নবজাগরণ ডেস্ক :
স্থান: কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম তারিখ: ৪ আগস্ট ২০২৫ সূত্র: স্থানীয় সাংবাদিক ও ভিডিও ফুটেজ
চৌদ্দগ্রামের এক হোটেলে দুপুরে ক্ষুধায় কাতর দুই ভাই এক প্লেট ভাত খায়। টাকা দিতে না পারায় তারা বের হয়ে দৌঁড়ানোর চেষ্টা করলে হোটেল মালিক ও কর্মচারীরা ধরে ফেলে। এরপর যে দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে, তা ১৯ শতকের দাসব্যবসা বা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।
ভিডিওতে দেখা গেছে-দুই ভাইয়ের একজনকে পেছন দিক থেকে দুই হাত বেঁধে ফেলা হয়েছে। অপরজনকে গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। দুজনকেই লাঠি দিয়ে বারবার পেটানো হচ্ছে, চিৎকার করে বলছে-ওআব্বা ও আব্বাগো “আম্মু আম্মু,” “ভাত খাইছি ভাই, মারেন না…” কিন্তু মার থামে না। চারপাশে উৎসুক জনতা, কেউ বাঁধা দিচ্ছে না, কেউবা আবার ভিডিও করছে-যেন এটা একটা বিকৃত বিনোদনের দৃশ্য!
এই অপরাধ কী? এক বেলা ভাত খেয়ে টাকা না দেওয়া! এই অপরাধের বিচার কি রাস্তায় পেটানো? বেঁধে রেখে অত্যাচার? এই লজ্জা কি শুধু ওই হোটেল মালিকের? না, এটা পুরো সমাজের, রাষ্ট্রের, প্রশাসনের!
রাষ্ট্র কোথায় ছিল?
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তারা “বিষয়টি খতিয়ে দেখছে”-এই শব্দটাই এখন প্রহসনের প্রতীক হয়ে গেছে। গরিব হলে বিচার নেই, অথচ হোটেল মালিকরা ধনী বা প্রভাবশালী হলেই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে?
আমরা জেনেছি, হোটেল মালিকের নাম মো. কামাল উদ্দিন, যার এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। তাই থানা থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। প্রশাসনের এই নীরবতা কি শুধুই ভয়, না এর পেছনে শ্রেণিস্বার্থও কাজ করছে?
রাষ্ট্রীয় ন্যায়বিচার কেবল পুঁজিপতিদের জন্য?
একটা রাষ্ট্রের চূড়ান্ত বিচার হয়-সে দুর্বলদের কীভাবে দেখছে,সেই আয়নায়। অথচ আজকের বাংলাদেশে কেবল ধনীর বাচ্চারা গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ মেরে মুক্তি পায়, রাজনীতিবিদরা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেও বিচারহীন থাকে-কিন্তু গরিব শিশু বা কিশোররা যদি ক্ষুধার্ত হয়ে এক বেলার খাবার খায়,তবে তার বিচার হয় রাস্তায়, গাছে বেঁধে লাঠি দিয়ে।
এই কি সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যে রাষ্ট্রের সংবিধানে লেখা আছে খাদ্য,বস্র;শিক্ষা; চিকিৎসা,আশ্রয় সবার মৌলিক অধিকার?এই অন্যায়ের প্রতিকার কী?
১. ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনতে হবে।
২. পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. আক্রান্ত দুই ভাইকে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. ভবিষ্যতে এমন ঘটনায় প্রতিক্রিয়া না দেখানো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান করতে হবে।
৫. দেশব্যাপী গরিবদের জন্য বিনামূল্যে কমিউনিটি ক্যান্টিন চালু করতে হবে।
ক্ষুধার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, গরিবের পক্ষে রাষ্ট্র চাই!
আমরা প্রশ্ন রাখি-এই রাষ্ট্র কার? পেটের দায়ে চুরি করে ভাত খাওয়া শিশুদের জন্য কি রাষ্ট্রের কোনো দায় নেই? রাষ্ট্রের দৃষ্টি কি কেবল পুঁজিপতিরা, করপোরেট মিডিয়া, আর ধনী পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেমেয়েদের জন্যই?
একটা রাষ্ট্রে শিশু বা কিশোর যদি ভাত চুরি করে তাহলে তার দোষ নয়-রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। শোষণ,বঞ্চনা আর বৈষম্যের ভিতরে জন্ম নেওয়া প্রতিটি ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য রাষ্ট্র যদি আশ্রয় না হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্রকে জনগণ আর মেনে নেবে না। বিচার শুধু হোটেল মালিকের না-বিচার চাই সেই রাষ্ট্রব্যবস্থার, যে ব্যবস্থা গরিবদের জীবনকে হেয় করে, পেটের ক্ষুধাকে অপরাধ বানায়।
এই হোটেল মালিকের বিচার হবে নিশ্চয়, কিন্তু যদি রাষ্ট্রের অবিচারের বিচার না হয়-তবে আগামী দিনে ক্ষুধার্তরা আর মাফ চাইবে না, লড়াই করবে! যেখানে ক্ষুধা সেখানে বিদ্রোহ-এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।