মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নোয়াখালী শুধু একটি জেলা নয়-এটি এক রাজনৈতিক মানচিত্র, যেখানে প্রতিটি ইঞ্চি জমি অতীত সংগ্রাম ও প্রতিরোধের স্মৃতি বহন করে। এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকা নোয়াখালীর রাজনীতিকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
বিএনপি এবার যে ছয় আসনে ছয় প্রার্থী দিয়েছে-তা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং একটি কৌশলগত বার্তা: “আমরা পিছিয়ে নেই,মাঠে নামছি।”দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজকের ঘোষণায় পুরনো এবং পরীক্ষিত নেতাদের মাধ্যমে নোয়াখালীর রাজনীতিতে পুনর্গঠন এবং প্রতিরোধের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
পুরনো সৈনিকদের প্রত্যাবর্তন
নোয়াখালী-১ ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী-২  জয়নুল আবদিন ফারুক,নোয়াখালী-৩  বরকত উল্লাহ বুলু-এই নামগুলো কেবল প্রার্থী নয়, বিএনপির ইতিহাসের অংশ। এরা ৯০-এর গণআন্দোলন, ২০০৬-এর সংকট,এমনকি ২০১৮-এর‘নির্বাচনবিহীন নির্বাচন’-এর সময়ও মাঠে ছিলেন।তাদের প্রত্যাবর্তন মানে শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়-বরং একটি রাজনৈতিক পুনর্জাগরণের যুদ্ধঘোষণা।
শাহজাহান-ফখরুল-শামিম:তৃণমূলের সেতুবন্ধ
নোয়াখালী-৪ এ মোহাম্মদ শাহজাহান,নোয়াখালী-৫ এ ফখরুল ইসলাম, নোয়াখালী-৬ এ মাহবুবের রহমান শামিম-এরা হচ্ছেন স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রিয় মুখ, যারা তৃণমূলের প্রতিটি ইউনিয়নে সংগঠন ধরে রেখেছেন কঠিন সময়েও। ২০২১ থেকে ২০২৪-এই চার বছরে পুলিশি গ্রেপ্তার, মামলা, হামলা সত্ত্বেও তারা আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। তাদের মনোনয়ন প্রমাণ করে-বিএনপি এবার শুধু কেন্দ্র নয়, গ্রামকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে তুলে আনতে চাইছে।
নোয়াখালী:রাজনৈতিক পরীক্ষাগার
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নোয়াখালী অনেক সময়ই পরবর্তী ঢেউয়ের সূচনা করে।১৯৯৬-এ বিএনপির শক্ত ঘাঁটি, ২০০১-এ ঝড়ো জয়ের এলাকা, ২০১৪-১৮-এ দমননীতির কেন্দ্র-আর এখন ২০২৫-এ এটি আবারো হতে পারে “গণআন্দোলনের লঞ্চিং প্যাড।”যদি এখানে বিএনপি মাঠে টিকে থাকতে পারে, তাহলে তা চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে এক নয়া গণরাজনীতির স্রোত বইয়ে দিতে পারে।
 নতুন লড়াই:ভোটের নয়,বেঁচে থাকার
আজকের বাংলাদেশে নির্বাচন মানে শুধু সংসদে যাওয়ার প্রতিযোগিতা নয়-বরং গণতন্ত্র বাঁচানোর সংগ্রাম।
বিএনপি যদি সত্যিই জনগণকে সঙ্গে নিতে পারে, তাহলে নোয়াখালীর মাঠ থেকেই শুরু হতে পারে“জুলাই-পরবর্তী দ্বিতীয় ঢেউ”-যেখানে মানুষের মূল দাবি হবে ভোটাধিকার ও রাষ্ট্র পুনর্গঠন।
নবজাগরণের প্রত্যাশা:নোয়াখালীর এই ছয় প্রার্থী যদি নিজেদের ভেতরের বিভক্তি ও স্থানীয় স্বার্থের সীমা ছাড়িয়ে সত্যিকারের জনগণের কণ্ঠস্বর হতে পারেন, তবে এই নির্বাচনী লড়াই হয়ে উঠবে একটি নৈতিক বিপ্লবের মঞ্চ।কারণ এখন সময় শুধু দল পাল্টানোর নয়,সময় রাষ্ট্র বদলানোর।এই ছয়জন প্রার্থীর কাঁধে তাই শুধু আসনের দায়িত্ব নয়-বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জন্মের বোঝা।
নোয়াখালীর মাটি সবসময়ই সংগ্রামী,বিদ্রোহী এবং নবজাগরণের। আজ যখন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন,জয়নুল আবদিন ফারুক,বরকত উল্লাহ বুলু, শাহজাহান,ফখরুল,শামিমরা মাঠে নামছেন-তখন শুধু তারা নয়,পুরো জেলার মানুষ আবারও ইতিহাসের সামনে দাঁড়াচ্ছে। এই লড়াই জয় বা পরাজয়ের নয়-এটি সত্য ও গণতন্ত্রের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
অনলাইনে পড়ুন:www.thenabajagaran.com
https://www.facebook.com/share/1Cgsdh6urF/
				
															
															



