নবজাগরণ রিপোর্ট:
বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা যে কতখানি “কমিশন রাজনীতি” আর “ঘুষ অর্থনীতির” জালে জড়ানো-তার সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ আজ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। এখানেই গড়ে উঠেছে ক্ষমতার এক বিশেষ মডেল-নাম তার মো. তবিবুর রহমান তালুকদার। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য এই কর্মকর্তা আজ কোটি কোটি টাকার মালিক, অথচ তার পদবি এখনো “নির্বাহী প্রকৌশলী”!
এক প্রকল্পে কোটি টাকার খেলা:তবিবুর ছিলেন আলোচিত“মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ,স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি”প্রকল্পের (বাজেট: ১,৮৮২ কোটি টাকা)পরিচালক। প্রকল্পটির অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক কিন্তু মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী,টাকাটা গেছে প্রকল্পের উন্নয়ন নয়বরং ঘুষের রাজনীতি চালাতে।
যুগান্তরসহ একাধিক জাতীয় দৈনিক জানিয়েছে,প্রকল্পের কাজ অর্ধেকও শেষ হয়নি, অথচ নতুনভাবে আরও একটি বিশাল প্রকল্প (বাজেট: ১,৯৮৯ কোটি টাকা) তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ একই ব্যক্তির হাতে এখন ৩,৮৭১ কোটি টাকার দুই প্রকল্পের দায়িত্ব!
প্রশ্ন উঠছে-এক ব্যক্তির হাতে এত ক্ষমতা কেন?
ঘুষের মুদ্রা দিয়ে পদোন্নতি-তবিবুর রহমান ঘনিষ্ঠ মহলে নিজেই স্বীকার করেছেন, প্রথম প্রকল্পের পিডি হতে তাকে “দশ টাকা”-অর্থাৎ ১০ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। আর এখন নাকি ১৫ কোটি টাকা দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন। যদি তিনি সফল হন,তাহলে ২৪ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে তিনি বসবেন প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে।
এ যেন এক “বিক্রিত আমলাতন্ত্রের প্রতীক”-যেখানে যোগ্যতা নয়, মূলধনই নিয়োগের মানদণ্ড। দুর্নীতির রোডম্যাপ: প্রকল্প থেকে প্রভাব বাংলাদেশের সরকারি প্রকল্পব্যবস্থায় “পিডি সিন্ড্রোম”এখন পুরনো রোগ। পিডি মানে প্রকল্প পরিচালক-আর এই পদ মানে বাজেট বরাদ্দ,ক্রয়প্রক্রিয়া,দরপত্র অনুমোদন,এবং কমিশন বণ্টনের সর্বময় ক্ষমতা।
তবিবুর মডেল দেখিয়েছে,কিভাবে একজন কর্মকর্তা রাজনীতি ও প্রভাবশালী চক্রের আশীর্বাদে কোটি টাকার প্রকল্প নিজের হাতে রাখতে পারে-আর কমিশনের এক অংশ“উপরের” লোকদের পৌঁছে দিতে পারে। ফলে জবাবদিহিতা বিলীন, সুশাসন মৃত,উন্নয়ন কেবল“সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে”সীমাবদ্ধ।
রাষ্ট্রের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি এই ঘটনাগুলো শুধুমাত্র একজন কর্মকর্তার নয়-এটি পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। প্রথমত, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নেই; ঘুষ হয়ে গেছে নীতির অংশ। দ্বিতীয়ত,প্রকল্প তদারকিতে বিশ্বব্যাংক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি স্পষ্ট। তৃতীয়ত,দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখনো কোনো তদন্ত শুরু করেনি-যা এই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর নৈতিক মৃত্যুর প্রমাণ।
জনগণের টাকার দায় কার?গ্রামীণ পানি,স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধির এই প্রকল্পগুলো সরাসরি প্রান্তিক জনগণের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। পরিষ্কার পানি,নিরাপদ পায়খানা,স্বাস্থ্য সচেতনতা-এসবই টেকসই উন্নয়নের মৌলিক উপাদান। অথচ এই প্রকল্পগুলোতে জনগণের টাকার পাহাড় এখন পরিণত হয়েছে ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড়ে।
জনগণের ৩,৮৭১ কোটি টাকার দায় কে নেবে?
এখন সময় এসেছে,এসব“তবিবুর সিন্ড্রোম”ভেঙে দেওয়ার।সর্বজনীন তদন্ত শুরু হোক-তবিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করতে হবে।
ঘুষ-নির্ভর নিয়োগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করতে হবে জনগণের টাকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে-প্রতিটি প্রকল্পের আর্থিক রিপোর্ট অনলাইনে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই দাবি শুধু প্রশাসনিক নয়-এটি নৈতিক পুনর্জাগরণের দাবি।





