আলোচিত-সমালোচিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক গ্রেপ্তার: তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়দাতা এখন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত

নিউজ ডেস্ক নবজাগরণ-২৪ জুলাই ২০২৫, ঢাকা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত এক মোড় ঘোরানো সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আজ সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে তাঁকে নেওয়া হয়েছে এবং যেকোনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম।

তিনটি মামলার মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ সবচেয়ে গুরুতর
খায়রুল হকের বিরুদ্ধে বর্তমানে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় মোট তিনটি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো রাষ্ট্রদ্রোহ। ২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট ফতুল্লা মডেল থানায় খায়রুল হকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা আবদুল বারী ভূঁইয়া। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিচারপতি খায়রুল হক ‘জালজালিয়াতি ও অসাংবিধানিক রায় প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক কাঠামোকে বিপন্ন করেছেন।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়দাতা হিসেবে বিতর্কে কেন্দ্রবিন্দুতে
খায়রুল হক দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১১ সালের ১৭ মে অবসরে যান। তার বিচারক জীবনের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত অধ্যায় হলো সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়, যার মাধ্যমে দেশের বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।

এই রায়ের পর থেকেই তিনি ক্ষমতাসীন মহলের প্রশংসা ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। বিএনপি, জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই রায়কে ‘রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের অংশ’ এবং ‘গণতন্ত্র হত্যার শুরু’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।

বিচারপতির চেয়ার থেকে আইনি কমিশনের চেয়ারম্যান পর্যন্ত দীর্ঘ সফর
অবসর গ্রহণের পর ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তিনি তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে একাধিক মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। তবে গত বছরের ১৩ আগস্ট তিনি হঠাৎ পদত্যাগ করেন, যা নিয়ে তখনো রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা দেখা দেয়।

আরও যেসব রায়ে তিনি আলোচিত হয়েছিলেন
খায়রুল হক তাঁর বিচারকীয় জীবনে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী রায়, ঢাকার চার নদী রক্ষা, ফতোয়া অবৈধ ঘোষণা, ও স্বাধীনতার ঘোষক ইস্যুসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রায় দেন। অনেকেই তাঁকে ‘রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বিচারক’ হিসেবে আখ্যা দিলেও অপর একটি মহল তাঁকে ‘সাহসী ও সংস্কারমনা’ বিচারপতি বলেও উল্লেখ করে।

বিচার বিভাগ থেকে রাজনীতির কেন্দ্রে?
এক সময় যিনি সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান হিসেবে বিচার বিভাগের মাথায় ছিলেন, আজ তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ ও প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত। এটি যেমন বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য এক ধরনের ধাক্কা, তেমনি একটি বার্তাও-ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী।
প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২৫, সকাল ১০:১৫
উৎস: ডিবি অফিসিয়াল ব্রিফিং ও আদালত সূত্র