নোয়াখালীর নতুন জেলা প্রশাসক:উন্নয়ন,বিভাগ ও জনআকাঙ্ক্ষার নতুন অধ্যায়

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
১৮ নভেম্বর ২০২৫-নোয়াখালীর প্রশাসনিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক দিন।এই দিনে দায়িত্ব নিলেন নতুন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম,বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের একজন মেধাবী,আধুনিক ও কর্মদক্ষ কর্মকর্তা।ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি যে দক্ষতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন-নোয়াখালীবাসী বিশ্বাস করছে,এবার জেলার দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস বদলাবে।নোয়াখালী এমন একটি জেলা-যার সম্ভাবনা অপরিসীম, কিন্তু বাস্তবায়ন কম। এখানকার মানুষ তাই চায়-সৎ,সাহসী,দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একজন ডিসি।এবার সেই প্রত্যাশার জায়গায় দাঁড়ালেন মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

নোয়াখালী:এক সম্ভাবনাময় অঞ্চল,যার অপেক্ষা শুধুই সঠিক নেতৃত্ব নোয়াখালীকে বলা হয় বাংলাদেশের‘উপকূলীয় প্রবেশদ্বার।এ জেলার পরিচয়-চরাঞ্চলের কৃষির বিপ্লব দেশের অন্যতম বৃহৎ মৎস্যখাত সমুদ্র ও দ্বীপ পর্যটনের অপার সম্ভাবনা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানভিত্তিক ইকোনমি কোম্পানীগঞ্জ-সোনাইমুড়ির শিল্পায়ন সম্ভাবনা হাতিয়া-নিঝুমদ্বীপের ইকো-ট্যুরিজম কিন্তু দুঃখজনকভাবে-নোয়াখালী সবসময় জেলা-স্তরের উন্নয়ন পায়, জাতীয়-স্তরের উন্নয়ন পায় না।এবং এ কারণেই “নোয়াখালী বিভাগ” এখন শুধু দাবি নয়-সময়োপযোগী প্রয়োজন।

কেন নোয়াখালী বিভাগ জরুরি?
নোয়াখালীর সীমা বিস্তৃত,মানুষ বেশি,কিন্তু প্রশাসনিক কাঠামো পুরনো।চট্টগ্রামের সঙ্গে দাপ্তরিক যোগাযোগে সময় নষ্ট হয়, সেবা ব্যাহত হয়।বিভাগ হলে-প্রশাসনিক সেবা ৪০-৫০% দ্রুত হবে বিনিয়োগ বাড়বে শিল্পায়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে উপকূলীয় নিরাপত্তা জোরদার হবে স্বাস্থ্য,শিক্ষা,কৃষি,পর্যটন-সব খাতে গতি আসবে নোয়াখালী,লক্ষ্মীপুর,ফেনী-একীভূত উন্নয়ন কাঠামো তৈরি হবে নতুন ডিসির কাছে তাই জনগণের প্রথম প্রত্যাশা-নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়নে শক্ত ভূমিকা।

বিমানবন্দর:উপকূলীয় অর্থনীতির নতুন দরজা
হাতিয়া,নিঝুমদ্বীপ,সোনাইমুড়ি,কোম্পানীগঞ্জ-সব মিলিয়ে নোয়াখালীর অর্থনীতি এখন এমন একটি অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে বিমানবন্দর আর বিলাসিতা নয়-অপরিহার্য।
বিমানবন্দর হলে-পর্যটন বিস্ফোরণ ঘটবে কৃষি-মৎস্য রফতানি বহুগুণ বাড়বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়া সহজ হবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রবেশ বাড়বে উপকূলীয় নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার হবে নতুন জেলা প্রশাসকের মতো গতিশীল নেতৃত্ব প্রয়োজন এই প্রকল্পকে গতি দিতে।

সমুদ্রবন্দর:নোয়াখালীকে বাণিজ্যের কেন্দ্র বানানোর সুযোগ হাতিয়া,ভাসানচর,কোম্পানীগঞ্জ উপকূল-এসব জায়গা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় সমুদ্র রুট।
বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর নোয়াখালীতে হলে-চট্টগ্রাম বন্দরের চাপ কমবে দেশের সরবরাহ ব্যবস্থা আধুনিক হবে
দক্ষিণ-পূর্ব অর্থনীতি বদলে যাবে রফতানি বাড়বে বিশাল শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে এটাই নোয়াখালীর ভবিষ্যৎ।

হাতিয়াকে জেলা: দ্বীপবাসীর ন্যায্য দাবি
হাতিয়ার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে-“দ্বীপের ভৌগোলিক বাস্তবতা আলাদা,প্রশাসনও আলাদা হওয়া উচিত।”জেলা হলে-স্বাস্থ্য-শিক্ষা-পুলিশ প্রশাসনে দ্রুত সেবা
পর্যটনের আধুনিকায়ন নৌ-নিরাপত্তা জোরদার সরকারি অফিসগুলো সরাসরি কার্যকর হবে চরাঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য খাত গতি পাবে এই দাবি আজ আর অবহেলার জায়গায় নেই।

আইন-শৃঙ্খলা:নোয়াখালীর উন্নয়নের প্রধান শর্ত
দাগনভূঁঞা-বেগমগঞ্জ-সুবর্ণচর-অনেক সময় উত্তপ্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত।জমি দখল,নারী নির্যাতন, কিশোর গ্যাং, নদী ডাকাতি, রাজনৈতিক সহিংসতা-এসবের কারণে নোয়াখালীর সম্ভাবনা পিছিয়ে পড়ে।নতুন ডিসি পরিচিত
-যোগ্যতা,দৃঢ়তা ও স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
তাই নোয়াখালী আশা করছে-তিনি কঠোর হাতে আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন করবেন।

জুলাই আহতদের তালিকা:মানবিক দায়িত্ব
নোয়াখালী জুলাই আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল।
এ জেলার ছাত্র, সাংবাদিক,তরুণদের ওপর নির্মম হামলা হয়েছে।অনেকেই আজও চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের অপেক্ষায়।নতুন জেলা প্রশাসকের প্রতি অনুরোধ-জুলাই আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরকারি সহায়তা নিয়মিত মনিটরিং পরিবারকে সুরক্ষা এ দায়িত্ব শুধু প্রশাসনিক নয়-নৈতিক দায়ও বটে।

অর্থনীতি-শিল্পায়ন-শিক্ষা:নোয়াখালীর পরবর্তী ১০ বছরের ব্লুপ্রিন্ট নোয়াখালী হতে পারে-উপকূলীয় গবেষণা
-শিল্পায়ন-কৃষি-পর্যটনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র।করতে হবে-সোনাইমুড়িতে আধুনিক শিল্পাঞ্চল চরাঞ্চলে কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পনোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্টার্টআপ হাবে পরিণত করা বসুরহাট-কোম্পানীগঞ্জে পর্যটন জোন শহরের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা স্থাপন খাল-নদী দখলমুক্তকরণ নতুন ডিসির নেতৃত্বে এগুলো সম্ভব।

পরিবর্তনের সময় এখন-নোয়াখালীর ভবিষ্যৎ নতুন হাতে
মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামের দায়িত্বগ্রহণ নোয়াখালীর জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা।নোয়াখালীবাসী চায়-তিনি হবেন একজন সৎ, সাহসী,মানবিক ও আধুনিক প্রশাসক,যিনি জেলার মানুষকে নতুন উন্নয়ন যাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন।নোয়াখালী আজ একটাই দাবি উচ্চারণ করছে-“এবার নোয়াখালী বিভাগ চাই।
এবার নোয়াখালী বদলে যাক।”নবাগত জেলা প্রশাসকের জন্য অসীম শুভকামনা।

লেখক:মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক: নবজাগরণ
অনলাইনে পড়ুন:www.thenabajagaran.com