নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৮ নং সাটিয়াজুরি কৃষ্ণপুর এলাকায় কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার মহোৎসব চলছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, একটি চক্র বেকু (খননযন্ত্র) দিয়ে প্রায় ৫০ একর উর্বর কৃষিজমি গভীর করে খনন করে ফেলেছে। এই মাটি বিভিন্ন ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় কৃষক ইয়াকুব আলী জানান, মাটি কাটার ফলে উঁচু জমিতে পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, নিচু জমি থেকে জল নিষ্কাশনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ফসল উৎপাদনে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক উঁচু জমিগুলোকে নিচু জমির সমান করতে চেষ্টা করছেন, যা কৃষিকাজের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি। শুধু মাটি কাটাই নয়, একই এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনেরও অভিযোগ উঠেছে। কৃষ্ণপুরের ডরের পাড়ে মিরপুর এলাকার বাসিন্দা কবির মিয়া দীর্ঘদিন ধরে চুনারুঘাট এলাকায় এসে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আশ্চর্যজনক ভাবে, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, ৮ নং সাটিয়াজুরি, ৯ নং রানী গাঁও এবং ১০ নং মিরাশি ইউনিয়নের করাঙ্গী নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। দিনের পর দিন এই অবৈধ বালু উত্তোলন চললেও প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিটি বালু উত্তোলন এবং মাটি কাটার ঘটনার সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জড়িত। তারা রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা মাটি ও বালু নিজেদের মতো করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। এই পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি কৃষি উৎপাদনও হুমকির মুখে পড়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং জলবায়ুর স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। স্থানীয় সচেতন মহল অবিলম্বে এই অবৈধ মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তারা বলেন, প্রশাসনের নীরবতা এই চক্রকে আরও উৎসাহিত করছে এবং এর ফলস্বরূপ এলাকার কৃষি ও পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এই ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে চুনারুঘাটের কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা আশা করছেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে এবং তারা দ্রুত এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
