চাঁদাবাজদের রক্তাক্ত ছায়া ও রাজপথে ঘুম না ভাঙা বিপ্লব

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
“আমরা চেয়েছিলাম চাঁদাবাজমুক্ত,বৈষম্যহীন বাংলাদেশ”-এই কথাটা শুধু আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নয়,এটি আজ লক্ষ-কোটি মানুষের হৃদয়ছোঁয়া আকুতি।বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রের,সুশাসনের,স্বচ্ছতার-কিন্তু বাস্তবতা দাঁড়িয়েছে উল্টো।দুর্নীতির ধ্বজাধারীরা এখন রাষ্ট্রের মালিক বনে বসেছে। চাঁদাবাজদের রক্তাক্ত ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছে গণতন্ত্রের মুখ।

বরিশালের রাজপথে দাঁড়িয়ে যখন একজন আন্দোলনকর্মী বলেন,“চাঁদাবাজদের ভয় পাই না”, তখন সেটা নিছক এক রাজনৈতিক স্লোগান নয়,এটা হাজার বছরের শোষণের বিরুদ্ধে মানুষের জমে ওঠা বেদনার,ক্ষোভের,সংগ্রামের একটি অগ্নিমন্ত্র। নাহিদ ইসলামের এই আহ্বান হচ্ছে সেই শ্রেণির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক, যারা রাজনৈতিক দল,প্রশাসন,আর ব্যবসার জোট বানিয়ে বাংলাদেশকে চাঁদাবাজ,সন্ত্রাস আর বৈষম্যের তীর্থভূমিতে পরিণত করেছে।

রাজনীতি এখন পেশিশক্তির সিন্দুক
একটা সময় ছিল রাজনীতি মানেই ছিল জনসেবা। এখন সেটা হয়ে গেছে ঠিকাদারদের, সিন্ডিকেটের আর গডফাদারদের কর্পোরেট চুক্তিপত্র। যে দলেরই হোক-সবাই চাঁদার ভাগীদার। নির্বাচন মানেই এখন কোটি টাকার খেলা, গরিবের রক্ত চুষে বানানো তহবিল। মানুষের ভোটাধিকার এখন বাজারে বিক্রি হয়, আর প্রতিটি ব্যালটের পেছনে থাকে একেকটি সন্ত্রাসের গল্প।

নাহিদ ইসলাম যখন বলেন,“রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে র’ক্তে’র দাগ লেগে আছে”—তখন সেটি সত্যিকারের নৈতিক ভাষ্যের স্বর। হ্যাঁ, আজ এমন একটা দেশে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে ‘চাঁদা না দিলে ব্যবসা চলে না’, ‘সিস্টেমে না থাকলে চাকরি মেলে না’, আর ‘দল না করলে বাঁচা যায় না’। আমরা এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করেছি, যেখানে সৎ মানুষ টিকে থাকার বদলে নিপীড়নের শিকার হয়।

জুলাই বিপ্লব কি কেবল স্মৃতি?
নাহিদ ইসলাম মনে করিয়ে দিয়েছেন সেই ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর কথা, যার ঢেউ রাজপথে নতুন প্রত্যয়ের জন্ম দিয়েছিল। সেই আন্দোলনের চেতনায় ছিল স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ-শোষণমুক্তি, শ্রেণীভিত্তিক ব্যবস্থার পতন, এবং একটি নতুন রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার। কিন্তু প্রশ্ন হলো-সেই উত্তাল ঢেউ আজ কোথায়? রাজপথে কি সত্যিই এখনো সেই আগুন জ্বলছে,নাকি তা নিভে যেতে বসেছে দলীয় কোন্দল, বিভক্তি আর ষড়যন্ত্রের জালে?

নাহিদ ইসলামের বক্তব্য তাই একটি সতর্কবার্তা-বিপ্লব ঘুমিয়ে যেতে পারে, কিন্তু মরে না। এই ব্যবস্থা না বদলালে,এই ফ্যাসিবাদী কাঠামো না ভাঙলে,‘নতুন বাংলাদেশ’ কখনোই গড়ে উঠবে না।

কারা বদলাবে ব্যবস্থা?
ব্যবস্থা বদলের লড়াইয়ের প্রশ্নে বড় সমস্যা হলো-যারা ক্ষমতায়,তারাই পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় বাধা। এদের হাতে রক্ত,পেছনে চাঁদাবাজদের অর্থ,সামনে সন্ত্রাসের তাজা অস্ত্র। সুতরাং রাজনৈতিক দল দিয়ে আর এই রাষ্ট্র বদলাবে না। এখন দরকার নতুন ধরণের নেতৃত্ব,নতুন ধরণের চেতনা, নতুন ধরণের রাজনৈতিক দল-যে দল ভয় পায় না, যাদের হাতে রক্ত নেই,যাদের পেছনে জনগণ আছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির মতো নতুন শক্তিগুলোর এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। জনগণের দাবিকে মুখস্থ না করে অন্তরস্থ করতে পারলেই কেবল আন্দোলন হবে বাস্তব।

আমাদের করণীয় কী?
নাহিদ ইসলামদের কণ্ঠস্বরকে এখন রাজপথে ছড়িয়ে দিতে হবে। গলা চড়িয়ে বলতে হবে-

চাঁদাবাজদের জায়গা প্রশাসনে নয়,
গডফাদারদের স্থান সংসদে নয়,
লুটেরাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
আমাদের রাজপথে থাকতে হবে-যতদিন না রাষ্ট্র বদলায়, যতদিন না শোষণহীন, দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে ওঠে। ইনশা আল্লাহ, এই লড়াই একদিন বিজয়ী হবে-কিন্তু তার জন্য চাই সচেতনতা,সংহতি আর বিপ্লবের সাহস।