৫ আগস্টের পতন থেকে জনতার আদালত: বিকল্প বাস্তবতায় শেখ হাসিনার বিচার

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
বিকল্প ইতিহাসের এক অনন্য ভোর!
বাংলাদেশের ইতিহাসে কিছু দিন আসে যা পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সামাজিক ভারসাম্যকে এক মুহূর্তে কাঁপিয়ে দেয়।
৫ আগস্ট ২০২৪ এমনই একটি দিন।

কল্পনা করুন-এক বিকল্প বাস্তবতায়,যেখানে ৫ আগস্টের পতন জনতার রোষের সঙ্গে মিলে যায়, এবং সেই রোষের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকেন দেশের তৎকালীন ক্ষমতাধর শেখ হাসিনা। এই লেখা সেই বিকল্প বাস্তবতার গল্প বলে।
যেখানে ন্যায়বিচার,প্রতিশোধ,জনগণের শক্তি এক হয়ে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় গড়ে তোলে।এখানে আমরা দেখাবো-কিভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনতার অধিকার হরণ করে,এবং কিভাবে সেই অপরাধের জবাবদিহি সম্ভব।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আগুন
কোটা সংস্কার আন্দোলন দেশের সর্বত্র অগ্নিসংযোগের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা,চট্টগ্রাম,খুলনা,রাজশাহী-সব শহরের রাস্তাঘাটে ছাত্র ও সাধারণ জনগণ পদযাত্রা করে।
বিকল্প বাস্তবতায় সেই দিনটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:
ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নিয়োজিত হলেও সরকার তাদের ওপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে।পুলিশ,র‌্যাব ও ডিবি সহ নিরাপত্তা বাহিনী জনতার ঢেউয়ের কাছে অক্ষম।
সামাজিক মিডিয়া,অনলাইন নিউজ ও অন্তর্জালের মাধ্যমে আন্দোলনের খবর মুহূর্তেই দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে। এই বিকল্প ইতিহাসে; ৫ আগস্টের দিনটি শুধুই ছাত্রদের নয়,পুরো দেশের রাজনৈতিক সচেতনতার প্রতীক হয়ে ওঠে।

পলায়ন ক্ষমতার প্রতীকী পতন:বিকল্প বাস্তবতায় শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেন-রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তি জনতার রোষের কাছে অসহায়। রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পেরিয়ে তিনি ভারতে আশ্রয় নেন।এই পলায়ন শুধুই রাজনৈতিক পরাজয় নয়,এটি নৈতিক ও প্রতীকী পতন। যে সরকার দীর্ঘ দুই যুগ ধরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে,তার প্রধান অবশেষে জনগণের রোষের কাছে হেরে যান।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল:কল্পিত রায়ের সূচনা
বিকল্প ইতিহাসে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।এটি দেশের জনগণ,আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী আইনজীবীদের যৌথ প্রয়াসে বাস্তবায়িত হয়। প্রমাণের প্রধান অংশগুলো গুম হওয়া ও নিখোঁজ মানুষের পরিবারের জবানবন্দি কোটা আন্দোলনে রাষ্ট্রের প্ররোচনায় গুলি ও লাঠিচার্জের ভিডিও ফুটেজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শিকার সাংবাদিক ও লেখকের সাক্ষ্য রাষ্ট্রীয় নথি ফাঁস,যা অত্যাচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রিপোর্ট ও বিশ্লেষণ এই প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত ঘোষণা করে-রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার, গুম,হত্যাযজ্ঞ,নির্যাতন এবং রাজনৈতিক দমন অপরাধ।

রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রক্ষমতার বিচারকরা বিশেষভাবে রাষ্ট্রের অপব্যবহার বিশ্লেষণ করেন:গুম ও হত্যাকাণ্ড: ১১৮০+ নিখোঁজ,শতাধিক প্রত্যক্ষ প্রমাণ কোটা আন্দোলনের বর্বর দমন: ছাত্রদের ওপর অস্ত্র প্রয়োগ ও চিকিৎসা প্রতিবেদন মতপ্রকাশের দমন:ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার বিদেশি প্রভাব:ভারতের সঙ্গে অসম্পূর্ণ চুক্তির মাধ্যমে দেশের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত
এই সব ঘটনার মিলন হলো রায়ের ভিত্তি।

রায়ের রাজনৈতিক অভিঘাত
বিকল্প রায় ঘোষণার সাথে সাথে বাংলাদেশে সৃষ্টি হয় নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ:বিচারব্যবস্থা:স্বাধীন,স্বচ্ছ,পুনর্গঠিত
নিরাপত্তা বাহিনী:রাজনৈতিক চাপমুক্ত, জনগণের সেবক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা:সাংবাদিকরা ভয়মুক্ত পররাষ্ট্রনীতি: সমতা ও জাতীয় স্বার্থে নির্মিত জনতার শক্তি দেশের নতুন নীতির ভিত্তি গড়ে তোলে।

ভারতের ভূমিকায় পরিবর্তন
বিকল্প বাস্তবতায় শেখ হাসিনার আশ্রয় নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখোমুখি হয় ভারত।
বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে বার্তা দেয়:“বন্ধুত্ব চাই,দাসত্ব নয়।”
পরবর্তী সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক সমতার ভিত্তিতে পুনর্গঠিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। নতুন প্রজন্ম: প্রতিশোধ নয়,ন্যায়বিচার বিকল্প ইতিহাসে নতুন প্রজন্ম বোঝে-রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, ক্ষমতা জনগণের সেবক। তারা প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচার চায়। এই প্রজন্মের সাহসই নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করে।

রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও নতুন কাঠামো
বিকল্প রায়ের পর রাষ্ট্র বিভিন্ন সংস্কার আনে:
বিচারব্যবস্থা পুনর্গঠন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা ভোটব্যবস্থার স্বচ্ছতা মানবাধিকার সংরক্ষণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ
বিকল্প ইতিহাসের শিক্ষণীয় বার্তা জনগণ শক্তিশালী হলে রাষ্ট্র ন্যায়ের পথে চলে ক্ষমতার অপব্যবহার দীর্ঘমেয়াদে পতনের কারণ বিচার ও ন্যায়বিচারের অগ্রাধিকার রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধ করে নতুন প্রজন্মই রাষ্ট্রকে নাগরিকদের হাতে ফিরিয়ে আনে

৫ আগস্টের পতনের মানসিক ও সামাজিক প্রভাব
বিকল্প ইতিহাসে, ৫ আগস্ট শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়। এটি মানসিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-মানুষের মধ্যে সাহস, সংহতি ও ন্যায়বিচারের চেতনা বৃদ্ধি পায় সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার মানসিকতা জন্মায়
অনলাইন ও অফলাইন মাধ্যমে আন্দোলনের প্রভাব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এই বিকল্প ইতিহাসে,সমাজের প্রতিটি স্তরে রাজনৈতিক সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের বৃদ্ধি ঘটে।

রাষ্ট্র,আইন ও ন্যায়বিচার:একটি পুনর্গঠিত বাংলাদেশ
রাষ্ট্রের পুনর্গঠন:ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ,জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী:জনগণের সেবক,রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারব্যবস্থা:স্বচ্ছ,শক্তিশালী,স্বাধীন নাগরিক অধিকার:সংরক্ষিত,নিরাপদ এই বিকল্প বাস্তবতায় বাংলাদেশ এক নতুন ভোর দেখে-যেখানে ন্যায়,মানবিকতা ও গণতন্ত্র প্রাধান্য পায়।

বিকল্প ভোরের প্রতিশ্রুতি
বিকল্প বাস্তবতা আজকের বাস্তবতা নয়।
কিন্তু এটি আমাদের শেখায়-রাষ্ট্র যদি জনগণের পাশে দাঁড়ায় বিচার ও ন্যায়বিচারের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করে
ক্ষমতাকে দায়বদ্ধ করে তাহলে বাংলাদেশ একটি নতুন ভোর দেখতে পারে।
যেখানে ভয় নয়,সাহস;দমন নয়,ন্যায়;দাসত্ব নয়,স্বাধীনতা।
এই বিকল্প ভোরের গল্পই আমাদের প্রেরণা-নতুন প্রজন্মের জন্য,নতুন রাষ্ট্রের জন্য,নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য।

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক-নবজাগরণ