সেনবাগে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ পালন: ইতিহাসের নতুন প্রজন্মের মাঝে ফিরে দেখা সাহস ও ত্যাগের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, সেনবাগ:১৬ জুলাই ২০২৫
আজ ১৬ জুলাই (বুধবার), সেনবাগ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো “জুলাই এর গল্প বলা” ও আলোচনা সভা—একটি অনন্য অনুষ্ঠান, যা শুধু স্মরণ নয়, বরং প্রজন্মান্তরে একটি বিপ্লবী উত্তরাধিকার ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস।

উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন সেনবাগ উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন,যিনি তার বক্তব্যে ‘জুলাই বিদ্রোহ’-এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য, জাতীয় স্বাধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব এবং সেনবাগ তথা বৃহত্তর নোয়াখালীর অবদান বিশ্লেষণ করেন।

ইতিহাসের পেছনের গল্প:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে সামরিক শাসনের যাত্রা শুরু হলেও, ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় গুপ্ত ও খোলামেলা প্রতিরোধ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালের ১৬ জুলাই সেনবাগসহ নোয়াখালী অঞ্চলে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে গড়ে ওঠে এক ব্যতিক্রমধর্মী, স্থানীয়-ভিত্তিক নবজাগরণ, যা পরবর্তীতে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নামে পরিচিতি পায়।

এই আন্দোলনের সময় সেনবাগে গুলিতে আহত হন অন্তত ৫ জন, গ্রেফতার হন অনেকে। তাঁদের মধ্যে অনেকে আজও বেঁচে আছেন, কেউ কেউ আজ আর নেই। সেনবাগের মাটি সেদিন রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল।

প্রজন্মের মুখে ইতিহাস
আজকের অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, স্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধিগণ অংশ নেন। স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা ‘জুলাই এর গল্প বলা’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাঁদের কণ্ঠে তুলে ধরেন সাহস, ত্যাগ ও গণতন্ত্রের চেতনার গল্প।

ইউএনও মহিউদ্দিন বলেন-
“জুলাই শহীদ দিবস কেবল এক দিনের স্মরণ নয়,এটি একটি চলমান ইতিহাস চর্চা। গণতন্ত্র,মানবাধিকার এবং সুশাসনের জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। আমরা চাই, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সত্য ইতিহাস জানে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের গড়ে তোলে।”

অনুষ্ঠানে আরও যা ছিল:
স্থানীয় সাংবাদিক ও লেখকদের লেখা নিয়ে একটি স্বল্পাকৃতির স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়,যাতে জুলাই আন্দোলনের পটভূমি ও স্থানীয় বীরদের গল্প স্থান পায়।

২০২৪ সালের সেনবাগ আন্দোলনের ছবির ওপর ভিত্তি করে একটি ছোট প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়।
গণসংগীত পরিবেশন: স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নতুন সূর্যোদয়’-এর পরিবেশনায় কয়েকটি গণসংগীত সকলকে আন্দোলনের দিনগুলোর প্রতি আবেগে ভাসিয়ে নেয়।

কেনরগুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগ?
বর্তমান সময়ে যখন ইতিহাস বিকৃতির নানা প্রচেষ্টা চলছে, তখন প্রশাসনিক পর্যায়ে এমন উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়-রাষ্ট্র শুধু উন্নয়ন প্রকল্পে সীমাবদ্ধ নয়, ইতিহাস-সচেতন প্রজন্ম গঠনেরও সহায়ক। সেনবাগ প্রশাসনের এই আয়োজন তাই নিছক এক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একটি দায়বদ্ধ সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ।

“জুলাই এর গল্প বলা”শিরোনামে ইতিহাসচর্চা-ভিত্তিক এ অনুষ্ঠান শুধুই অতীতের গৌরবগাথা নয়-বরং ভবিষ্যতের চেতনার বীজ বপনের প্রয়াস। আজকের সেনবাগ দেখিয়েছে, রাষ্ট্র চাইলে সে ইতিহাসকে উৎসব করে তুলতে পারে, স্মৃতিকে আন্দোলনে রূপ দিতে পারে।