মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
বাংলাদেশের সাংবাদিকতা পেশা আজ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান শুধু রাজনীতির নয়,সংবাদপেশারও এক নৈতিক ও পেশাগত রূপান্তরের সূচনা করেছে। সেই রূপান্তরকে আরও এগিয়ে নিতে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী ‘ডিজিটাল মিডিয়া বিষয়ক আবাসিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা’ এক অর্থে এই সময়ের সাংবাদিকতার নতুন সংবিধান তৈরি করছে।
১১-১৩ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত পিআইবি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত ২৪ জন সাংবাদিক অংশ নিচ্ছেন। অংশগ্রহণকারীরা সবাই কোনো না কোনোভাবে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহত,তবুও তারা পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা হারাননি-বরং এই প্রশিক্ষণ সেই যোদ্ধা সাংবাদিকদের পুনর্জাগরণের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে।
প্রশিক্ষণের দিকনির্দেশনা ও উদ্দেশ্য:প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য কেবল প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন নয়,বরং সাংবাদিকদের সংবাদ তৈরির প্রচলিত কর্মকৌশলকে আধুনিক ডিজিটাল ডিভাইস ও প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে একীভূত করা।
সমন্বয়ক শাহ আলম সৈকত বলেন-“আজকের সাংবাদিক কেবল রিপোর্টার নয়,তিনি ভিডিও এডিটর, ফটোগ্রাফার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষক-একজন ‘মাল্টিটাস্কার’। এই প্রশিক্ষণ সেই বাস্তবতাকে কেন্দ্র করেই সাজানো।”
বক্তব্য উপস্থাপন,ফ্লিপচার্ট ও পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহার, মুক্ত আলোচনা, ব্যবহারিক প্রশ্নোত্তর ও মতামত গ্রহণ-সব মিলিয়ে প্রশিক্ষণটি হয়েছে এক বাস্তবমুখী ল্যাবরেটরি।
প্রধান অতিথির বক্তব্য:প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মহাপরিচালক এম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন-জুলাই-আগস্টের আহত সাংবাদিকরা কেবল মানবিক সহায়তার নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রযুক্তিগত পুনর্গঠনেরও দাবিদার। এই প্রশিক্ষণ সেই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির এক প্রতীক। সাংবাদিকদের এখন নতুন রাষ্ট্রগঠনের অংশ হতে হবে-ডিজিটাল গণমাধ্যমের শক্তি দিয়েই জনগণের কণ্ঠকে পুনর্গঠন করতে হবে।
রিসোর্সপার্সনদের ভূমিকা:প্রশিক্ষণে রিসোর্সপার্সন হিসেবে ছিলেন নাজিয়া আফরিন মনামী,সহকারী প্রশিক্ষক ও অ্যাডজান্কট ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, এবং মোহাম্মদ ছিদ্দিক ফারুক,গবেষক,পিআইবির গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ বিভাগ।
তারা অংশগ্রহণকারীদের শেখান-কীভাবে একটি সংবাদ কনসেপ্ট থেকে শুরু করে ভিডিও,গ্রাফিক্স,সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট পর্যন্ত পুরো কন্টেন্ট চেইনটি একজন সাংবাদিক নিজে তৈরি করতে পারেন।
মনামী বলেন-একবিংশ শতাব্দীর সাংবাদিকের হাতে কেবল কলম নয়,ক্যামেরা,মাইক্রোফোন,মোবাইল ও সফটওয়্যার-সবই একসঙ্গে কাজ করবে। মিডিয়া মানে এখন মাল্টিমিডিয়া।”
নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকতার ভিত্তি:এই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা বলেছেন,গণঅভ্যুত্থানের সময় রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন,তথ্যনিয়ন্ত্রণ ও প্রচারণার মধ্যেও সাংবাদিকদের দায়িত্ববোধ অটুট ছিল। এখন সেই দায়িত্ববোধকে প্রযুক্তির সহায়তায় আরও শক্তিশালী করার সময় এসেছে।ফেনী থেকে আগত এক অংশগ্রহণকারী সাংবাদিক বলেন-আগে আমরা ভাবতাম প্রযুক্তি মানে বড় অফিস বা টেলিভিশন স্টুডিও। এখন বুঝছি,একটি মোবাইল ফোন দিয়েও বিশ্বকে জানানো যায় সত্যের গল্প।
পিআইবি-র এই প্রশিক্ষণ যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা-যেখানে সাংবাদিকতা শুধু খবর নয়, একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের হাতিয়ার। আহত সাংবাদিকদের এই প্রশিক্ষণ তাদের শরীরের ক্ষত নয়,পেশার আত্মাকে আরোগ্য দিচ্ছে।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান যেমন জনগণের মুক্তির ইতিহাস,তেমনি পিআইবির এই প্রশিক্ষণ সাংবাদিকদের আত্মমুক্তির এক নীরব বিপ্লব।
নবজাগরণ মন্তব্য:রাষ্ট্র পরিবর্তনের মতোই সংবাদপেশাও এখন রূপান্তরের পথে। এই উদ্যোগ যদি ধারাবাহিকভাবে দেশব্যাপী সম্প্রসারিত হয়,তবে বাংলাদেশে “ডিজিটাল সাংবাদিকতা” কেবল একটি প্রশিক্ষণ নয়-একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সূচনা হবে।
মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক,নবজাগরণ
অনলাইনে পড়ুন: www.thenabajagaran.com





