রাজনীতি সেবা না স্বার্থ:দুর্নীতি ও চুরির জালবাহন ভেঙে নতুন বাংলাদেশের ডাক

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
বাংলাদেশ আজও একটি রাজনৈতিক দ্বিধার মধ্যে থমথমে অবস্থায় আছে। প্রতিটি নির্বাচনের পর আমরা দেখি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গনে জালিয়াতি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ব্যক্তিস্বার্থের শৃঙ্খল আরও দৃঢ় হচ্ছে। জনগণ ভোট দেয় কিন্তু সেই ভোট যেন শুধুই একটি নাটকীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে, যেখানে জনগণের আশা আর স্বপ্ন নিপীড়নের যন্ত্রে রূপান্তরিত হয়। এই অবস্থা যখন দীর্ঘ সময় ধরে চলে, তখন মানুষ হতাশ হয়, রাজনৈতিক উদ্দীপনা ম্লান হয়, এবং সৎ রাজনীতির প্রতি বিশ্বাস ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসে।

বাংলাদেশের রাজনীতি যদি সত্যিই জনগণের কল্যাণে কাজ করতো, তাহলে আমরা কখনও শিক্ষাক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যখাতে, কৃষি ও শিল্প খাতে এমন অব্যবস্থা দেখতে পেতাম না। দুর্নীতি ও চুরির এই সিস্টেমের কারণে লাখ লাখ মানুষ নিরাশ্রয়, শিশু ও কিশোররা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, আর সৎ কর্মীরা প্রগতির পথ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। এখানে রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত-সেবা। কিন্তু আজকের বাস্তবতা দেখাচ্ছে, রাজনীতি হয়েছে স্বার্থের এক বিশাল কেলেঙ্কারি, যেখানে ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত সুবিধা অর্জনই প্রধান উদ্দেশ্য।

আমরা যে দেশটিকে “উন্নয়নের দেশ” বলি, সেখানে এখনও কোটি কোটি মানুষ মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক অধিকারগুলো এতই অবহেলিত যে, নাগরিকরা নিজেদের অধিকারের জন্যই সংগ্রাম করতে বাধ্য। এর পেছনে একটিই প্রধান কারণ-দুর্নীতি ও স্বার্থান্বেষী রাজনীতি। রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতার আসনে বসে রাষ্ট্রকে তাদের ব্যক্তিগত ভাণ্ডারে পরিণত করেছেন। সরকারি অর্থনীতি, সরকারি প্রকল্প, প্রশাসনিক ক্ষমতা-সবই এখন স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার।

দুর্নীতি এবং চুরি বন্ধ হলে স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতিতে আগ্রহ জন্মাবে। সৎ মানুষরা তখন রাজনীতিতে আসবে, তাদের উদ্দেশ্য হবে জনগণের সেবা। রাজনৈতিক পরিসর হবে স্বচ্ছ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে গণতান্ত্রিক, এবং দেশের সম্পদে জনসাধারণের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প-সব খাত সমৃদ্ধ হবে। দেশের সীমানার ভেতরে থাকবে সুব্যবস্থা, বাইরে থাকবে সম্মান।

কিন্তু এই পরিবর্তন সহজে হবে না। আমাদের প্রয়োজন বিপ্লবী মনোভাব, সৎ নেতৃত্ব, এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এটি শুধুই প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে সম্ভব নয়; আমাদের নিজস্ব সচেতনতা এবং নৈতিকতার শক্তির মাধ্যমে এটি সম্ভব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, স্বচ্ছ নির্বাচন, প্রশাসন ও আদালতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণকে শিক্ষিত, সক্রিয় এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে।

আমরা যদি আজও শান্ত থাকতে চাই, যদি দীর্ঘমেয়াদে সত্যিকার উন্নয়ন চাই, তবে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনীতিকে সেবা-মূলক করতে হবে, স্বার্থমুক্ত করতে হবে। নেতৃত্বকে থাকতে হবে নৈতিক, দায়িত্বশীল এবং সাহসী। জনতার অংশগ্রহণকে হতে হবে সক্রিয় এবং সমালোচনামূলক। সৎ নেতৃত্ব ও সক্রিয় জনগণ একসাথে না হলে, আমাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ কেবল একটি অবাস্তব কল্পনা থেকে বেশি কিছু হবে না।

এটি সময়ের দাবি, সময়ের ডাক। আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষকে, বিশেষ করে যুবকদের, রাজনৈতিক সচেতন হতে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, এবং স্বার্থনিষ্ঠ রাজনীতির পরিবর্তে সেবা-মূলক রাজনীতির জন্য লড়তে হবে। আমাদের রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড শক্ত করতে হবে, জনগণের বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে। আর তখনই আমরা দেখতে পাবো-রাজনীতির আলো শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য নয়, বরং জনগণের কল্যাণে ঝকঝকে জ্বলে উঠছে।

দুর্নীতি ও চুরি বন্ধ করলে রাজনীতি হয়ে উঠবে সেবা, স্বার্থহীন উদ্যোগ, এবং নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপনের মূল শক্তি। সেই দিন আর দূরে নয়, যদি আমরা সবাই একযোগে চলি। আমাদের কণ্ঠ, আমাদের চেতনা, আমাদের কর্ম-এগুলোই নতুন বাংলাদেশ গঠনের চাবিকাঠি।

আমরা চাই রাজনীতি সেবা হোক, স্বার্থ নয়। আমরা চাই প্রশাসন দুর্নীতি মুক্ত হোক। আমরা চাই মানুষ পুনরায় রাজনীতির প্রতি আশা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনুক। এই সংগ্রাম সহজ নয়, কিন্তু অসম্ভবও নয়। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব এই বিপ্লবী সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা।

বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস লেখা হবে তখনই,যখন আমরা স্বার্থকে পিছনে ফেলে সেবা, ন্যায় ও জনগণের কল্যাণকে সামনে রাখব। এই পরিবর্তনকে শুধু স্বপ্ন নয়,বাস্তব বানাতে হবে। আর বাস্তব হবে-যদি আমরা হই সক্রিয়, নৈতিক এবং একত্রিত।

দুর্নীতি ভেঙে, স্বার্থ ত্যাগ করে, আমরা গড়ব নতুন বাংলাদেশ।

লেখক: সম্পাদক
নবজাগরণ
অনলাইনে পড়তে: www.thenabajagaran.com
দুর্নীতি মুক্ত দেশ আমাদের স্বপ্ন চাইলে শেয়ার করুন।