মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
একটি লাশের গাড়ি-যেখানে নীরব কান্না, দুঃখ, শোক আর মর্যাদার শেষ যাত্রা চলছিলো-সেই গাড়ির পথরোধ করা হলো!চালককে টেনে নামিয়ে মারধর, গালাগালি, হুমকি, অপমান-এমন বর্বরতা একটি সভ্য জাতির ইতিহাসে লজ্জার দাগ ছাড়া আর কিছু নয়।এটি কোনো রাজনীতি নয়।এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলন: ন্যায্য দাবির শান্ত যাত্রা
নোয়াখালী বিভাগ গঠনের দাবি কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নয়।এটি দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক বাস্তবতা, জনসংখ্যার চাপ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নাগরিক সেবার ভারসাম্যের প্রশ্ন।
এই আন্দোলনটি শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ, অহিংস, ও আইনসঙ্গত উপায়ে পরিচালিত হচ্ছে-যেখানে মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো শত্রুতার নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রশাসনিক
সুবিচারের দাবি তুলেছে দেশের সীমানা থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী।বৃহত্তর নোয়াখালীর মানুষ কুমিল্লাকে কখনো হেয় করেনি,বরং প্রতিটি সভা, সমাবেশ ও বক্তব্যে-দুই জেলার পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ঐক্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে।তাহলে আজ এই সহিংসতা, এই হামলা-এল কোথা থেকে?কার প্ররোচনায়?নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে নোয়াখালী সমিতি ঢাকা কর্তৃক সদ্যনির্বাচিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দক্ষ অভিজ্ঞ পরিষদ দ্বারায়।
কুমিল্লা ও নোয়াখালী: দুই নদীর মতো সম্পর্ক কুমিল্লা ও নোয়াখালী শতাব্দীর প্রতিবেশী।একই মাঠ, একই হাট, একই রক্তের ঘাম।একজন কুমিল্লাবাসী যেমন নোয়াখালীতে ব্যবসা করে,তেমনি একজন নোয়াখালীবাসী কুমিল্লায় ঘর বেঁধে সন্তান বড় করে।এই দুই জেলার মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানো মানে হলো একই শরীরের দুই হাত কেটে ফেলা।কুমিল্লার যে ক’জন উচ্ছৃঙ্খল যুবক মহাসড়কে গাড়ি আটকায়, চালককে মারে, যাত্রীকে ভয় দেখায়-তারা শুধু একজন মানুষকে নয়,বাংলাদেশের মানবতার মুখে থুথু দিয়েছে।
অভিভাবক ও নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব
কুমিল্লার মাটি মহান মানুষের মাটি-নবীন উদ্ভাবক, শিল্পপতি, শিক্ষক, সাহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধাদের মাটি।
তাদের উত্তরসূরিদের এখন সময় এসেছে এই ভয়ঙ্কর প্রবণতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার।আমরা বিশ্বাস করি-কুমিল্লার সচেতন নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসন এ ঘটনায় সুস্থ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন।কারণ এটা শুধু নোয়াখালীর প্রশ্ন নয়,এটা বাংলাদেশের মানবতার প্রশ্ন।
যারা লাশের গাড়ি থামিয়েছে, তারা কারা?
আমরা জানতে চাই-যারা শববাহী গাড়ির চালককে টেনে নামিয়ে মারলো,তারা কি মানুষ?নাকি মানবতার মুখোশধারী পশু?এরা কাদের প্ররোচনায় এমন কাণ্ড ঘটালো?কোন রাজনৈতিক সুবিধার আশায়?কোন অন্ধ উন্মাদনায়?বাংলাদেশের জনগণ এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়।
মানবিক ঐক্যের আহ্বান
আমরা, নোয়াখালীবাসী, কোনো জেলার বিরুদ্ধে নয়।
আমরা শুধু চাই,আমাদের ন্যায্য দাবি শুনুক রাষ্ট্র,
আমাদের প্রশাসনিক বাস্তবতা বুঝুক সরকার।আর মানবতার নামে একটি জাতির মর্যাদা ও ভ্রাতৃত্ব যেন নষ্ট না হয়।আজকের ঘটনা যদি আমরা নীরবে মেনে নিই-তাহলে আগামীকাল আমাদের সন্তানরাও মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা হারাবে।
এই দেশ ৭১-এ যুদ্ধ করেছে মানবতার জন্য।আজ যদি লাশের গাড়িও রক্ষা না পায়,তাহলে এই যুদ্ধের চেতনা আমরা কোথায় রাখবো?আমরা নোয়াখালীবাসী,কোনো জেলার শত্রু না-কিন্তু অন্যায়ের শত্রু।আমরা লাশের গাড়িতে আঘাতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি জানাই।মানুষের প্রতি অমানবিকতা-যে জেলায়ই ঘটুক না কেন-তার বিচারই হবে প্রকৃত দেশপ্রেম।
মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক: নবজাগরণ-ঢাকা
অনলাইনে পড়ুন:www.thenabajagaran.com




