মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশ্বস্ত অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে-রাষ্ট্রের ভেতরে এক ভয়ংকর ছায়া-পরিকল্পনা চলছে। কিছু প্রভাবশালী ও অতীতে অপরাধে জড়িত সেনা কর্মকর্তা এখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আড়ালে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোপনে সক্রিয়। তাদের লক্ষ্য-ওয়াকার-উজ জামান সরাসরি ক্ষমতা না নিলেও যেন সরকারের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই থাকে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজেদের পছন্দের লোক বসিয়ে, পর্দার আড়ালে ‘ছায়া সরকার’ তৈরি করাই তাদের মূল পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় পাশের একটি দেশ নেপথ্যে সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে, এমনকি উপদেষ্টা পরিষদের কিছু প্রভাবশালী সদস্যও এতে সম্পৃক্ত।
ওয়াকার নিজেও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন, কিন্তু মাঝারি ও নিম্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তা ও সাধারণ সদস্যদের বড় অংশ এই পরিকল্পনার বিরোধী। তারা মুখে কিছু না বললেও অন্তরে প্রবল অসন্তোষ পোষণ করছেন।
অপরাধীদের নতুন ছদ্মবেশ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জানান,
“৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু নাম দেওয়া হয় ‘বিডিআর বিদ্রোহ’। সেই ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞের নেপথ্যে যারা ছিল, তারা আজও বেঁচে আছে এবং নিজেদের রক্ষা করতে আবারও নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।”
তিনি বলেন, “যাদের হত্যা করা হয়েছিল, তারা কেউ পিতাহারা সন্তান রেখে গেছেন, কেউ স্ত্রীহারা, কেউ ভাইহারা-আর দেশ হারিয়েছে তার সূর্যসন্তানদের। অথচ সেই রক্তের বিচার হয়নি।”
এই অভিযোগ অনুযায়ী, কিছু অপরাধী সেনা কর্মকর্তা ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন-নিজেদের রক্ষা ও পারস্পরিক সহযোগিতার আশায়। তারা যেকোনো মূল্যে বিচার এড়াতে এবং ক্ষমতার ধারেকাছে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
ছায়ার সরকারের নকশা
অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দাবি করেন, এই প্রভাবশালী গোষ্ঠী সরকারের ভেতরে নিজেদের জন্য নিরাপদ স্থান তৈরি করছে। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে শুরু করে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা পছন্দের ব্যক্তিদের বসাতে চাইছে। বিদেশি সহায়তায় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ তৈরি করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কিছু দেশের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে নীরবে ওয়াকার এর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে পরিস্থিতি এখন এক জটিল ও অনিশ্চিত মোড় নিয়েছে।
রাষ্ট্রের করণীয়:বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব তথ্য সত্য হলে এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য ভয়ংকর হুমকি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে-
স্বাধীন তদন্ত কমিশন:বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও বর্তমান ক্ষমতার আড়ালের ষড়যন্ত্র-দুটোই তদন্তের আওতায় আনতে হবে। বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংস্কার:দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধে জড়িত কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে শাস্তি দিতে হবে।
কূটনৈতিক স্বচ্ছতা: বিদেশি রাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা: গুজব নয়-তথ্যনির্ভর অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা বাড়াতে হবে। জনগণকে সত্য জানানোই গণমাধ্যমের দায়িত্ব।
ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধার: যারা রাষ্ট্রের ভেতরে বসে রাষ্ট্রকে বিক্রি করছে, তাদের বিচার হতে হবে আইনের কাঠগড়ায়।
ইতিহাসের দায় ও ভবিষ্যতের ডাক
২০০৯ সালের ‘বিডিআর বিদ্রোহে’ দেশের ৫৭ জন বীর সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল-দেশ হারিয়েছিল তার এক ঝাঁক সূর্যসন্তান। আজ সেই হত্যার বিচার অসম্পূর্ণ, আর সেই দায়বোধের ছায়াতেই নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে।
ওয়াকার উজ-জামান আজ নিস্তব্ধ-তাঁর চোখে ভয়, চারপাশে মীরজাফর, আর রাষ্ট্রে নীরব মুনাফেকদের ছায়া।
কিন্তু এই নীরবতা ভাঙবে, যদি জনগণ জেগে ওঠে।
বিপ্লব এখন আর বন্দুকের শব্দে নয়-সত্য, ন্যায় ও গণআকাঙ্ক্ষার আওয়াজেই শুরু হবে। প্রশ্ন একটাই: রাষ্ট্র কার হাতে থাকবে-জনগণের, না কিছু অপরাধীর?