ড. খলিলুর রহমান: আলোকিত রাষ্ট্রচিন্তক ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক গৌরব

-মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:১৬ জুলাই ২০২৫
ছাত্রজীবনে যিনি মেধার দীপ্ত প্রতীক, কর্মজীবনে সততা ও দক্ষতার প্রতিমূর্তি, আন্তর্জাতিক পরিসরে যিনি বাংলাদেশের গৌরবময় প্রতিনিধিত্ব করেছেন-তিনি ড. খলিলুর রহমান। আজ যখন তাকে ঘিরে ষড়যন্ত্রমূলক প্রপাগান্ডা চালানো হয়, তখন ইতিহাস ও বাস্তবতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়-এই মানুষটি শুধু একজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা নন, তিনি বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক।

এক অনন্য অধ্যায়ের শুরু-
ঢাকায় জন্ম নেওয়া খলিলুর রহমান তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের প্রতিটি স্তরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান, ১৯৭৭ সালের বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন, এবং পরবর্তীকালে হার্ভার্ড ও টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ও আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনীতিতে এমএ ডিগ্রি-এই সবকিছু মিলিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন এক অনন্য আন্তর্জাতিক বাঙালি।

বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের মুখ!
ড. রহমান ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে যোগদানের মাধ্যমে কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। স্বল্পোন্নত দেশসমূহের (LDCs) পক্ষে বিশ্বব্যাপী কণ্ঠস্বর হিসেবে তার সক্রিয়তা, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অর্থনৈতিক কমিটিতে দক্ষ ভূমিকা, UNCTAD-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে অবদান, এবং জাতিসংঘের একাধিক ফ্ল্যাগশিপ রিপোর্টের প্রধান রচয়িতা হিসেবে তার স্বীকৃতি-এসব কিছুই প্রমাণ করে, তিনি কেবল একজন কর্মকর্তা নন, বরং একজন আন্তর্জাতিক নীতি-স্থপতি।

২০০১ সালের ব্রাসেলস সম্মেলনে এলডিসিদের কর্মসূচির খসড়া প্রস্তুতে তার নেতৃত্ব ছিল ঐতিহাসিক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিবের দায়িত্বও দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন। তিনি ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সক্রিয় সদস্য।

সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে তাকে নিযুক্ত করা হয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে-একটি পদ যা শুধু আস্থার নয়, বরং রাষ্ট্রীয় দূরদর্শিতার স্বীকৃতিও। এই পদে থেকে তিনি রোহিঙ্গা সংকট থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পর্যন্ত বহু জটিল বিষয়ে কৌশলগত পরামর্শ দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অবস্থানকে সুসংহত করেছেন।

ভারতীয় প্রোপাগান্ডা: একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন
সম্প্রতি ভারতীয় কিছু মিডিয়া ও তাদের মদদপুষ্ট কিছু এজেন্ট ড. খলিলুর রহমানকে ঘিরে যে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছে, তা স্পষ্টতই একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক অপচেষ্টা। এদের মূল লক্ষ্য হলো-একজন প্রজ্ঞাবান নিরাপত্তা উপদেষ্টার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং বাংলাদেশের স্বাধীন নিরাপত্তা কাঠামোকে দুর্বল করা।

অপপ্রচারের ধরন:
‘রজার রহমান’ নামে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচয় গোপন: একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তিনি নাকি ‘রজার রহমান’ নামে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন। অথচ এ বিষয়ে কোনো প্রামাণ্য দলিল নেই, এটি নিছক গুজবের ভিত্তিতে তৈরিকৃত চরিত্রহননের অপপ্রয়াস।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেছেন, তিনি নাকি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। অথচ এই অভিযোগেরও কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রমাণ নেই এবং এটি মূলত রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এদেশীয় ‘র’ এজেন্টদের ভূমিকা
এই অপপ্রচারে অংশ নিচ্ছে কিছু তথাকথিত দেশি বিশ্লেষক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, যারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত বলে জনমনে সন্দেহ আছে। এরা নিজেরা দেশের অভ্যন্তরে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রাষ্ট্রকে দুর্বল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।

সীমান্ত পরিস্থিতি ও ভারতীয় আচরণ
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) ৬৬ জন অবৈধ ভারতীয় নাগরিককে খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে। এ বিষয়ে ড. খলিলুর রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, “এই ধরনের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। সীমান্তের সম্মান রক্ষা করা দুই রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব।”

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আজ প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াসে আক্রান্ত
ড. খলিলুর রহমানকে ঘিরে চালানো এই প্রপাগান্ডা শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে নিশানা করেছে। এ মুহূর্তে আমাদের করণীয় একটাই-ষড়যন্ত্রের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদাকে রক্ষা করা।

একটি ব্যক্তিগত উক্তি:
তাঁর চাচাতো ভাই আতাউর রহমান শামিম জানান, “খলিল ভাই ছোটবেলা থেকেই খুবই মেধাবী ও সৎ। প্রতিটি ক্লাসে তিনি প্রথম হতো। এমনকি যখন বাকি সবাই খেলাধুলায় ব্যস্ত, তখনও তিনি বই নিয়ে বসে থাকত। তাঁর দেশপ্রেম, অধ্যবসায় ও প্রজ্ঞা দেশ এবং আমাদের পরিবারের গর্ব।”

জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ এ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে নির্বিশেষে আমাদের করণীয় :
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে ড. খলিলুর রহমান শুধু রাষ্ট্রের নয়, জাতিরও সম্পদ। তার মতো আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞ, ও নীতিনিষ্ঠ মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্রে থাকা কেবল প্রয়োজন নয়—এটি সময়ের দাবি। আজ যখন তাকে ঘিরে প্রপাগান্ডা চালানো হয়, তখন প্রত্যুত্তর হওয়া উচিত একটাই:
“খলিলুর রহমান একজন ব্যক্তি নন, তিনি আমাদের আত্মমর্যাদার প্রতীক।”

লেখক:সম্পাদক ও প্রকাশক
সাপ্তাহিক নবজাগরণ।