নবজাগরণ প্রতিবেদন:নোয়াখালী ব্যুরো-
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন সোহেল অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই),নোয়াখালীর একটি বিচারিক আদালতে বিএনপির শীর্ষ নেতা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর প্রাণঘাতী হামলার মামলায় জামিনের আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর কোর্ট পুলিশ তাকে নোয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠায়।
পেছনের গল্প: কে এই সোহেল চেয়ারম্যান?
নবীপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সোহেল বরাবরই বিতর্কিত একটি নাম। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং প্রশাসনের ছত্রছায়ায় স্বৈরাচারী আচরণের জন্য কুখ্যাত। ২০২৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে দরজা বন্ধ করে ব্যালট বাক্সে নিজ দলের পক্ষে সিল মারা, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েমের ঘটনা স্থানীয়রা এখনো ভুলে যায়নি।
প্রাণনাশের চেষ্টা:হামলার অভিযোগ
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক সেনবাগে নির্বাচনী প্রচারে গেলে তার ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, চেয়ারম্যান সোহেল নিজে নেতৃত্ব দিয়ে ওই হামলায় অংশগ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়,তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালানো হয় বলেও মামলায় উল্লেখ রয়েছে।
ওই ঘটনায় সেনবাগ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি হুমায়ুন কবির হুমু বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে দীর্ঘ সময় পলাতক থাকার পর সোহেল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
উপজেলা প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন বলেন, “আমি বিভিন্ন সূত্র থেকে সোহেল চেয়ারম্যানের গ্রেফতারের বিষয়টি জেনেছি। কাল অফিস খুললে অফিসিয়ালি নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
একজন “জনপ্রতিনিধি” না “জনশত্রু”?
স্থানীয়রা বলছেন, সোহেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তিনি পার পেয়ে গেছেন। নবীপুর ইউনিয়নে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, বিভিন্ন অনিয়ম, খাস জমি দখল এবং দলীয়করণের মাধ্যমে ত্রাণ বণ্টন—সব কিছুতেই তার নাম উঠে এসেছে। এই গ্রেফতারকে তারা দেখছেন ন্যায়বিচারের পথে একটি ছোট পদক্ষেপ হিসেবে।
এলাকার জনগণের মন্তব্য:
এই গ্রেফতার কেবল একজন দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানকে আইনের আওতায় আনা নয়, বরং এটি একটি প্রতীকী বার্তা—ক্ষমতাধর হলেও অপরাধ করলে পার পাওয়া যায় না। তবে এটুকু যথেষ্ট নয়। এই মামলার দ্রুত তদন্ত, সুষ্ঠু বিচার এবং নবীপুর ইউনিয়নে একটি গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ প্রশাসন নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি। জনগণের পয়সায় নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি যদি জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়, তবে তার জায়গা অবশ্যই জনপদের নয়, জেলখানায়।