সাংবাদিক মেহেদীসহ ৪ হত্যাকাণ্ড: যারা পাশে দাঁড়ায়নি, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না

নবজাগরণ রিপোর্ট:
একটি জাতির আয়না তার সাংবাদিক সমাজ। কারণ তারা শুধু খবর লেখে না,তারা সময়ের নৈতিক বিবেক, সত্যের প্রহরী,জনগণের প্রশ্ন। অথচ সেই সাংবাদিক সমাজই আজ ভয়ংকরভাবে দ্বিধাগ্রস্ত,বিভক্ত ও রাজনৈতিকভাবে দখলদারিত্বের শিকার। তারই এক নির্মম প্রমাণ-সাংবাদিক মেহেদী হাসান ও তার সহযোদ্ধা তিনজন সাংবাদিকের নির্মম হত্যাকাণ্ড,এবং তার বিচার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তথাকথিত সাংবাদিক নেতৃত্বের অমানবিক অনুপস্থিতি।

রাজনীতি বড়,না সহযোদ্ধার জীবন?
একটি প্রশ্ন আজ সাংবাদিকতার অঙ্গনে বিষফোঁড়ার মতো চেপে বসেছে-আপনি কি সাংবাদিক,না শুধুই রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির বাহক? সাংবাদিক মেহেদী হাসান কী তার দলীয় পরিচয়ে খুন হয়েছিলেন,নাকি তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন? যদি দ্বিতীয়টা সত্য হয়-তবে আজ যারা তাদের দলীয় গণ্ডির বাইরে সহযোদ্ধার মৃত্যুতেও নীরব থাকলেন,তারা কি আদৌ সাংবাদিক? নাকি তারা কেবল নির্লজ্জ সুবিধাভোগী, যারা সাংবাদিকতা নামক মহান পেশাকে ব্যবহার করেন নিজের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকের পা চাটতে?

যারা এসেছিলেন,তারাই সত্যিকারের নেতা
বড় পদ-পদবী নয়, সত্যিকারের নেতৃত্ব মাপা যায় ক্রান্তিকালে কে কোথায় দাঁড়িয়েছে তা দিয়ে।সেই হিসেবে সাংবাদিক গোলাম মুজতবা ধ্রুব,সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন, এফবিজেও চেয়ারম্যান অপরাধ বিচিত্রার সম্পাদক এসএম মোরশেদ,নবজাগরণ সম্পাদক আবু তাহের পাটোয়ারী,বাংলাদেশ পরিবেশ পরিক্রমা মানবাধিকার সাংবাদিক সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান এমএম তোহা;সাইয়েদা রিমি কবিতা ; সম্পাদক মো. মাসুদ, পল্লব ইমাম হোসেনসহ অনেকেই প্রমাণ দিয়েছেন, বিবেকবান সাংবাদিকতা এখনও বিলুপ্ত হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা প্রতিবাদ করেছেন, মেহেদীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, ইতিহাস তাদের মনে রাখবে।

সাংবাদিক নেতাদের নির্লজ্জ নিরবতা
প্রেসক্লাবের বড় বড় চেয়ার, মিডিয়া জগতের মুখোশধারী সিনিয়রদের অনেকেই সেদিন মানববন্ধন থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। তারা প্রেসক্লাব ভবনে ছিলেন, কিন্তু মাঠে ছিলেন না। তারা অফিসিয়াল বিবৃতি দেন, কিন্তু মেহেদীর মৃত্যুকে রাজনৈতিক ‘ঝামেলা’ মনে করে মুখে কুলুপ আঁটেন। এ কেমন সাংবাদিকতা? এ কেমন নেতৃত্ব?

কেন ভয় পান আপনি?
একটি পোস্ট দিয়ে সহযোদ্ধার পাশে দাঁড়াতে আপনার এত ভয় কেন? আপনি কি সত্যিই সাংবাদিক, নাকি ভাড়াটে প্রচারক? এই মৃত্যু তো আপনারও হতে পারে, আপনার ছেলের, আপনার সহকর্মীর। তাই মেহেদীদের মৃত্যু নিয়ে নীরবতা মানে নিজেকেই বিকিয়ে দেওয়া।

একাত্ম হোন,নইলে সময় আপনাকেও ছাড়বে না
প্রিয় সহকর্মীরা, এবার ঘুম ভাঙান। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে নীরবতা মানে কেবল একজন সাংবাদিকের মৃত্যু নয়, বরং গোটা পেশাটির নৈতিক মৃত্যুও। আজ যাকে আপনি ভুলে গেছেন, কাল আপনাকেও ভুলে যাবে এই সমাজ। মনে রাখবেন, সাংবাদিকদের একতা ছাড়া এই পেশা টিকে থাকতে পারবে না। একতা মানে শুধু উৎসবে ছবি তোলা নয়-একতা মানে সহযোদ্ধার রক্তের পাশে দাঁড়ানো।

সাংবাদিকতার মাঠে যারা লড়ছেন,তারাই আসল নেতা। বাকিরা শুধুই কর্পোরেট দাস।
লেখক:একজন বিবেকবান ক্ষুদ্র গণমাধ্যমকর্মী। উদ্দেশ্য কাউকে আঘাত করা নয়, বরং সাংবাদিকতার চেতনায় সাহস জোগানো।