মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
একজন নোবেলজয়ী অধ্যাপক এবং ভারতের অস্থিরতা একজন বিশ্বখ্যাত নোবেলজয়ী,বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস-যিনি জীবনের পুরোটা সময় জুড়ে “মানবিক উন্নয়ন” “সামাজিক ব্যবসা” ও “দরিদ্র বিমোচন” নিয়ে কাজ করেছেন-তাঁর মুখ থেকে বের হওয়া প্রতিটি শব্দ আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ও ওজনদার।তবুও অবাক হয়ে দেখছে পৃথিবী-ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত এখন ড.ইউনূসের ভাষার ওপর “সতর্কতার পরামর্শ” দিচ্ছে!প্রশ্ন একটাই:একজন শান্তির নোবেলজয়ী যখন সত্য,সততা ও ভারসাম্যের কথা বলেন-তাতে এত ভয় ভারতের কেন?
চীনে বলা এক সত্য,যা ভারতের গায়ে জ্বালা ধরিয়েছে
ড. ইউনূস চীনে গিয়ে যা বলেছেন,তাতে কোনো হুমকি নেই।
তিনি বলেছেন-“ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল একটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চল,এবং এই অঞ্চলের সাগরের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।”এটি কোনো সামরিক বার্তা নয়-এটি বাস্তব ভূ-অর্থনৈতিক সত্য।এই কথার ভেতরে ছিল সহযোগিতা,সহাবস্থান ও দক্ষিণ এশিয়ার একটি নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত।কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া,বিশেষ করে ডানপন্থাপ্রচারযন্ত্রগুলো,এই বক্তব্যকে “চীনা হুমকি” “বাংলাদেশের পক্ষপাত” কিংবা “নিরাপত্তা ঝুঁকি” হিসেবে চিত্রিত করছে।এ যেন এক মিডিয়া প্রোপাগান্ডার উন্মাদনা,যেখানে ড.ইউনূসের আন্তরিকতা আর শ্রদ্ধার ভাষাকে“ভয়” ও “ষড়যন্ত্র”-এর কণ্ঠে রূপান্তর করা হচ্ছে।
ভারত কেন ভীত?-দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন কৌশলগত বাস্তবতা-ভারতের অস্বস্তির পেছনে মূলত তিনটি কারণ কাজ করছে বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান-তুরস্কের কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা,যা ভারতের প্রচলিত দক্ষিণ এশীয় প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন “ভারসাম্য ও সার্বভৌম মর্যাদা”-কেন্দ্রিক,যেখানে ঢাকা আর নয়াদিল্লির অনুসারী নয়,বরং স্বাধীন ও সমান মর্যাদার রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে চাইছে।ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতা-সীমান্তে তিনটি নতুন গ্যারিসন স্থাপন,শিলিগুড়ি করিডর রক্ষায় বাড়তি সেনা মোতায়েন-সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নয়াদিল্লি এক ভয়,এক সংশয়ে ভুগছে।
এই ভয়টা কিসের?একটি “সাহসী,আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন বাংলাদেশ”-এর। ড.ইউনূসের কূটনৈতিক দর্শন:আক্রমণ নয়,ভারসাম্য ড.ইউনূস কখনো “ভারত-বিরোধী” কথা বলেননি-তিনি বলেছেন “ভারসাম্যের কথা” “সহযোগিতার কথা”।তিনি যে মডেল তৈরি করছেন,সেটি এক ধরনের ‘ন্যায্য কূটনৈতিক সমতা’।যেখানে বাংলাদেশ কারো তাবেদার নয়,বরং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক করিডরের এক কেন্দ্রবিন্দু।তার লক্ষ্য-বাংলাদেশকে এমন এক রাষ্ট্রে পরিণত করা,যে রাষ্ট্র নিজের সীমান্তে নিজেই প্রভু,নিজের অর্থনীতিতে নিজেই চালক,আর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিরপেক্ষ কিন্তু মর্যাদাসম্পন্ন এক কণ্ঠ।
ভারতকে বোঝা দরকার: বন্ধুত্ব মানে দাসত্ব নয়
দীর্ঘদিন ধরে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রশাসনে একধরনের “অতিপ্রভাব” বিস্তার করেছে।
যে প্রভাব এতটাই গভীর যে, স্বাধীন চিন্তা বা সমালোচনা করলেই তাকে “বিরোধিতা” বলা হয়।আজ ড.ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কার হচ্ছে,আইন, নির্বাচন, প্রশাসন, এমনকি প্রতিরক্ষা নীতি পুনর্গঠন হচ্ছে-তাই ভারত এখন এক অজানা আতঙ্কে ভুগছে।তারা বুঝতে পারছে-যে বাংলাদেশ একদিন ছিল “প্রভাবিত”আজ সে “সমান মর্যাদায়” দাঁড়াচ্ছে।এই পরিবর্তন ভারতের অভ্যন্তরে ভয়ের সৃষ্টি করেছে-তাই আজ তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও এক নোবেলজয়ী অধ্যাপককে“শব্দ চয়নে সতর্ক থাকার” পরামর্শ দিতে বাধ্য হচ্ছেন!
নতুন যুগের ডাক:সার্বভৌম রাষ্ট্রের কণ্ঠস্বর
বাংলাদেশ এখন এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে-যেখানে তার কণ্ঠ আর করুণা নয়,মর্যাদার প্রতীক। ড.ইউনূস সেই মর্যাদার কণ্ঠ তুলে ধরেছেন,যা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ভিত্তি হতে পারে। কিন্তু যারা নিজেদের একচ্ছত্র প্রভুত্ব ধরে রাখতে চায়,তাদের কাছে সেই কণ্ঠ শুনতে লাগে হুমকির মতো।আর এই কারণেই আজ ভারতের প্রোপাগান্ডা মেশিনগুলো এক নোবেলজয়ী মানুষের ভাষাকে “অসতর্কতা” বলে অভিহিত করছে।
ভয় নয়,ভারসাম্যই ভবিষ্যৎ:ড.ইউনূসের ভাষা কূটনীতির, ভালোবাসার,আর ভারতের উচিত তা বোঝা।যে বাংলাদেশ আজ নিজের ভারসাম্য খুঁজে পেয়েছে-তার কণ্ঠ রোধ করে কেউ টিকতে পারবে না।বিশ্ব আজ দেখছে-বাংলাদেশ আর “কারো প্রভাবের বলয়”-এ নয়;দেশটি এখন দক্ষিণ এশিয়ার নতুন অক্ষ,নতুন শক্তির কেন্দ্র।
মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক-নবজাগরণ
🌐 অনলাইনে পড়ুন:www.thenabajagaran.com
https://www.facebook.com/share/v/19eg2t66ry/





