ড. ইউনূসের গণভোট এড়িয়ে জাতীয় নির্বাচনে যাত্রা:তার নিজের জন্যই বিপজ্জনক সমীকরণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
-অধ্যাপক এম এ বার্ণিক

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস নিজের বৈধতা, জুলাই ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের বৈধতা এবং ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর স্থগিত রেখে চলেছেন। এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন সিদ্ধান্তের ফলে শুধু ড. ইউনূসের নেতৃত্বের নৈতিক ও রাজনৈতিক ভিত্তিই প্রশ্নের মুখে আসে না, বরং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ, সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দায়িত্ব পরবর্তী সরকারে স্থগিত থাকায় আন্দোলনের অর্জিত অধিকার, সামাজিক প্রত্যাশা এবং জনগণের আস্থা সরাসরি ঝুঁকিতে পড়ে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে রাষ্ট্রনেতারা নিজেদের বৈধতা প্রতিষ্ঠায় গণভোটের মাধ্যমে জনমতের সমর্থন গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে গণভোটের মাধ্যমে নিজের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই গণভোট জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছিল এবং সরকারের প্রতি আস্থা যাচাইয়ের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছিল।

ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে, গণভোট এড়িয়ে সরাসরি জাতীয় নির্বাচনে যাওয়া সময়সাশ্রয়ী মনে হতে পারে, তবে তা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং নেতাদের নিরাপত্তা ও আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল করতে পারে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া হলে দেখা যায়, গণভোটের মতো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়া নেতা ও আন্দোলন উভয়ের বৈধতা সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফলত, ড. ইউনূসের এই সিদ্ধান্তকে শুধু প্রশাসনিক হিসাব-নিকাশ হিসেবে দেখা ঠিক নয়; এটি একটি জটিল, বিপজ্জনক সমীকরণ তৈরি করছে, যেখানে গণ-অভ্যুত্থানের নেতারা রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে সংবেদনশীল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন। দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে এটি নতুন বিতর্ক ও অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে।