সেনবাগে অবৈধ ইটভাটা‘মেঘনা ব্রিকস’-কে এক লক্ষ টাকা জরিমানা

পরিবেশ ধ্বংস,জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি ও আইনি লঙ্ঘনের দায়ে কঠোর অবস্থান-উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত

নবজাগরণ ডেস্ক:
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় পরিবেশ ধ্বংস, জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি, কৃষিজমি নষ্ট করা এবং পরিবেশ আইনের একাধিক ধারা লঙ্ঘনের দায়ে মেঘনা ব্রিকস নামের অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে এক লক্ষ টাকা জরিমানা, চুল্লি ভেঙে ফেলা, এবং সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেছে উপজেলা প্রশাসন।বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে এ অভিযান পরিচালনা করেন সেনবাগ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নুর পেয়ারা বেগম।

লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া বছরের পর বছর কার্যক্রম-উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়-ভাটাটির কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই,পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই,
জনবসতির খুব কাছে অননুমোদিত এলাকায় পরিচালিত হচ্ছিল,এবং কৃষিজমিতে ক্ষতি ও বাতাসে অতিরিক্ত ধোঁয়া ও কার্বনের দূষণ সৃষ্টি করছিল।বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী জনবসতি, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, কৃষিজমি ও সংরক্ষিত এলাকার আশেপাশে ইটভাটা স্থাপন একেবারেই নিষিদ্ধ। কিন্তু “মেঘনা ব্রিকস” এসব আইনি বাধা অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।সেনবাগ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আরো এমন অনেক ব্রিকস গড়ে উঠেছে এবং দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ আইন অমান্য করে কতিপয় ব্যক্তিবর্গকে মাসোহারা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযানস্থলে কঠোর পদক্ষেপ-চুল্লি ভাঙা ও কার্যক্রম বন্ধ
অভিযান পরিচালনার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুর পেয়ারা বেগম ভাটার সকল তৎকালীন কার্যক্রম তাৎক্ষণিক বন্ধের নির্দেশ দেন।পাশাপাশি ভাটাটির অগ্নিকুঠুরি বা চুল্লি ভেঙে ফেলা হয়, যাতে ভবিষ্যতে অবৈধভাবে পুনরায় উৎপাদন শুরু করতে না পারে।অভিযানে উপস্থিত ছিলেন-সেনবাগ থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম,পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদল,উপজেলা প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তা ও সশস্ত্র সদস্যরা।তারা ভাটার কার্যক্রম ও পরিবেশগত প্রভাব বিষয়ে বিস্তারিত নথি সংগ্রহ করেন।

জনবসতিতে ইটভাটা: পরিবেশ ও মানুষের উপর ভয়াবহ প্রভাব বিশেষজ্ঞদের মতে,অনুমোদনবিহীন ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা পরিচালনা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে-ধোঁয়ায় সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড বাতাসে ছড়ায়,শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট বাড়ায়,কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হয়,
গাছপালা, প্রাণী ও জলাধারে বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাব পড়ে।
এছাড়া ইটভাটার জন্য কৃষিজমির মাটি কেটে নেওয়ার ফলে প্রতিবছর শত শত একর জমির উৎপাদনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়।জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় জিরো টলারেন্স
-অভিযান চলবে অভিযান শেষে নুর পেয়ারা বেগম বলেন-
“পরিবেশকে ধ্বংস করে, মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে কোনো অবৈধ ইটভাটাই চলতে দেওয়া হবে না। মেঘনা ব্রিকস-এর বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা শুধু শুরু। জনবসতি এলাকায় অবস্থিত সব অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।”

জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে সেনবাগসহ পুরো জেলায় অবৈধ ইটভাটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা-পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া চলছে,নির্ধারিত দূরত্ব না মেনে জনবসতি এলাকায় আছে,কৃষিজমিতে ক্ষতি করছে,তাদের সকলের বিরুদ্ধে একই ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।জনস্বার্থে প্রশাসনের দৃঢ় অবস্থান স্থানীয় জনসাধারণ এই অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, অবৈধ ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে এলাকার বাতাস দূষিত হয়ে পড়েছিল, রাতে উৎপাদনের সময় প্রচণ্ড ধোঁয়া ও শব্দে স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হচ্ছিল। অভিযানে ভাটা বন্ধ হওয়ায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেন।

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
মহাসচিব-
বাংলাদেশ পরিবেশ পরিক্রমা মানবাধিকার
সাংবাদিক সোসাইটি
অনলাইনে পড়ুন:www.thenabajagaran.com