তারা চাচার খোলা চিঠি- ৬

প্রাপক: মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রেরক: গেরামের তারা চাচাপক্ষ

চাচা-গো আসসালামু আলাইকুম
বুঝেন তো-বাঙালির মন কচুপাতার পানি,নারীর মন। সংস্কার না করে কিসের নির্বাচন? গেরামের নব্বই ভাগ মানুষ চায়, কইলে কইবো- আপনে সবকিছুর আগে দেশটা গড়েন, নতুন করে সাজান। এই সুযোগ জীবনে আর ফিরে আসবেনা; আপনে সারাজীবন বেঁচে থাকবেন না। সময় ঘড়ির কাঁটা, সময় কাজের।

আমরা গেরামের তারা চাচারা ঠিক আগের মতো চা-চুঁই করে বসে থাকা লোক না। নদীর ধার ধরে কচুরিপানা বেঁধে আছি, খালটা যে দিন দিন ভরাট হয় -সেই খাল গোটাই আমাদের বাঁচার ও মারা’র ফারাক। চাচা খাল সংস্থার উদ্ধার না করলে বন্যা ডুবে মরবে-ইটা খুব সরল বাস্তব। আর ওইসব চাচা উপদেষ্টারা-যাদের কথা টেকলে-কলা বাতাসে ভেসে যায় -তারা ঠান্ডা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে; দেশের লজ্জা, জাতির হেতর হতবাগ।

আপনার কাছে কিছু সরাসরি দাবী আর প্রস্তাব নিচে রাখছি- গ্রামের ভেতর যেই ছোট-বড় কাহিনী চলছে, ওইখান থেকেই তুলে ধরা:

১) তৎক্ষণাৎ খাল উদ্ধারের প্রকল্প
কচুরিপানা পরিষ্কার খাল খননকে আমরা ভোট দেব- কিন্তু ভোট নয়, কাজ চাই। স্থানীয় মানুষের তালিকা নিয়ে, বেকারভাতা দিয়ে একটা প্রকল্প চালু করুন: খাল খনন, কাদাপচা তোলা, বাঁধ মজবুত করা। এতে দুইটা হবে-খাল মুক্ত হবে, লোকদের ন্যায্য আয় হবে।

২) চাঁদাবাজ তোলা-বাজ মুক্ত অঞ্চলের ঘোষণা ও দ্রুত প্রহরী ব্যবস্থা
যেখানে বাজার, মাদ্রাসা, রাস্তা, স্কুল-ওখানে কৌতুক করে চাঁদাবাজরা মাইরা বেড়ায়। প্রশাসনের তালিকা নিয়ে, স্থানীয় পর্যায়ের নাগরিক কমিটি গড়ে ঐসব বন্ড ভাইদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। কারও ক্ষমতার দরজা খুলে দিলে চলবেও না।

৩) স্বচ্ছতা ও স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ
প্রকল্পের অর্থ কোন ঠিকাদার কাকে দেবে, কাকে দিবে না- খালা-খুলে জনগণের সামনে পোস্ট করুন। প্রত্যেক ইউনিয়নে ‘খাল রেসকিউ কমিটি’ যেইটা দফতরে নয়, মানুষের। কমিটি নির্বাচিত হোক গ্রামের ভোটে- নগদ সহায়তার জন্য স্থানীয় মিস্ত্রী-শ্রমিক রেজিস্ট্রি থাকুক।

৪) আমলাচক্র ও ষড়যন্ত্রের প্রতি সতর্কতা
আমলাদের মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে-গ্রাম-শহর দুটোই জানে কেমনভাবে সাধারণ মানুষের দাবি চাপা পড়ে যায়। আপনের দফতর ও সহযোগী সংগঠনের কাছে অনুরোধ: যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গ্রাউন্ড-রিয়ালিটি যাচাই করুন। গোপন কাগজপত্র না করে খোলামেলা রিপোর্ট, গণশুনানি।

চাচাগো, কিসের জন্য আমরা বলি – দেশটা নতুন করে সাজাতে হবে। রাজনীতি যদি কেবল বকবক আর কাগজে নূন্যতম পরিবর্তন থাকে, তাতে কাজ হবে না। যে রাজনীতি লোকসেবা করতে অক্ষম, সেটারে আমরা দরকার নাই। আপনে যদি যাচাই করে, দেখেন বাস্তবে কেমন কষ্ট হয়-খালি কাগজে দাঁড়িয়ে বললে ফল হয় না। তাই আমি, আমরা-তারা চাচারা- সরাসরি কাজ চাই; সিদ্ধান্ত নিন, পাশ কাটাবেন না, এবং আমাদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে দিন।

শেষে একটাই কথা-চাচারা আলোর ডাক দেয়- আলোড়ন খাটান। যদি খাল বাঁচে, মাঠ বাঁচে, মানুষ বাঁচে -দেশটা বাঁচবে। আমরা আপনার থেকে নয়, আমরা আপনার সাথে কাজ চাই। রাজনীতির লাইনে নয়, জনগণের লাইনে কাজ হলে তবেই কিছুর পুঁজি রক্ষা পাবে।

চাচারা রুখে আছে, কচুরিপানা বুকে ঘুমায় না। উঠে দাঁড়ান- আমাদের হাতে হাত দিয়ে দিন। না হলে কবরেই সব চাইলে কালো ছাপ যাবে।

খাল বাঁচাও, দেশ বাঁচাও
(তারা চাচার গেরামের গান)

খালটা ভরাট, কচুরিপানা,
নদীর বুকটা শুকায় কানা-
বন্যা আসলেই ভাসে গ্রাম,
চাচার চোখে জমে ঘাম।

চাঁদাবাজে রাস্তা আটক,
তোলাবাজে খায় সব ফাঁক-ফোক,
বাজার-ঘাটে ভয়ের হাওয়া,
শান্তি কোথায়, কে জানে কাওয়া!

ইউনূস চাচা, শুনেন ডাক,
গেরামের প্রাণে উঠছে শাক,
খাল খননের বাজনা বাজে,
বেকার হাতে কাজটা সাজে।

আমলা-চক্রে ষড়যন্ত্র ঘোরে,
সত্য লুকায় কাগজ-ভোরে,
গেরামের মন চায় শুধু-
কাজ হোক মাঠে, হাতে, হৃদু।

যদি খাল বাঁচে, মাঠটা হাসে,
ধানের গন্ধে দেশটা ভাসে,
তারা চাচা জানে এই কথাটা-
খাল বাঁচানোই প্রাণের নাটকটা।

ইতি-গেরামের তারা চাচাপক্ষ
(আপনার সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায়-মাঠ থেকে)