমাজ কি দানবের খাঁচায় পরিণত হয়েছে?
আমরা চেয়েছিলাম গণতন্ত্র-পেয়েছি গ্যাংতন্ত্র।
আমরা চেয়েছিলাম মানবাধিকার-পেয়েছি হত্যার লাইভস্ট্রিম।
আমরা চেয়েছিলাম বিবেক-পেয়েছি বিনোদন।
এত সীমা ছাড়িয়ে গেছে যে প্রতিবাদ করতেও ঘৃণা লাগে! কিন্তু তবুও বলতেই হবে: এই নৈরাজ্য চলতে পারে না! খুনিকে আইনের আওতায় আনতেই হবে।
এই ঘটনার শেষ নয়-এ হোক শুরু!
আজকের এই লেখা একটি শেষের কথা নয়, এটি এক নতুন শুরুর ডাক। যারা এখনো বিবেকবান, তারা জেগে উঠুন।
প্রতিটি লাইভ খুন, প্রতিটি নির্যাতনের ভিডিও যেন আমাদের আত্মার গায়ে আগুন লাগায়। প্রতিবাদ করুন, লিখুন, পথে নামুন-আর যদি কিছুই না পারেন, অন্তত খুনের ভিডিও শেয়ার করবেন না! আপনার শেয়ারে একটি খুনি বীর হয়। একজন নির্দোষের মৃত্যু হয় আবার।
সাহস থাকলে দাঁড়ান। নইলে চুপ করে থাকুন, কিন্তু গুম হত্যাকে বিনোদন বানাবেন না;অন্যদের অসুস্থ করবেন না?শিশুদের ক্ষতি করবেন না!।
আজ মানবতার মৃত্যু হয়েছে-আগামীকাল হয়তো আপনি থাকবেন সেই লাইভ ভিডিওর কেন্দ্রে।
শেয়ার করুন অনলাইনে পড়তে:
www.thenabajagaran.com