নবজাগরণ রিপোর্ট:
সিলেট-বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক। পাহাড়, নদী, হাওর আর চা-বাগান মিলিয়ে এই অঞ্চলকে বলা হয় দেশের পর্যটন রাজধানী। কিন্তু এই সৌন্দর্যের বুক চিরে বহু বছর ধরে চলছে এক ভয়াবহ পাথর-সিন্ডিকেটের দখলদারি খেলা। নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, পাহাড় কেটে বিক্রি করা, এমনকি প্রশাসন ও গণমাধ্যমের ওপর ভয় দেখিয়ে টিকে থাকা-সবই এই মাফিয়াদের দীর্ঘদিনের চর্চা।
সম্প্রতি সিলেটে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছেন আলোচিত ও সাহসী কর্মকর্তা সারওয়ার আলম। যোগদানের পরপরই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন-“সুন্দর সিলেট গড়তে অবৈধ দখল, দুর্নীতি ও পাথর-সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই ঘোষণার বাস্তবায়ন শুরু হতেই সিলেটে নড়ে উঠেছে সেই অন্ধকার জগৎ।
অভিযানে হামলা: প্রশাসন ও সাংবাদিক টার্গেটে
সিলেট জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে সম্প্রতি কয়েক দফা অভিযান চালায় অবৈধ পাথর উত্তোলনকারী গডফাদারদের বিরুদ্ধে। এই অভিযানে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে মাফিয়ারা প্রশাসন ও সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। হামলার কৌশল স্পষ্ট-প্রশাসনের ভেতর ভয় ঢোকানো এবং গণমাধ্যমকে চুপ করানো। কারণ তারা জানে, যদি সত্যটা মানুষের সামনে আসে,তাহলে তাদের কোটি কোটি টাকার সাম্রাজ্য ধসে পড়বে।
কেন এত বেপরোয়া এই সিন্ডিকেট?
১.রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়: দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে এই দখলদার চক্র।
২.অর্থনৈতিক লোভ:একটি নদী বা পাহাড় থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথরের বাজারমূল্য কোটি টাকার ওপরে।
৩.দুর্বল আইন প্রয়োগ: বহুবার অভিযান হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মামলা দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে যায়, অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়।
৪.জনগণের ভয়:সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে মুখ খোলে না, ফলে সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী হয়।
নতুন জেলা প্রশাসকের বার্তা-
সারওয়ার আলমের যোগদানকে সিলেটবাসী অনেকেই নতুন আশার আলো হিসেবে দেখছে। আগে র্যাব-এর অভিযান থেকে শুরু করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে তার সাহসী ভূমিকা তাকে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত করেছে।এবার তিনি সিলেটে এসে ঘোষণা দিয়েছেন-“আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
এই ঘোষণার পর থেকে জনগণের মধ্যে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম চায়, সিলেটকে আবার সেই সবুজ-নির্মল সৌন্দর্যের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু বাস্তবতা হলো,পাথর-মাফিয়ারা এতদিনে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, তা ভাঙতে সময়, সাহস ও জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
গণমাধ্যমের ভূমিকা-
আজকের এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা শুধু একটি ঘটনা নয়-এটি আসলে জনগণের চোখ-কান বন্ধ করার ষড়যন্ত্র। তাই গণমাধ্যমকে আরও সাহসী হতে হবে, সত্য প্রকাশ করতে হবে। প্রশাসন একা পারবে না,জনতার সহযোগিতা ছাড়া এই যুদ্ধে জয় সম্ভব নয়।
সিলেটের পাহাড়,নদী,প্রকৃতি বাঁচাতে হলে পাথর-সিন্ডিকেটকে ভাঙতে হবে। সারওয়ার আলমের মতো সাহসী প্রশাসক যদি জনগণ ও গণমাধ্যমের পাশে দাঁড়াতে পারেন, তবে সুন্দর সিলেট গড়া সত্যিই সম্ভব।
কিন্তু এই যুদ্ধে সবার আগে প্রয়োজন-জনগণের ঐক্য, গণমাধ্যমের নির্ভীক ভূমিকা,আর আইনের কঠোর প্রয়োগ।
কবিতা: পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে সিলেটের আর্তনাদ
নদী কাঁদে,পাহাড় কাঁদে,
ধ্বংস নামে ছায়ার মতো-
লোভী হাতের আঘাতে আজ
সিলেট হারায় তার প্রভাতের আলো।
পাথরখেকোরা খনন করে,
রক্ত ঝরে নদীর বুকে,
প্রকৃতির কান্না শুনতে কি পায়
মানুষের মুখোশধারী দানবরা?
কিন্তু দাঁড়িয়েছে মানুষ এবার,
দাঁড়িয়েছে প্রশাসন, সাংবাদিক, জনতা-
সিলেট চাই আবার সবুজ হোক,
সুন্দর হোক আমাদের ভবিষ্যৎ।
এবার লড়াই প্রকৃতির জন্য,সিলেটের জন্য,ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।
বিস্তারিত জানতে পড়ুন শেয়ার করুন অনলাইনে:
www.thenabajagaran.com