পাঁচটি কফিন, একটি জাতি: রাষ্ট্রব্যর্থতার নির্মম প্রতিচ্ছবি

নবজাগরণ ডেস্ক :
পোড়া শরীরটা নিয়ে শিশুরা মা-বাবাকে খুঁজছিল,
তারা জানত,মা-বাবাকে খুঁজে না পেলে সবাই ভিডিও করবে,
কেউ বাঁচাবে না…

পাঁচটি কফিন পাশাপাশি।
পাঁচটি শিশুর নিথর দেহ শুয়ে আছে নামাজে জানাজার পাঁজরে।
পাঁচটি ঘরে আজ চিরতরে নিস্তব্ধতা।
একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একই ছাদ, একই স্বপ্নভঙ্গ-আর তবুও রাষ্ট্র নির্বিকার!

২১ জুলাই মাইলস্টোন কলেজে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনার শিকার পাঁচটি পরিবার আজ নিঃস্ব।
আকাশ থেকে নয়, উপর থেকে নয়-দেখা গেছে একেবারে চোখের সামনে সন্তানদের দগ্ধ হয়ে ছটফট করতে।
এটা কোনো সিনেমা নয়। এটাই বাস্তবতা-এটাই বাংলাদেশ ২০২৫।

এই পাঁচটি কফিন কী আমাদের বিবেককে জাগাতে পারবে?
১. নাফিয়া-মেধাবী, প্রাণবন্ত, পরিবারের গর্ব
২. নাফি-বোনের মৃত্যু দেখে চুপ হয়ে গিয়েছিল, তারপর মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে হার মানল
৩. আশফিয়া-সেদিন ক্লাসে প্রথম এসেছিল, বইয়ের ব্যাগ আজও খোলা হয়নি
৪. রুহান-কবিতা লিখত, আকাশে উড়ার স্বপ্ন ছিল
৫. মাইশা-মা-বাবার একমাত্র সন্তান

পাঁচটি শিশু-পাঁচটি স্বপ্ন-আজ শুধু কবরে শুয়ে।
পাঠশালা নাকি শ্মশান?
একটি প্রশ্ন চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে-“বিমান প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে কেন পড়তে হবে?”
বেসামরিক শিক্ষার্থীদের মাথার উপর দিয়ে কীভাবে প্রশিক্ষণ বিমান উড়তে পারে?

বিমানটি ছিল বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির
ঘটনার দিন ছিল সাপ্তাহিক পরীক্ষা
আচমকা ছাদে আছড়ে পড়ে বিমানটি,মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে যায় ক্লাসরুম

এই মৃত্যু দুর্ঘটনা নয়-এ এক “প্রাতিষ্ঠানিক হত্যাকাণ্ড”।
পরিসংখ্যানের পেছনে লুকানো কান্না
মোট নিহত:৩২ জনের বেশি
গুরুতর দগ্ধ:৭৪ জনের বেশি
এখনো চিকিৎসাধীন: ৩১ জন (তাদের অনেকে লাইফ সাপোর্টে)
নিহতদের ৯৫% শিশু-কিশোর
কিছু পরিবারে দুই বা তিনজন সন্তান একসাথে নিহত
পাঁচটি শিশু একই জানাজায় দাফন-রাষ্ট্রের কাঁধ ঝাঁকায়নি, আন্দোলন করতেই হয়েছে

রাষ্ট্র কী করেছে?
জাতীয় শোক ঘোষণা: একদিনের ফর্মালিটি
তদন্ত কমিটি: সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে, স্বাধীনতা নেই
দোষী এখনো শনাক্ত নয়

মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ ও বিমান একাডেমির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি
নিহত পরিবারকে প্রতীকী সান্ত্বনা ছাড়া কিছুই দেওয়া হয়নি
এই শোক, এই বিক্ষোভ, এই রক্ত-রাষ্ট্রের বিবেক নাড়িয়ে দিলো না।

আমরা যদি এখনো না জাগি…
আমরা যদি এখনো না প্রশ্ন করি-
আমরা যদি এখনো আন্দোলনে না নামি-
আমরা যদি এখনো আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করি-
তাহলে আগামী কফিনগুলোও আমাদের চেনা মুখ নিয়েই ফিরবে।
আমাদের দাবি:

১. পূর্ণ স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন
২. বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রাজধানী থেকে সরানো
৩. সকল দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা
৪. প্রতিটি নিহত পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ও স্থায়ী সহায়তা
৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় উড়োজাহাজ চলাচলের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
৬. শোক দিবস নয়, নিরাপত্তা দিবস ঘোষণা করুন

পাঁচটি কফিন একসাথে দেখলে মন কাঁপে না, তাহলে আপনি মানুষ নন-
পাঁচটি শিশুর নিঃশ্বাস থেমে গেলে যদি আপনার কণ্ঠস্বর না জাগে, তবে আপনি জাতি নন-
এই মৃত্যু আমাদেরও হত্যা করেছে, আমাদের আত্মা, আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ।

আজ জেগে উঠুন, নয়তো কাল আর জেগে ওঠার মতো সন্তানই থাকবে না।

🖤 “একটি কফিন… তারপর আরেকটি”

একটি কফিন এলো দুপুর বেলায়,
ভেঙে পড়ল মায়ের বুকের দেয়াল,
“নাফিয়া…!” বলে হাহাকার তুলে,
মাটির দিকে ছুটলো চোখের গাঙ।

তারপর রাতের নিস্তব্ধ কাঁধে
আরেকটি কফিন চুপিচুপি হাঁটে,
“নাফি গেছে!” খবর এলো কানে,
পৃথিবী থেমে যায় বাবার ডাকে।

পাঁচটি কফিন, পাঁচটি জীবন,
একটি ভবন, নিথর নিরবতা,
ক্লাসরুমে ছড়ানো বইয়ের পাশে
শুয়ে আছে স্বপ্নের লাশগাথা।

কালো ধোঁয়ার ভিতরে ছিল কান্না,
চুল ও পোড়া চামড়ার গন্ধ,
তবু রাজনীতির মঞ্চে নীরবতা-
শুধু মা কাঁদে, কাঁদে অস্পষ্ট ধ্বনি।

হাসিমুখেরা আজ ছবির ফ্রেমে,
নাফি, নাফিয়া-যাচ্ছে মেঘে ভেসে,
শোকে পাথর হয়ে যে মা পড়ে আছে,
তার বুকেই রাষ্ট্রের মরণ লেখা রয়ে গেছে।

এই কবিতাটি:উৎসর্গ:মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বিদায় নেওয়া নিষ্পাপ সকল শহীদ শিশুকে,
যারা স্কুলে গিয়েছিল বইয়ের গল্প শিখতে,
ফিরলো আগুনে পোড়া কফিনে…।
মো:আবু তাহের পাটোয়ারী :
বিস্তারিত জানতে পড়ুন শেয়ার করুন অনলাইনে পড়তে : www.thenabajagaran.com
নবজাগরণ
শোক নয়, প্রতিরোধই হোক আমাদের প্রার্থনা।