(একটি সতর্ক,তথ্যভিত্তিক ও সাড়াজাগানো লেখা-বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর দাবি ও জাতীয় স্বার্থের জন্য প্রণীত)
মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
ধনী জেলা নোয়াখালী-শুধু একটি জেলা নয়, এটি এক সামাজিক-ঐতিহাসিক একক, সমুদ্র-সীমার কনফিগারেশন, প্রবাসী-অর্থনীতি, নদীর ক্ষয়ে গড়া জনজীবন এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি অনন্য শক্তি। আজ যখন প্রশাসনিক পুনর্গঠন এবং অঞ্চলের নতুনভাবে সংহতকরণ নিয়ে কথা হচ্ছে, তখন একটি স্পষ্ট,ন্যায্য ও অসঙ্কোচ দাবি উঠেছে: নোয়াখালীকে বিভাগের মর্যাদা দিতে হবে। এই দাবি দয়া বা অনুকম্পার ফল নয়-এটি বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর অধিকার, এবং জাতীয় চাহিদার সঙ্গে সমান্তরাল।
নিচে এই দাবির ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক,অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ভিত্তি বিশ্লেষণসহ একটি সুসংহত,তথ্যসমৃদ্ধ যুক্তি উপস্থাপন করা হলো-যার লক্ষ্য সরকার, নীতি-নির্ধারক, মিডিয়া ও জনমানসকে জানান দেওয়া যে নোয়াখালী বিভাগের দাবি কেবল আবেগ নয়; এটি যুক্তি,পরিসংখ্যান ও দেশচিন্তা দ্বারা সমর্থিত একটি যৌক্তিক প্রস্তাব।
১) ইতিহাস ও প্রশাসনিক বিবর্তন: নোয়াখালীর পরিচয় ও বিভাজন-নোয়াখালী অঞ্চলের ইতিহাস দীর্ঘ এবং জটিল। ঐতিহ্যগতভাবে ‘ভুলুয়া’ নামে পরিচিত অঞ্চলটি ব্রিটিশ শাসনকালে পর্যায়ক্রমে গঠিত হয়; জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮২১ সালে এবং ১৮৬৮ সালে নামকরণ হয়ে ‘নোয়াখালী’। ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে পূর্ববর্তী বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলকে ভাগ করে তিনটি জেলা করা হয়-বর্তমান নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর। সেই বিভাজন যদিও প্রশাসনিক রূপে কার্যকর হয়েছে, কিন্তু বৃহত্তর নোয়াখালীর ঐতিহাসিক,সামাজিক ও অর্থনৈতিক জোট এখনও টুকরো টুকরোভাবে কেটে গেছে; ফলে অঞ্চলটির স্ববিরোধ ও স্বাধিকারের দাবি আজও প্রাণবন্ত আছে।
২) জনসংখ্যা ও মানবসম্পদ:বৃহত্তর জনশক্তির বাস্তবতা
জাতীয় সিরিজ-সেন্সাসের সাম্প্রতিক ফলাফল দেখায়-নোয়াখালী জেলা (নতুন সীমার মধ্যে) ২০২২ সালের আদমশুমারিতে প্রায় ৩.৬-৩.৭ মিলিয়ন মানুষের বসবাসধারণ করেছে; গড় সাক্ষরতার হার জাতীয় গড়ের সঙ্গে প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বয়সভিত্তিক কাঠামো তরুণ ও কর্মক্ষম। অঞ্চলটির ঘনত্ব, উপকূলীয় দ্বীপ-উপকূল চর ও নদীভিত্তিক জীবনব্যবস্থা বিবেচনায় এনে সার্বিক প্রশাসনিক সেবা প্রদান ও অবকাঠামো বিনিয়োগে পৃথক বিভাগীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠার যুক্তি তৈরী হয়। (সিটিসেন্সাস রিপোর্ট ও জেলা রিপোর্ট থেকে পরিসংখ্যান)।
৩) অর্থনীতি,প্রবাসী অর্থ ও রাজস্ব: নোয়াখালীর অনবদ্য অবদান-
আজকের বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স একটি স্ট্র্যাটেজিক শক্তি-প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা জাতীয় বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জেলা-ভিত্তিক ব্যাংক রিপোর্ট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানগুলো দেখায় যে-চট্টগ্রাম বিভাগ সম্প্রতি পুরো দেশের রেমিট্যান্সে উল্লেখযোগ্য অংশ ধারন করেছে; তন্মধ্যে নোয়াখালী জেলা মাসিক ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ ডলার রেমিট্যান্স গ্রহণ করে (বিভিন্ন মাসের জেলা-ভিত্তিক ডেটা)। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে-নোয়াখালী শুধু স্থানীয় অর্থনীতি নয়,জাতীয় বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহেও ভূমিকা রাখে; সুতরাং প্রশাসনিক মর্যাদার প্রশ্নে অর্থনৈতিক অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি থাকা প্রয়োজন।
বিস্তারিত সূচক:বাংলাদেশ ব্যাংকের জেলা-ভিত্তিক রেমিট্যান্স তালিকায় নোয়াখালীর নাম নিয়মিত উপস্থিত; চট্টগ্রাম বিভাগ শতকরা প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা তার বেশি অংশ দান করে-এটি কেবল নগদ আয়ের পরিসংখ্যান নয়,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ইঙ্গিতও বহন করে।
৪) ভূগৌলিক ও জলবায়ু-ঝুঁকি:কেন প্রশাসনিক স্বাধীনতা জরুরি
নোয়াখালী কোস্টাল জোন-এখানে দ্বীপ,চর,সমুদ্রসীমা ও প্রধান নদী (মেঘনা-ফেনী-ডাকাতিয়া নদী) রয়েছে। সমুদ্রতীরভূমি, নাব্যতা, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি-প্রবণতা অন্য যে কোনো অভ্যন্তরীণ জেলা থেকে আলাদা শ্রেণীতে পড়ে। আগামীর জলবায়ু-ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয় পরিকল্পনা, দ্রুত দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া, উপকূলীয় অবকাঠামো উন্নয়ন-এসব সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ও আঞ্চলিক বাস্তবায়ন কার্যকারিতার মধ্যে দূরত্ব কমাতে বিভাগীয় স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট। একটি স্বতন্ত্র বিভাগ থাকলে দুর্যোগ-প্রতি প্রতিক্রিয়া, পুনর্বাসন,আর্থসামাজিক পুনর্গঠন দ্রুত ও কার্যকর হবে-এটি কেবল লোকাল নয়, জাতীয় নিরাপত্তাও জড়িত।
৫) সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিচয়: মর্যাদা ও আত্মপরিচয়ের জিজ্ঞাসা
নোয়াখালীবাসী-দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে,সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও সামাজিক কার্যক্রমে দীর্ঘকালীন অংশগ্রহণকারী। ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চল সংগ্রাম ও রাজনৈতিক প্রতিরোধে সক্রিয় ছিল; স্থানীয় জনমনে প্রশাসনিক পরিচয়ের পরিবর্তন মানে কেবল প্রশাসনিক মাপে সামঞ্জস্য নয়-এটি সাংস্কৃতিক মর্যাদা, রাজনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিক উপস্থিতি ও আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন। ফলে কুমিল্লার (কুমিল্লা/Comilla) অধীনে নোয়াখালীকে যুক্ত করার যে প্রস্তাব নানা সময়ে এসেছে, তা স্থানীয় জনগণের দ্বিধাহীন প্রতিরোধের মুখে পড়েছে-মানুষ চান তাদের ভূগোল ও ইতিহাস অনুযায়ী স্বীকৃতি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মানুষ সরাসরি রাস্তায় নেমে মানবশৃঙ্খল তৈরি করে, কম্পন সৃষ্টি করেছে-এই রাজনৈতিক ইঙ্গিতকেও উপেক্ষা করা যাবে না।
৬) সাম্প্রতিক গণআন্দোলন ও সংগঠন:দাবি টিকে উঠছে জনমানসে
গত বছর থেকে (২০২৪-২০২৫)নোয়াখালীবাসীর মধ্যে বিভাগ ঘোষণার দাবি নতুনভাবে জেগে উঠেছে-মানবশৃঙ্খল, বিক্ষোভের আয়োজন এবং অনলাইন-পিটিশন সবই প্রকাশ করছে যে এটি কেবল একদল নেতার‘উন্মুক্তা’নয়;এটি বৃহত্তর জনদাবি। স্থানীয় আইনজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ব্যবসায়ী মহলও এই দাবির সাথে সখ্যতা দেখাচ্ছেন; কিছু কণ্ঠ সরকার ও সংবাদমাধ্যমের নজর কাড়ার চেষ্টা করেছে-এগুলোর মধ্যে অনেকে সরাসরি ‘ডিভিশন ও বিমানবন্দর’ দাবিও উত্থাপন করেছেন, যা দেখায় দাবি কেবল প্রশাসনিক মর্যাদা নয়;আঞ্চলিক যোগাযোগকেন্দ্র ও অর্থনীতির বিকাশও অনুষঙ্গ। (সংবাদসূত্রে মানবশৃঙ্খল ও রায়-দাবি বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে)।
৭) নীতিগত-আইনি প্রেক্ষাপট:বিভাগের সৃষ্টি-প্রসঙ্গ ও নজির
বাংলাদেশ সরকার অতীতে নতুন বিভাগ সৃষ্টি করেছে-উদাহরণস্বরূপ: রংপুর (২০১০), ময়মনসিংহ (২০১৫) ইত্যাদি। এই নজির প্রকাশ করে যে প্রশাসনিক বিভাজন সম্ভব এবং প্রয়োজনীয়তা বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হতে পারে। তাই নোয়াখালীকে বিভাগে উন্নীত করার বিষয়ে পরিষ্কারভাবে অপেক্ষা করে থাকা কোনো অপ্রত্যাশিত কাজ নয়; বরং এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হয়ে উঠতে পারে যদি প্রশাসনিক দক্ষতা,অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও স্থানীয় জনগণের ইচ্ছে-এই তিনটি একসাথে মিলে যায়।
কীভাবে ‘নোয়াখালী বিভাগ’হবে-বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ (প্রস্তাবিত ধাপসমূহ)
সরকার ও স্থানীয় নেতৃত্ব যদি সত্যিই নোয়াখালীকে বিভাগ হিসেবে গঠনের সংকল্প গ্রহণ করে, তাহলে নিম্নলিখিত বাস্তব-পর্যায়গুলো গ্রহণ করা উচিত-যাতে সিদ্ধান্তটি শুধু রাজনৈতিক উদ্দীপনায় ভর করা না থাকে, বরং স্থায়ী উন্নয়ন ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পথ সুগম করে:
১.স্বতঃস্ফূর্ত জনমতের মূল্যায়ন ও স্থানীয় কনসালটেশন: জেলা-ভিত্তিক জনগণ, ইউনিয়ন-সভা, ব্যবসায়ী সংগঠন, প্রবাসী ফোরাম, নারীরা, মাছ-মজলিক মালিকেরা-এই সব স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়া। (মানবশৃঙ্খল, পিটিশন ও মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলিকে সরকার পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে নেবে)।
২.ফিজিবিলিটি ও অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন:বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মিলিয়ে জেলা-ভিত্তিক আর্থিক প্রভাব, রেমিট্যান্স ডিপেন্ডেন্সি, রাজস্ব-ইনফ্লো ও অবকাঠামো-চাহিদার হিসাব করা হবে। রেমিট্যান্স ও আঞ্চলিক অর্থনীতির ডেটা পূর্বে সংগ্রহ করা আছে-এগুলো নীতির ভিত্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
৩.প্রশাসনিক কাঠামো পরিকল্পনা: বিভাগীয় সদর,জেলার অধীনে উপ-প্রশাসনিক ইউনিট, বিভাগীয় পরিষদ,পুলিশিং ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইউনিট-এসব কিভাবে গঠিত হবে তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। বিশেষত উপকূলীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় ‘ডিজাস্টার রেসপন্স সেল’ স্থাপন করা যেতে পারে।
৪.অবকাঠামো বিনিয়োগ:বিমানশাহি বা আঞ্চলিক এয়ারপোর্ট, আধুনিক স্বাস্থ্য-বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, সমুদ্র-অর্থনীতির জন্য মৎস্য ও পরিবহন নেটওয়ার্ক, ও একটি অর্থনৈতিক জোন-এসব বিনিয়োগ নৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত করা হবে যদি বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় ব্যবসায়িক দাবিই (কিছুমাত্র সংবাদে রিপোর্ট করা হয়েছে) ‘বিমানবন্দর’দাবির সঙ্গে জড়িত;এটি যথাযথভাবে মূল্যায়নযোগ্য।
৫.আইনি প্রক্রিয়া ও সংসদীয় অনুমোদন:প্রস্তাব বিজ্ঞানভিত্তিক রিপোর্ট ও স্থানীয় সাপোর্ট ছাড়াও সরকারকে প্রয়োজনীয় আইনগত ও প্রশাসনিক ধারা মেনে সংসদে প্রস্তাব রাখতে হবে-যা পূর্ববর্তী বিভাগ সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মতোই হবে। (রংপুর ও ময়মনসিংহ সৃষ্টি-এগুলো কার্যপ্রণালী হিসেবে রেফারেন্স)।
কেন চট্টগ্রাম না-কুমিল্লা(কুমিল্লার সাথে যুক্তিকরণ) নয়: ভূগোল ও আইডেন্টিটি
কিছু প্রস্তাব রয়েছে নোয়াখালীকে কুমিল্লার (সাম্প্রতিকভাবে কুমিল্লা নামে পরিচিত) সাথে যুক্ত করার;এই ধরনের প্রস্তাবের পেছনে হয়তো প্রশাসনিক সুবিধা বা মানচিত্র-রেডিসাইনিংয়ের যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবে:
ভৌগোলিক সংযোগ:নোয়াখালী ভৌগোলিকভাবে চট্রগ্রাম-উদ্ভূত উপকূলীয় ও সমুদ্র-সংক্রান্ত ভূখণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত; কুমিল্লা অভ্যন্তরীণ পার্বত্য বা উপত্যকা-ফাঁকীর সঙ্গে ভিন্ন প্রকৃতির। উপকূলীয় সমস্যা ও সমুদ্র-অর্থনীতি কুমিল্লার কেন্দ্রিক প্রশাসনিক পরিকল্পনায় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে না।
সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পারস্পরিকতা:নৌপথ,সমুদ্র-সম্পদ, মৎস্যশিল্প ও প্রবাসী নেটওয়ার্ক-এসব চট্টগ্রাম-নোয়াখালী-ক্ষেত্রের সাথে মিল আছে,কুমিল্লার সঙ্গে নয়। তাই নোয়াখালীবাসী কুমিল্লার অধীনে যুক্ত করাকে মানসিক ও বাস্তব অনুচিত মনে করে। সাম্প্রতিক মানবশৃঙ্খল ও প্রতিবাদ এ বাস্তব উদ্বেগের প্রতিফলন।
সম্ভাব্য আপত্তি ও যুক্তি-প্রতিউত্তর
আপত্তি ১: “একটি নতুন বিভাগ তৈরি করলে অতিরিক্ত ব্যয় ও প্রশাসনিক জটিলতা বাড়বে।”
প্রতিউত্তর: বিভাগীয় পুনর্গঠন যদি কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ থাকে, অর্থাৎ কোনও সম্পদ বা বাস্তব নীতি বদল না করে করা হয়, তাহলে ব্যয়-অবিচার হতে পারে। কিন্তু যদি বিভাগটি স্থানীয় পরিকল্পনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা, অবকাঠামোতে বিনিয়োগের দরজা খুলে এবং রেমিট্যান্স-কেন্দ্রিক অঞ্চলে রাজস্ব বৃদ্ধির কারণ হয়-তবে প্রথমিক ব্যয় দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে রিটার্ন আনবে। এ কারণে ফিজিবিলিটি স্টাডি অপরিহার্য।
আপত্তি ২: “বিভাগ বাড়ালে রাজনৈতিক বিভাজন বাড়তে পারে।”
প্রতিউত্তর: রাজনৈতিক বিভাজন না বাড়িয়ে, বরং স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোই মূল লক্ষ্য। অনেক সময় কেন্দ্রীয় প্রশাসনের দুর্বল প্রতিনিধি শক্তি স্থানীয় অবহেলাকে বাড়ায়-স্বায়ত্তশাসন দিলে জনগণের অংশগ্রহণ ও নিরসনের সুযোগ বাড়ে। ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করলে বিভাজন নয়, সমন্বয় বাড়বে।
নির্দিষ্ট দাবি (সংক্ষেপে)-নোয়াখালীবাসীর‘চেকলিস্ট’
১.বিভাগ ঘোষণার প্রাথমিক সম্মতি ও একটি স্বাধীন ফিজিবিলিটি কমিটি গঠন।
২.বৃহত্তর নোয়াখালী (নোয়াখালী,ফেনী,লক্ষ্মীপুর-যেখানে ঐতিহ্যগত ও অর্থনৈতিক বন্ধন রয়েছে) নিয়ে স্থানীয় বাস্তবায়ন পরিকল্পনা।
৩.রেমিট্যান্স-ডেটা ও আঞ্চলিক অর্থনীতির ভিত্তিতে বিভাগীয় বাজেট বরাদ্দ ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা।
৪.উপকূলীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বাধীন ‘ডিজাস্টার রেসপন্স সেল’ ও স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়ন।
৫.জেলা-স্তরের প্রতিনিধি,নাগরিক সমাজ,প্রবাসীদের অংশগ্রহণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বচ্ছতা ও সামাজিক চুক্তি।
শেষ কথা-ন্যায়, মর্যাদা ও নতুন বাংলাদেশের নির্মাণ
নোয়াখালী বিভাগের দাবি কেবল স্থানীয় অহংকার নয়; এটি এক রাজনৈতিক-নীতিগত প্রস্তাব, যা দেশকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে-কীভাবে আঞ্চলিক পরিচয় ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে সম্মিলিত করে আমরা উন্নয়নের নকশা গড়ব। নোয়াখালীবাসীর দাবি-“নোয়াখালী বিভাগ না হওয়া পর্যন্ত নোয়াখালীকে চট্টগ্রামের সঙ্গে রেখো; কুমিল্লার অধীনে নয়”-এই বক্তব্য দেশীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে একটি স্পষ্ট সংকেত। যদি আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই-বিভাগীয় সাতকাহনগুলোকে কেবল প্রশাসনিক মানচিত্রের রঙ বদলের মতো ভাবব না; প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত হবে মানুষের মর্যাদা, মর্যাদার বাস্তব অর্থ, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার সঙ্গে যুক্ত।
নোয়াখালী-তার প্রবাসী রেমিট্যান্স,উপকূলীয় ভৌগোলিক চাহিদা, ইতিহাস ও জনগণের সংগ্রামের অধিকার-এসব মিলিয়ে একটি বিভাগীয় মর্যাদা অর্জনের যোগ্যতা রাখে। এই দাবি বাস্তবায়িত হলে তা হবে স্থানীয় না, সমগ্র দেশের জন্য একটি বিজয়: জনতান্ত্রিক স্বীকৃতি,সমন্বিত উন্নয়ন ও দুর্যোগ-সহিষ্ণু ভবিষ্যৎ নির্মাণ।
আমি এই লেখাটির মাধ্যমে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই-বিশ্লেষণপূর্বক,ন্যায়ভিত্তিক ও জনমতের প্রতিফলনে দ্রুত কিন্তু পরিকল্পিতভাবে এই বিষয়টি বিবেচনা করুন।নোয়াখালীবাসী তাদের অধিকার জানতে চায়;এই অধিকার স্বীকৃত হলে নতুন বাংলাদেশের কিছুটা ভবিষ্যৎই সুসংহত হবে।
লেখক: মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক ও প্রকাশক
সাপ্তাহিক নবজাগরণ
নোয়াখালীর সন্তান।
অনলাইনে পড়তে:www.thenabajagaran.com
মোবাইল:০১৫৫২-৪৬৫৫৪৫ সবাই শেয়ার করুন।