পিরোজপুরের গ্রামাঞ্চলে বিএনপি কর্মী সমর্থকদের বেপরোয়া আচরণে অতিষ্ট জনজীবন, দেখার কেউ নেই

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুর জেলার ৭ টি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে বিএনপি নামধারী কর্মী সমর্থকদের বেপরোয়া আচরণে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। সাধারণ জনগণ তাদের হুমকি ধমকি ও মোটরসাইকেল মহড়া দেখে প্রতিনিয়তই আতংকের মধ্যে রয়েছে। এই বুঝি কারো উপর ঝাপিয়ে পড়ল তারা। গতবছরের ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যেভাবে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির হিড়িক শুরু হয়েছিল তা এখন কিছুটা অন্তরালে চলে গেছে। কিন্তু চাঁদাবাজির ধরন পাল্টালেও চাঁদাবাজি ঠিকই চলছে। জমি জমা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো জ্ঞান না থাকলেও তারা জায়গা জমি বিষয়ে সালিশ বানিজ্যে করছে। স্হানীয় পাতি নেতারা একপক্ষের নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদেরকে সালিশে জিতিয়ে দেয়ার নাম করে সর্বশান্ত করছে। একজন পাতি নেতা সালিশক হিসাবে থাকলেও সাথে নিয়ে যান মোটরসাইকেলসহ কয়েকজন ক্যাডার। ভুক্তভোগী পক্ষকে মোটরসাইকেলের খরচাসহ সকলের দৈনিক হাজিড়ার টাকাও বহন করতে হয়।
এলাকায় প্রতিবেশীর মধ্যে কোনো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামান্য মারামারির ঘটনা ঘটলে সেখানে ভাড়াটিয়া মাস্তান হিসাবে আবির্ভুত হয় বেপরোয়া পাতি নেতা সহ তার সহচররা। এক পক্ষকে সাপোর্ট দিয়ে থানায় নিয়ে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করায়। কারসাজি করে থানার মাধ্যমে সালিসির আয়োজন করা হয়। শুরু হয় বানিজ্য। দূর্বল পক্ষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের কব্জায় নিয়ে নেয়। তারপর শুরু হয় ভাউচার। থানার খরচ, চিকিৎসা খরচ, উপরের খরচ, পাতি নেতার খরচ, মোটরসাইকেল ভাড়া, ক্যাডার খরচ। তখন ভুক্তভোগী পক্ষের অবস্থা এমন দাড়ায় যে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।

তারা অন্যের জায়গা দখল, অন্যের বাগানের গাছ কেটে নেয়ার জন্য ভাড়ায় খাটা মাস্তান হিসাবেও কাজ করছে। এ বেপরোয়া নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর হামলা করতেও দ্বিধাবোধ করে নি। হাট বাজার, খেয়া ঘাটের ইজারা এখন বিএনপি নেতাদের হাতে। তারা দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে খাজনা আদায় করায়।কোনো রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করে বিষিয়ে তুলেছে ব্যাবসায়ীদের জীবন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বেশিরভাগই আওয়ামী পন্থী হওয়ায় ইউপির নিয়ন্ত্রণ এখন বেপরোয়া নেতাকর্মীদের হাতে। ইউপির সামান্য সেবা পেতে হলেও পাতি নেতাদের দারস্থ হতে হয়। পরকীয়ার অজুহাত তুলে গভীর রাতে হিন্দু এলাকায় গিয়ে যুবককে পিটিয়ে আহত করা ও চাদা দাবী করার ঘটনাও ঘটেছে। মিথ্যা অজুহাত তুলে মব সৃষ্টির উদ্দেশ্য চায়ের দোকানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটিয়েছে বেপরোয়া বিএনপি কর্মী সমর্থকরা। কারো বিরুদ্ধে আদালতে মামলা থাকলে তাকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা আদায়েরও চেষ্টা করছে তারা। পাওনা টাকা আদায়ের নামে ভাড়ায় খাটা মাস্তান হিসাবে মানুষকে হেনস্থা করার প্রমান রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিএনপি পন্থী সাংবাদিক পরিচয়ে ইট চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বিগত ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চলের যতগুলি সমবায় সমিতি আত্মগোপনে গেছে তার পিছনে ভুমিকা রয়েছে এ বেপরোয়া বাহিনীর। তাদের অত্যাচারে সমিতিগুলো বিতরণকৃত ঋণের টাকা আদায় করতে পারেনি এবং গ্রাহকের জামানতও ফেরত দিতে পারেনি। ফলে জান মালের ভয়ে অনেকেই আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয় আবার কেউ কেউ মামলা মাথায় নিয়ে জেল হাজতে রয়েছে।

প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঐ সকল বেপরোয়া কর্মী সমর্থকরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সাপোর্টারদের সমন্বয়ে গঠিত। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার গত বছরের ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে এলাকায় গিয়ে বিএনপির ছত্র ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। এলাকার মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসরও এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। অপরাধ দমনে পুলিশের গা ছাড়া ভাব তাদেরকে অপরাধে আরও উৎসাহিত করছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে জেলা এবং উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছে গ্রুপিং। আর এ সুযোগটিই গ্রহন করেছে বেপরোয়া কর্মী সমর্থকরা। যদি একজন তাদের প্রতিবাদ জানায় তাহলে তারা অন্য নেতার আশ্রয়ে চলে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসকল বেপরোয়া কর্মী সমর্থকদের নেই কোনো নির্ধারিত আয়ের উৎস। অনেকের পারিবারিক পরিচয়ও সমাজে বলার মতো নয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা নাই বললেই চলে। তাদের একটাই পরিচয় তারা বিএনপি করে। গ্রামের হাট বাজার ও রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানই হলো তাদের অপারেশনাল ক্যাম্প। এখানে বসেই পরিকল্পনা করে কর্মসূচী বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। তাদের কথা বলার ধরন দেখে সমাজের ভদ্রলোকেরা তাদের আড্ডার এলাকা এড়িয়ে চলে।

জেলার সর্বত্র রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বে আন্ত কোন্দল। কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে এ কোন্দল প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে। বেপরোয়া কর্মীরা এক একজন নেতার পক্ষ হয়ে সংঘাতেও জড়িয়েছে। নিজেদের মধ্যে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপি বনাম বিএনপি মামলাও হয়েছে। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের অফিস ভাংচুর করেছে। তথ্য সূত্রে আরো জানা গেছে আওয়ামী লীগ থেকে পুনর্বাসিত হয়ে বিএনপি ট্যাগ লাগিয়ে অপকর্মের পালে হাওয়া দিচ্ছে একটি গ্রুপ। এ গ্রুপে রয়েছে গনহত্যা সহ একাধিক মামলার আসামী। তারা নিরীহ জনসাধারণকে অপহরণ করার ভয় দেখাচ্ছে। প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করার হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। পুলিশে অভিযোগ দেয়ার সাহসও পাচ্ছে না। দলীয় নেতারা সকলের কর্ম কান্ড সম্পর্কে জানেন। তাই তাদের কাছে নালিশ দিয়ে কোনো লাভ হবে না তাও সবাই জানেন। এখন সাধারণ জনগণের প্রশ্ন হলো এদের থামাবে কে? কার কাছে প্রতিকার পাবে? তাই সাধারণ জনগণ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের নিশ্চয়তা চাচ্ছে।