মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
সন্ত্রাস কখনোই হঠাৎ করে জন্ম নেয় না। এটি বিকশিত হয় নীরবতা থেকে। আমাদের চারপাশে যখন কেউ কাউকে রাস্তায় হেনস্থা করে, যখন কোনো নারী নিগ্রহের শিকার হয়-তখন ভয়ে, লজ্জায়, বা নিছক কৌতূহলে মোবাইল ক্যামেরা বের করি আমরা, প্রতিরোধ নয়। আর এই সংস্কৃতিই জন্ম দেয় মব সন্ত্রাসের। কিন্তু এর মাঝেই এক অজানা সাহসী উঠে দাঁড়ায়। জনতার চোখ রাঙানিকে পাত্তা না দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্যাতকের ওপর-প্রতিরোধ গড়ে তোলে, প্রতিবাদের স্পার্ক জ্বেলে দেয়।
সম্প্রতি দেশের এক শহরে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে। জনাকীর্ণ এক স্থানে কিছু মব-সদৃশ সন্ত্রাসী একজন নারীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। আশপাশে লোকজন দাঁড়িয়ে দেখছে-কেউ ভিডিও করছে, কেউ গুজব ছড়াচ্ছে, কেউ আবার হেসে নিচ্ছে। তখনই এগিয়ে আসে একজন সাধারণ মানুষ-নারীর স্বামী। তিনি মবের চোখ রাঙানিকে তোয়াক্কা না করে একাই ঝাঁপিয়ে পড়েন সেই সন্ত্রাসীদের ওপর। ঠেকিয়ে দেন নির্যাতন, রক্ষা করেন স্ত্রীকে, আর প্রমাণ করে দেন-এই রাষ্ট্র, এই সমাজ, এই সভ্যতায় এখনও কিছু হৃদয় আছে, যাদের রক্তে সাহস জেগে ওঠে।
এই ‘সাধারণ স্বামী’ আসলে আজকের বাংলাদেশের অসাধারণ প্রতীক। তিনি আমাদের ঘুমন্ত বিবেকের এক ঝাঁকুনি। তিনি আমাদের বলছেন-যদি রাষ্ট্র ন্যায় দিতে ব্যর্থ হয়, যদি সমাজ চোখ বুঁজে থাকে, তবে প্রতিরোধের দায়িত্ব ব্যক্তির কাঁধেই বর্তায়।
মব সন্ত্রাস আজকে একটি ক্যান্সার। কখনো এটি ধর্মের নামে, কখনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসায়, আবার কখনো সামাজিক অনুশাসনের ছদ্মবেশে নেমে আসে। পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় নিরীহ মানুষকে। ছেলেধরা গুজব হোক বা কথিত ‘ব্লাসফেমি’-মব জাস্টিসের চেহারা সবসময়ই বর্বর, গণতন্ত্র-বিরোধী, মানবিকতার পরিপন্থী।
প্রতিটি সাহসী মানুষ, যারা প্রতিবাদ করে, যারা ঝুঁকি নেয়, তারা একেকজন ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। তারা আমাদের শেখায়-ভয় নয়, প্রতিরোধই মুক্তির পথ।
আমরা যদি সত্যিই একটি সুবিচারভিত্তিক সমাজ চাই, তবে প্রথমেই ভাঙতে হবে এই নীরব দর্শকের সংস্কৃতি। শিশুদের শেখাতে হবে-সত্য বলার সাহস, অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ করার মানসিকতা। মিডিয়াকে দায়িত্ব নিতে হবে, সাহসীদের গল্প প্রচারে, মব সন্ত্রাসের উৎস উন্মোচনে।
রাষ্ট্রকে অবশ্যই স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে: মব জাস্টিস অপরাধ, এর শাস্তি কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক হবে। পুলিশের ভূমিকা হতে হবে প্রতিক্রিয়াশীল নয়, প্রতিরোধক। বিচারব্যবস্থাকে হতে হবে স্বচ্ছ ও দ্রুত।
আজ যদি আমরা সেই সাহসী স্বামীর পাশে না দাঁড়াই, কাল কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াবে না। এই সমাজ, এই রাষ্ট্র, এই ইতিহাস-সবকিছুই আমাদের তৈরি। এখনই সময়, সেই সাহসিকতার সূত্র ধরে এক নতুন সংস্কৃতির জন্ম দেওয়ার-যেখানে অন্যায়ের প্রতিবাদ শুধু কর্তব্য নয়, এক বিপ্লবী দায়িত্ব।
একটি লাথি যেন একটা বিপ্লবের শুরু হয়ে যায়।
একজন স্বামীর প্রতিরোধ হোক হাজারো মানুষের বোধের জাগরণ।
ভয় নয়, এখন সময় বুক চিতিয়ে বলার-এখানে কেউ অন্যায় করলে, কেউ না কেউ প্রতিরোধ করবেই।’
(প্রতিবাদের কবিতা: ‘একজন দাঁড়ালে’)
দাঁড়িয়ে ছিল সবাই চুপচাপ,
কেউ দেখল, কেউ হাসল, কেউ ছাপ
দিলো ক্যামেরায় গ্লানির দৃশ্য-আবারও জিতলো ভীরুরা নিঃস্ব।
তখনই এল সেই মানুষটি-মাথা নোয়ায় না, ভাঙে না রীতিনীতি,
যার ভালোবাসা মানে রক্ষা,
যার সাহসই হলো প্রতিবাদের রাক্ষস-ভক্ষ।
চোখের আগুনে জ্বলে উঠল দিন,
ভয়ার্ত ভিড়ে হঠাৎ নেমে এলো বৃষ্টির ধ্বনিন,
তার একেকটা লাথি, একেকটা ঘুষি
লিখে দিল: ‘এখনও বেঁচে আছে বীরের ধ্বনি!’
নেই কোনো দল, নেই কোনো সংগঠন,
শুধু এক বুক ভালোবাসা, আর লড়াইয়ের মন।
সে জানতো-পাশে কেউ নেই,
তবুও বললো, “আমি থাকব, আমি দেখব, আমি ঠেকাবই!”
এই কবিতা তারই নামে-যে একা দাঁড়ায়, বহন করে লজ্জার ব্যথা ও ঘৃণার পাথরে,
তবুও শোনায় আমাদের,
“যেখানে অন্যায়, সেখানে একটাও প্রতিবাদী থাকলে-পরাজিত হবে সন্ত্রাস!”
বিস্তারিত জানতে পড়ুন শেয়ার করুন :
www.thenabajagaran.com