বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৪

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
অত্যন্ত গুরুত্বের সহিত এবং সাফল্যজনকভাবে দিনব্যাপী বার্ষিক সাধারণ সভা সম্পন্ন হয়েছে।

২৬ জুলাই ২০২৫,শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল রূপসী বাংলার গ্র্যান্ড হল রুমে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির বহুল প্রত্যাশিত বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৪। এ সভা কেবল একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন ছিল না- এটি ছিল গত কয়েক বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে শিল্পকে নতুন গতিতে এগিয়ে নেওয়ার এক ঐতিহাসিক প্রয়াস।

আইনি নির্দেশনার ভিত্তিতে পুনরুজ্জীবন
এই সভা আয়োজন করা হয় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের কোম্পানি কোর্ট কর্তৃক কোম্পানি ম্যাটার নং-৪৬/২০২৫-এর আলোকে ১৪ মে ২০২৫ তারিখে প্রদত্ত নির্দেশনার ভিত্তিতে। উল্লেখ্য, বিগত পরিচালনা পর্ষদ সময়মতো বার্ষিক সাধারণ সভা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই একদিনেই নিষ্পত্তি করা হয় ২০২২,২০২৩ ও ২০২৪ সালের হিসাব ও কার্যবিবরণী।

আলোচ্য সূচি ছিল যেগুলো:
১. ২০২৩ সালের বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন
২. বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন
৩. ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবেচনা ও অনুমোদন
৪. ২০২৫ সালের জন্য বাজেট পাশ
৫. ২০২৪ সালের অডিটর নিয়োগ ও পারিশ্রমিক নির্ধারণ
৬. সভাপতির অনুমতিক্রমে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা

উল্লেখযোগ্য নেতৃত্ব ও অতিথিবৃন্দ
সভায় সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান মোঃ রাব্বানী জব্বার এবং রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ কাউসার-উজ-জামান (রুবেল)। অর্থবিষয়ক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ মোঃ হানিফ আলী।

উপস্থিত ছিলেন সমিতির সম্মানিত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জোনায়েদ উল্লাহ আল মাহফুজ, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান রবিন, মোঃ হুমায়ুন কবির, ওসমান গনিসহ প্রিন্ট শিল্পের অনেক অভিজ্ঞ ও বিজ্ঞ সংগঠক।

সভায় সদস্য ও হিসেবে উপস্থিত ছিলেন
নুভান প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এর সত্ত্বাধিকারী, বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক ও নবজাগরণ সম্পাদক মো: আবু তাহের পাটোয়ারী,
এবং বাংলাদেশ পরিবেশ পরিক্রমা মানবাধিকার সাংবাদিক সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান, সাংবাদিক নেতা এম এম তোহা।

নেতৃত্বের সামনে এখন দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ:এই বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রমাণ করেছে যে, মুদ্রণ শিল্প কেবল অতীতের গৌরব নয়-বরং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার রূপরেখা। নতুন নেতৃত্বের সামনে রয়েছে বৈষম্যহীন অংশগ্রহণ, স্বচ্ছ হিসাব ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, এবং প্রান্তিক প্রেস মালিকদের উন্নয়নে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের চ্যালেঞ্জ।

প্রিন্ট মিডিয়া মানেই শুধু কালি-কালার নয় – এটি একটি জাতির স্মৃতি, প্রতিবাদ, সৃজনশীলতা ও স্বাতন্ত্র্যের ধারক। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে সংগঠনকে হতে হবে সচল, গণতান্ত্রিক ও কর্মীবান্ধব।

বৈষম্যহীন শিল্প, রূপান্তরিত বাংলাদেশ:সভায় বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই আয়োজন হবে একটি টার্নিং পয়েন্ট -যা দেশের প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিকে আধুনিকীকরণে নেতৃত্ব দেবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুদ্রণ শিল্পকে একটি ন্যায্য, মানবিক ও শক্তিশালী খাত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব – যেখানে ঢাকাকেন্দ্রিক আধিপত্য নয়, থাকবে সারাদেশের প্রতিনিধিত্ব।

দিনব্যাপী এই সফল, গঠনমূলক ও সুসংগঠিত সভার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে – নেতৃত্ব যদি আন্তরিক হয়, সদস্যরা যদি সচেতন হয়, এবং পরিকল্পনা যদি বাস্তবভিত্তিক হয় – তাহলে বাংলাদেশের মুদ্রণ শিল্প আবারও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।

এই সভা ছিল কেবল একদিনের আনুষ্ঠানিকতা নয় – বরং একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দরজা খুলে দেওয়ার প্রথম ধাপ।