টঙ্গীতে খোলা ম্যানহোলে পড়ে নারীর মৃত্যু,জমজ সন্তানদের হাহাকার-২৪ ঘণ্টাতেও উদ্ধার হয়নি মরদেহ

নবজাগরণ প্রতিবেদন
টঙ্গী, গাজীপুর-২৯ জুলাই ২০২৫
টঙ্গীর একটি সড়কে খোলা ম্যানহোলে পড়ে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় চরম অব্যবস্থা, দায়িত্বহীনতা ও গাফিলতির চিত্র সামনে এসেছে। বৃষ্টির পানিতে ঢাকা সড়কে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন ওই নারী। হঠাৎ করে খোলা একটি ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তার মরদেহ উদ্ধার হয়নি।

নিহত নারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি একজন কর্মজীবী নারী এবং তার মাত্র আট বছর বয়সী জমজ দুইটি সন্তান রয়েছে। স্বামীহীন এই নারীর শিশু সন্তানেরা তাদের নানু-নানাওহীন নিঃসঙ্গ পরিবারে বেড়ে উঠছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,“আজ(মঙ্গলবার) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে মহিলাটি হাঁটুসমান পানিতে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। আচমকা তিনি খোলা ম্যানহোলে পড়ে যান। এক যুবক দৌড়ে এসে ধরার চেষ্টা করলেও মুহূর্তেই তিনি তলিয়ে যান।”

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিটি কর্পোরেশনের টিম ঘটনাস্থলে গেলেও, যথাযথ তৎপরতার অভাব ও দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা চোখে পড়ে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, “প্রথমে কয়েক মিনিট খোঁজাখুঁজি করেই ফায়ার সার্ভিস বসে পড়ে। সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করে। আবার সিটি কর্পোরেশন ফায়ার সার্ভিসকে দোষ দেয়। কেউই কাজ করেনি। এমনকি ৫টা বাজলে তারা ডিউটি শেষের কথা বলে ঘটনাস্থান ত্যাগ করে।”

ঘটনার পর থেকে জমজ দুটি শিশুর করুণ আর্তনাদ যেন রাষ্ট্রের বিবেককে প্রশ্ন করে। প্রতিবেশীদের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা শুধু বলেছে-
“আমাদের মা কোথায়? কেউ কি তাকে খুঁজে দিতে পারবে?”

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,“এই ম্যানহোলের ঢাকনাটা বহুদিন ধরে খোলা ছিল। বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি সিটি কর্পোরেশন। দুর্ঘটনা না ঘটলে তাদের টনক নড়ে না।”

দায় এড়াতে ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উদাসীনতা আরেকবার নগর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও অনিয়মকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা নিজেদের সীমিত দায়িত্ব দেখিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে। অপরদিকে সিটি কর্পোরেশন থেকেও কেউ স্পষ্ট বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

“আমরা কিছুই চাই না, শুধু লাশটা ফেরত চাই”-মহিলার স্বজন
নিহত নারীর পরিবারের এক সদস্য জানান,“আমরা কোনো বিচার চাই না এখন, শুধু তার মরদেহটা চাই। বাচ্চারা কিছু খায়নি, ঘুমায়নি-মা মা বলে কাঁদছে। যদি আর দেরি হয়, স্রোতে লাশটা দূরে চলে যাবে। তাহলে তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।”

বিশেষজ্ঞদের মতামত:নগর পরিকল্পনাবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “একটি আধুনিক শহরে ম্যানহোল খোলা থাকার ঘটনা একটি প্রমাণ যে, ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা ব্যর্থ। এই ধরনের অবহেলার ফলেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল লেগে থাকে।”

দায়িত্বে থাকা ও প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন:
কেন এক মাস ধরে খোলা ম্যানহোল সংস্কার করা হয়নি?
কেন জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো এই মৃত্যু ঠেকাতে ব্যর্থ হলো?
কেন একটি সাধারণ মায়ের লাশ উদ্ধারে এমন গড়িমসি?
যদি এই নারী কোনো জনপ্রতিনিধির স্ত্রী হতেন,তাহলে কি এমনই হতো?

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি,তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়নি। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের দাবি-“সন্ধ্যার পর কাজ করা সম্ভব হয়নি,কাল আবার অনুসন্ধান চালানো হবে।”এদিকে শিশুরা এখনো মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আর রাষ্ট্র? রাষ্ট্র এখনো ঘুমিয়ে!

প্রতিবেদন:মো:আবু তাহের পাটোয়ারী