মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
নোয়াখালীর বুকে আজ এক নতুন সূর্যোদয় ঘটছে। বহুদিন ধরে গিলে খাওয়া খাল, দখলদার সিন্ডিকেটের লোভের শিকার জলপ্রবাহ, আজ আবারও জনগণের কাছে ফিরে আসছে।চৌমুহনী বাজার থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, চাটখীল,সোনাইমুড়ী, কোম্পানিগঞ্জ থেকে সদর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিটি উপজেলায় জনগণ সোচ্চার হচ্ছে-“আমাদের খাল আমাদের জীবন”-এই স্লোগানে।
দখলদারদের লোভ, জনগণের রক্ত
কিছু মানুষের অতি লোভে প্রতিদিন কষ্ট পাচ্ছে হাজারো মানুষ। বর্ষায় জলাবদ্ধতা, কৃষিক্ষেত্রে পানির সংকট, নষ্ট হওয়া পরিবেশ-সব কিছুর মূলে রয়েছে খাল দখলের মহাসিন্ডিকেট। এই দখলবাজদের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া, প্রশাসনিক উদাসীনতা।জনগণ বুঝে গেছে-এটি কেবল একটি খালের সংকট নয়; এটি অধিকারের সংকট, মানবাধিকারের সংকট।
প্রশাসনের ভূমিকা: যথেষ্ট নয়
সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে চৌমুহনীতে খাল উদ্ধার সফল হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পদক্ষেপ যদি জেলা-ব্যাপী না হয়, তাহলে এই লড়াই বৃথা যাবে। এখন দরকার প্রতিটি উপজেলায় নিয়মিত অভিযান, ডিজিটাল রেকর্ড তৈরি,কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। প্রশাসনের চোখে আঙুল দিয়ে জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে-খাল উদ্ধার ছাড়া বিকল্প নেই।
জনগণের শক্তি: এক সমুদ্র নবজাগরণ
এ লড়াই কোনো একক সংগঠন বা ব্যক্তির নয়। এন-ডি-এন যুব সংঘ, প্রত্যাশা সমাজ কল্যাণ যুব সংঘ, গ্রাম বাংলা যুব সংঘ-এরা কেবল সূচনা করেছে।কিন্তু মূল শক্তি হলো-গ্রামের সাধারণ মানুষ। তারা একসাথে দাঁড়ালে দখলবাজ সিন্ডিকেট পালানোর জায়গা পাবে না। আজ যদি সেনবাগ,বেগমগঞ্জ,চাটখীল,সোনাইমুড়ী,কোম্পানিগঞ্জ ও সদর-প্রতিটি উপজেলা খাল উদ্ধার আন্দোলনে জেগে ওঠে, তবে নোয়াখালী এক নতুন মুক্তির ইতিহাস লিখবে।
পরিবর্তনের ডাক:এই আন্দোলন কেবল পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য নয়;এটি একটি সামগ্রিক সামাজিক বিপ্লব। মানুষ আর দখলদারদের করুণার অপেক্ষায় থাকতে চায় না। তারা চায় নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়তে। খাল উদ্ধার মানে শুধু পানি নয়, কৃষির উন্নয়ন, দুর্যোগ প্রতিরোধ,পরিবেশ সুরক্ষা, এবং মানুষের শান্তিতে বসবাসের অধিকার।
আজকের খাল উদ্ধার আন্দোলন আসলে নোয়াখালীর মানুষের স্বাধীনতার দ্বিতীয় লড়াই। যেমন একদিন তারা মুক্তির জন্য অস্ত্র ধরেছিল, আজ তারা খাল উদ্ধারের মাধ্যমে নতুন মুক্তির পথ খুঁজছে। এই লড়াই টিকে থাকুক,ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি খাল, প্রতিটি গ্রামে। নোয়াখালী প্রমাণ করুক-জনগণ চাইলে কোনো শক্তিই জনগণের নদী, খাল,মাঠ কেড়ে নিতে পারে না।
(হৃদয়জুড়ানো কবিতা)
খাল আমাদের জীবনধারা,
বুকে বইতো শস্যধারা,
দখলদারের লোভের বাঁধে,
ডুবে গেছে গ্রাম-পাড়া।
চৌমুহনীতে শুরুর ডাক,
সেনবাগে জাগে একসাথ,
সোনাইমুড়ী কোম্পানীগঞ্জে,
গর্জে ওঠে নতুন রাত।
বেগমগঞ্জে রক্তস্মৃতি,
চাটখীলে জাগে প্রতিশ্রুতি,
সদর বাজার গেয়ে ওঠে-
“খাল বাঁচাও,জীবন বাঁচাও”সত্যগীতি।
হে নোয়াখালী,জাগো আজ,
দখল ভাঙো,ভাঙো লাজ,
জনতার শক্তি এক সমুদ্র,
বদলাবে ভাগ্যের কাব্যরাজ।
লেখক:সম্পাদক
নবজাগরণ